টিপু হত্যা : বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চুক্তিতে কিলিং মিশনে নামে মাসুম

সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি

২৭ মার্চ, ২০২২, ২ years আগে

টিপু হত্যা : বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চুক্তিতে কিলিং মিশনে নামে মাসুম

রাজধানীর শাজাহানপুরে এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার কন্টাক্ট কিলিংয়ের কাজটি পাঁচ দিন আগে পায় মাসুম মোহাম্মদ আকাশ। তিন দিন আগে নাম পায় কাকে খুন করতে হবে। শুধু তাই নয়, ঘটনার আগের দিন টিপুকে কমলাপুরে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সে। আর এ হত্যাকাণ্ডের জন্য টাকা নয়, আগের কয়েকটি মামলা তুলে নেওয়াসহ বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চুক্তিতে কিলিং মিশনে নামে মাসুম।

আজ রবিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, জাহিদুল ইসলাম টিপু ও সামিয়া আফরান প্রীতিকে গুলি করে হত্যাকারী শুটারের নাম মাসুম মোহাম্মদ আকাশ (৩৪)। সে চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কাইশকানি এলাকার মোবারক হোসেনের ছেলে। রাজধানীর পশ্চিম মাদারটেকের ৬০/১৫ বাসায় পরিবার নিয়ে থাকে সে। তার নামে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ চারটি মামলা রয়েছে।

বগুড়া জেলা পুলিশের সহযোগিতায় ডিএমপি’র গোয়েন্দা শাখার মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বগুড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

হাফিজ আক্তার বলেন, গত ২৪ মার্চ রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে মতিঝিল এজিবি কলোনি থেকে বাসায় যাওয়ার পথে শাহজাহানপুর থানার আমতলা এলাকায় অজ্ঞাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার উদ্দেশে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে জাহিদুল ইসলাম টিপু ও তার ড্রাইভার এবং রিকশা আরোহী সামিয়া আফরান প্রীতি নামের এক মেয়েকে গুরুতর জখম করে। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও রিকশা আরোহী প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, অনেকদিন পর ঢাকা শহরে এ ধরনের কিলিং মিশন হয়েছে। তাই তাৎক্ষণিকভাবে রহস্য উদ্‌ঘাটনে কাজ শুরু করে পুলিশ। দুই দিন পর ‘মূল কিলার’ মাসুম মোহাম্মাদ আকাশকে গ্রেপ্তার করা হলো।

ডিবি পুলিশ বলছে, ঘটনার পরদিন রাতে তাঁকে জয়পুরহাটে রেখে আসা হয়। সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন মাসুম। কিন্তু সেটা সম্ভব না হওয়ায় সে রাতে বগুড়ায় থাকেন। পরে বগুড়া পুলিশ সুপারের সহায়তার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। মাসুম মনে করেছিলেন তিনি ধরা পড়বেন না।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, তার সহযোগীদের অর্থাৎ এ ঘটনার পেছনে যারা জড়িত, এবার তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। এছাড়া মোটরসাইকেল ও অস্ত্রও উদ্ধার করা হবে।

কারা মাসুমকে কন্ট্রাক্ট দিয়েছে— জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, যারা কন্ট্রাক্ট দিয়েছে তাদের কয়েকজনের নাম সে বলেছে। টাকা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, তার নামে মামলা তুলে নেওয়ার সুবিধার বিষয় থাকতে পারে।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, অনেকদিন পর শুটিং কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। আমরা দিনরাত পরিশ্রম করেছি। শুটিং মিশনে অনেকগুলো গুলি ছোড়া হয়। মূল কিলার গ্রেপ্তার হয়েছে। এখন তদন্তে জানা যাবে মোটিভ। আর কারা ছিল, কী কারণে খুন, পেছনে কারা জড়িত তা জানার চেষ্টা চলছে।

অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। তাহলে কীসের ভিত্তিতে বলছেন মাসুমই টিপু হত্যার শুটার— এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি, সে কিলিং মিশনে ছিল। ঘটনার পর ৫/৬ ঘণ্টার মধ্যেই নিশ্চিত হই, কিলিং মিশনে সেসহ দুজন ছিল। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।

পালানোর সময় তার কর্মকাণ্ড, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মোটরসাইকেলের ব্যবহার- এসব মিলিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেপ্তার করেছি।

গত বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে জাহিদুল মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা কাঁচাবাজার হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে জাহিদুল ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় জাহিদুলের গাড়ির পাশ দিয়ে রিকশায় যাচ্ছিলেন বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী প্রীতি। তিনিও গুলিবিদ্ধ হন। তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ গাড়িচালক মুন্না বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৮।

এজাহারে ডলি বলেন, আমার স্বামী মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। আমার বাবার মতিঝিল কাঁচাবাজার এলাকায় একটি রেস্টুরেন্ট আছে। আমার স্বামী রেস্টুরেন্ট দেখাশোনা করতেন। আমার স্বামী বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের ১০ বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন দলীয়ভাবে কোন্দল ছিল। গত ৪-৫ দিন আগে আমার স্বামীকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেয়।

এজাহারে তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনের মতো গতকাল (বৃহস্পতিবার) মাইক্রোবাস নিয়ে গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্নাসহ তিনি হোটেলের উদ্দেশে যাওয়ার জন্য রওনা হয়। মতিঝিল এজিবি কলোনির গ্র্যান্ড সুলতান নামে রেস্টুরেন্ট কাজ শেষে বাসায় আসার পথে রাত আনুমানিক সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর মানামা ভবনস্থ বাটার দোকানের সামনে অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার স্বামীকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। গুলিতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। এ সময় গুলির কারণে আমার স্বামীর গলার ডান পাশে, বুকের বাম পাশে, বুকের বাম পাশের বগলের কাছাকাছি, পেটের মধ্যে নাভির নিচে, বাম কাঁধের ওপরে, পিঠের বাম পাশের মাঝামাঝি স্থানে, পিঠের বাম পাশের কোমর বরাবর, পিঠের ডান পাশের কোমরের ওপর মারাত্মক জখম হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন। দুষ্কৃতকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করার সময় প্রীতি নামে এক পথচারীও নিহত হন।

পত্রিকা একাত্তর / মোঃ আলফাত হোসেন

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news