হাট ঝাড়ু আর ভিক্ষার টাকায় চলে সংসার

নিজস্ব প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

১৯ জুন, ২০২২, ১ year আগে

হাট ঝাড়ু আর ভিক্ষার টাকায় চলে সংসার

তিনিএলাকা জুড়ে লবা পাগল নামে পরিচিত। জীবনের শুরুতে অন্যের বাড়িতে পারিশ্রমিক ছাড়াই শুধু মাত্র খাওয়ার বিনিময়ে কাজ করতেন। লবা আলী রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের নৌওটিকা উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

বিবাহিত জীবনে তার একটি মাত্র মেয়ে লতিফা খাতুন । অন্যের প্রলোভনে সেই মেয়ে কে বিয়ে দেয় পাশের গ্রামের হালিম নামের এক বখাটেরসাথে। বিয়ের পর লতিফার জমজ দুইটি বাচ্চা নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকতে হয়। কারন চালচুলোহীন হালিম লতিফা কে বিয়ে করার আগে আরও কয়েকজন কে বিয়ে করে।

এ বিষয়ে লবার একমাত্র মেয়ে লতিফা বলেন,আমার আগে হালিম আরও ৯ জনকে বিয়ে করছে এ বিষয়েপাশের গ্রামের ঘটক গোপন রেখেছিল। আমার স্বামী সহ জমজ রাখি বন্ধন কে নিয়ে বাবার এই ছোট্ট কুড়ে ঘরে থাকতে হয়। আমার অকর্মন্য স্বামী কোন কাজ করে না নিকটবর্তী পীরগাছা বাজারে জুয়া খেলে। নিষেধ করলে আমাকে মারধর করে। প্রায়ই টাকা চায় বাবার কাছে দিতে না পারলে আমার সহজ সরলবাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ মারধর করে।

৬ সদস্যের এই পরিবারের একমাত্র উপার্জন কারী ব্যাক্তি হলো লবা পাগল। অত্র এলাকার সবাই জানে লবার সম্পর্কে। তিনি বাজার ঝাড়ু দিয়ে ও বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে যা পায় তা দিয়ে কোন মতে টানাপোড়েন চলে তার সংসার।

লবার স্ত্রী জানান, আমরা খুবই কষ্টে আছি তিন বেলা ঠিকমতো খাবার জোটেনা। আমাদের তেমন কোন সরকারি সুবিধাও দেয় না মেম্বার চেয়ারম্যান। পৈতৃক সুত্রে বাবার জমির অংশ পেয়েছিলাম ১৫ কাঠা। আমার নিজের ছোট ভাই জামাল আমাকে ফাঁকি দিয়ে রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছে। এখন আমরা অন্যের জমিতে থাকি। এ ছাড়াও জামাল ইউনিয়ন পরিষদের কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে বারে বারে অনেকগুলো টাকাও নিয়েছে কিন্তু তা আর ফেরত দেয় নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এ-ই জামাল শুধু তার নিজের বোনের সাথেই প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ করেনি। চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গীয়ে জামাল একই এলাকার নজরুল ইসলাম কে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়ার নামে ৪ হাজার টাকা নিয়েছে। গর্ভবতী ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে পলাশের কাছে নিয়েছে ৭ হাজার টাকা। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এই জামাল তার নিজ বাড়ির পূর্বের এক বাড়ি থেকে গর্ভবতী কার্ড দেবো বলে ৬ হাজার টাকা নেয়, রহিম নামের একটা ব্যাক্তির কাছে জামাল জমি বিক্রির নামে টাকা আত্মসাৎ করে।

এ সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জামাল প্রতিবন্ধী কার্ডের জন্য নজরুলের কাছ থেকে নেওয়া টাকার কথা স্বীকার করে। কিন্তুু অন্যান্য সকলের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেন।

লবা বলেন,আমি হাট ঝাড়ু দিলে দোকান দারেরা ২ টাকা ৫ টাকা করে দেয়। আর কিছু কিছু মানুষের বাড়িতে হাত পাতি যে যা দেয় তাই নিয়েই চলি। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা এক বার পেয়েছি পরে বন্ধ হওয়ায় তাও আর পায়না। এই বর্ষাকালে জরাজীর্ণ ঘরে থাকি। বৃষ্টির পানি ঘরে পড়ে। শুনেছি সরকার নাকি মানুষকে ঘর করে দিচ্ছে?

ভিজিডি,ভিজিএফ,ওএমএস,বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতী ভাতা সহ যাবতীয় সরকারি সেবার মধ্যে কি কোন প্রকার সুবিধা লবার পরিবার কে দেওয়া হয় কি? জানতে চাইলে বাজু বাঘা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল লতিফ বলেন,

গত বছর শুধুমাত্র লবার নামে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাজুবাঘা ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. ফিরোজ আহম্মেদ রন্জু বলেন, বাংলাদেশ সরকার অসহায় মানুষের জন্য বয়ষ্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যাবস্থা করেছে। এটা নিয়ে যদি কোন ব্যাক্তি অসদুপায় অবলম্ব করে আমি মনে করি এ-র শাস্তি হওয়া উচিৎ। তার জন্য আমি সর্বাত্মক সহযোগীতা করবো।

পত্রিকা একাত্তর /রবিউল ইসলাম

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news