পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সৌদি আরবে কাজের সন্ধানে গিয়ে নড়াইলের
মিরাপাড়া গ্রামের যুবক নজিবুল্লাহর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে
স্বজনদের মাঝে।
উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই
বাকরুদ্ধ।টগবগে যুবককে হারানোর শোক কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছেন না
তারা।পরিবারের সদস্যসহ গ্রামবাসীর দাবি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে
গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। নজিবুল্লাহকে ভালো বেতনে চাকুরির
প্রলোভন দিয়ে সৌদি আরবে নিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ
করাসহ তাকে হত্যার পর লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।ঘটনা উল্লেখ করে এক
নারীসহ তিনজনের নাম উল্লেখ পূর্বক নড়াইল সদর আমলী আদালতে গত ১২ জুন
অভিযোগ দায়ের করেন নজিবুল্লাহ’র পিতা কেরামত শেখ। আদালতের আদেশে গত ১৪
জুন নড়াইল সদর থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ এজাহারভূক্ত আসামি
শাহাবুদ্দিন মিনাকে গত ১৬ জুন গ্রেফতার করেছে।
নিহতের স্বজন ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে
এবং জীবনে সাফল্য লাভের আশায় নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের
মিরাপাড়া গ্রামের কেরামত শেখের ছেলে নজিবুল্লাহ (২২) চলতি বছরের ১৭মার্চ
সৌদি আরবে যান। ভালো বেতনে কাজের সন্ধানে গিয়ে আড়াই মাসের মাথায় লাশ হন
তিনি। নজিবুল্লাহকে বিদেশ পাঠাতে তিন দফায় দালাল চক্রের হাতে সাড়ে ৭লাখ
টাকা দিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন পিতা কেরামত শেখ।
জানা গেছে,নড়াইল সদর উপজেলার মিরাপাড়া গ্রামের জলিল মিনার ছেলে
শাহাবুদ্দিন মিনা বাদী কেরামত শেখের স্ত্রীর ফুফাতো ভাই হওয়ার সুবাদে
তিনি ছেলে নজিবুল্লাহকে ৬লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠানোর মৌখিক
চুক্তি করেন। শাহাবুদ্দিন মিনার ভগ্নিপতি নড়াইল সদর উপজেলার চাঁচড়া
গ্রামের সাইফুল আব্দার সৌদি আরবে কর্মরত।কেরামত শেখ ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর
লক্ষ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সাইফুল আব্দারের স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও সাইফুলের
শ্যালক (রাবেয়ার চাচাতো ভাই) আমিনুর মিনার কাছে প্রথম দফায় ৩লাখ টাকা
প্রদান করেন।গত ১মার্চ আরো রাবেয়া ও আমিনুরের কাছে আরো ৩লাখ টাকা প্রদান
করেন কেরামত শেখ। মোট ৬লাখ টাকা প্রদানের পর গত ১৭মার্চ নজিবুল্লাহ সৌদি
আরবে পৌঁছান।পরবর্তীতে নজিবুল্লাহর কাগজপত্র (আকামা) ঠিক করে দেয়ার কথা
বলে এবং সৌদি পুলিশের ভয় দেখিয়ে কেরামত শেখের কাছে আরো দেড়লাখ টাকা দাবি
করেন শাহাবুদ্দিন মিনা।গরু বিক্রি করে ও ধার-দেনা করে দাবিকৃত দেড়লাখ
টাকা প্রদান করেন কেরামত শেখ।গত ৪জুন বাদী কেরামত শেখ সৌদি আরবে
অবস্থানরত অন্যলোকের মাধ্যমে জানতে পারেন তার পুত্র নজিবুল্লাহকে আটক
রেখে এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা মুক্তিপণ আদায় করেছে এবং ছেলের মৃতদেহ
সৌদি আরবের হাসপাতাল মর্গে পড়ে আছে। এদিকে ছেলেকে শেষবারের মতো দেখার
জন্য প্রহর গুনছেন নজিবুল্লাহর বাবা-মা।আদৌ ছেলের লাশ দেশে আনতে পারবেন
কিনা সে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন তারা।নজিবুল্লাহকে বিদেশে নিয়ে তার সঙ্গে
প্রতারণা ও শেষমেষ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত
গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবির জানান,
মামলার এজাহারভূক্ত এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।বাকি আসামিদের
গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
পত্রিকা একাত্তর /হাফিজুল নিলু