যাদু-মন্ত্রের জোরে বিষধর সাপকে কাছে টানার চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

৫ মে, ২০২৫, ৩ ঘন্টা আগে

যাদু-মন্ত্রের জোরে বিষধর সাপকে কাছে টানার চেষ্টা

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা প্রতিযোগিতা: তান্ত্রিকদের কেরামতি আর দর্শকদের উন্মাদনা

মৃত মানুষের হাড়, কলাগাছ, মোমবাতি, বালু এবং পানির মতো নানা উপকরণ দিয়ে তান্ত্রিকরা তাদের কেরামতি শুরু করেন। চারদিক থেকে তারা (সাপ) পাতার দিকে যাদু ও মন্ত্র ছুঁড়ে দেন। নিজের মন্ত্র শক্তি দিয়ে অন্য তান্ত্রিকদের মন্ত্র ভেদ করে যদি সাপ পাতাকে নিজের কাছে এনে পরাস্ত করতে পারেন, তবে তিনি পয়েন্ট অর্জন করেন।

এই খেলায়, যে যতবার সাপ পাতাকে নিজের বৃত্তে আবদ্ধ করতে পারবে, সে তত পয়েন্ট পাবে। ঢোলের তালে আর যন্ত্রের ঝোঁকে তান্ত্রিকরা নানা অঙ্গ-ভঙ্গি ও কেরামতির মাধ্যমে দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন।

সোমবার (৫ মে) বাংলা নরবর্ষ উপলক্ষে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে ভুল্লী বাধ যুব সংঘের আয়োজনে কুমারপুর এলাকায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মাঠজুড়ে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল এবং পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ ছিল।

বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৮টি তান্ত্রিক দল তাদের তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে পাতারূপী সাপকে মাঠের মাঝখান থেকে চারদিকে টানার প্রতিযোগিতা করে। প্রতিযোগিতায় যার পয়েন্ট বেশি হয়, সেই তান্ত্রিক দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় এবং বিজয়ী দলকে পুরস্কার হিসেবে ২,৫০০ টাকা মূল্যের একটি পুরস্কার দেওয়া হয়।

খেলা দেখতে আসা শিক্ষার্থী সুরভী আক্তার বলেন, “আমি কখনও এই পাতা খেলা দেখিনি। এবারই প্রথম দেখলাম এবং অনেক ভালো লাগলো। শুধু আমি না, আমার অনেক বান্ধবীও এই খেলা দেখতে এসেছে।”

কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, “আমরা যখন যুবক ছিলাম, তখন প্রতিনিয়ত এ ধরনের খেলা হতো। কালের বিবর্তনে খেলাগুলো হারিয়ে গেছে। এগুলো আবার ফিরিয়ে আনা দরকার, কারণ মানুষকে বিনোদন দেয়। আজ অনেক দিন পর আবার পাতা খেলা দেখতে পেরে আমি খুব খুশি।”

আরেক বৃদ্ধ মুনসুর আলী বলেন, “আমরা এই খেলা অনেক আগে দেখেছি, কিন্তু মাঝে ছিল না। এখন আবার দেখলাম, ভালো লাগলো।”

খেলায় অংশগ্রহণকারী তান্ত্রিক পুরঞ্জয় জানান, "তান্ত্রিকদের মতে, প্রাচীনকাল থেকে গুণী ব্যক্তিরা এই পাতা খেলা খেলতেন। খেলার জন্য যে মন্ত্র প্রয়োজন, তা খুবই কঠিন। তবে পুরস্কারের আশা না করলেও মানুষকে বিনোদন দিতে এবং নিজে আনন্দ উপভোগ করতে খেলায় অংশগ্রহণ করেছি।" তিনি আরও বলেন, "যার মন্ত্রের শক্তি বেশি, সাপ তার কাছেই যাবে। খেলা শুরু হওয়ার ২০ মিনিট পর একটি সাপ মারা যায়। বাপ-দাদার কাছ থেকেই এই মন্ত্র পেয়েছি।"

খেলার আয়োজক কমিটির সদস্য মাইজুদ্দিন জানান, “আমরা স্থানীয়দের আনন্দ দিতে এবং যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে এই খেলার আয়োজন করেছি। হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এই খেলাটি নতুন প্রজন্মকে জানাতে চাই। আশা করি, স্থানীয়দের সহযোগিতা পেলে প্রতি বছর এ খেলার আয়োজন করা হবে।”

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news