ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটী ইউনিয়নের ভালুকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জল হোসেন ফকিরের বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন হয়রানি (ইভটিজিং) করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার ২২ মার্চ অফিস কক্ষে এ শিক্ষকের ওপর হামলা চালিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান খান ও নিরাপত্তা কর্মী বাবলু মিয়া আহত হন। শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিদ্যালয় বুধবার ২৩ মার্চ ও বৃহস্পতিবার ২৪ মার্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে।
৮ম শ্রেণির ছাত্রী সাংবাদিকদের জানান, গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ৭ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জল হোসেন ফকির তাদেরকে গণিত প্রশ্ন পরীক্ষার আগের দিন দেন। প্রশ্ন দিয়ে, কিস (চুমা) উপহার চান এবং শরীরে চিমটি কাটেন। এ অভিযোগের সূত্র ধরে আরো ৩জন ছাত্রী জানান, আমরা বড় হয়েছি। স্যার তো এখন বেসামাল হয়ে গেছেন, প্রায়শঃ চোখ টিপেন এবং শরীরে চিমটি মারেন, নানা রকম অঙ্গভঙ্গিও করেন।
তবে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জল হোসেন ফকির বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও সাজানো। বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মামুনুর রহমান খান নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। মাসে একদিন এসেই বেতন-ভাতা নিয়ে যান। তাকে নিয়মিত অফিসে আসতে বলায় তার ইন্ধনে সাজানো ঘটনায় আমার ওপর হামলা করা হয়েছে।
এদিকে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে বুধবার ২৩ মার্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির জরুরী সভা আহবান করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান খান। সঞ্চালনা করেন প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সদস্য সচিব পবন চন্দ্র ধর। তিনি জানান, বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কোনো ছাত্রী লিখিতভাবে এখনও কোনো অভিযোগ দেয়নি। শিক্ষকের ওপর হামলার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, হামলায় জড়িত বিদ্যালয়ের ছাত্ররা শিক্ষকের নিকট মাফ চেয়েছেন। বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান খান জানান, সভায় ৪জন ছাত্রীর মধ্যে ৩জনের ছাত্রী অভিভাবক উপস্থিত থেকে ‘তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে’ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে মর্মে লিখিত দিয়েছেন। চারজন অভিযোগকারীর মধ্যে একজন আসেনি।
অপরদিকে ভালুকাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান খান জানান, শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীরা অভিযোগ দিয়েছেন। সেই অভিযোগ ধামাচাপা দিতে এখন অফিস সহকারীর দোষ-ত্রুটি তুলে ধরা হচ্ছে। ভালুকাপুর গ্রামের বাহার উদ্দিন মোড়ল বলেন, এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে এইবারসহ তিনবার নৈতিকস্থলনের অভিযোগ উঠেছে। একই গ্রামের মো. আবুল তাহের খান জানান, লাজ-শরমের মাথা খেয়েছে বিএসসি তোফাজ্জল হোসেন। ছাত্রীদের সঙ্গে ইভটিজিয়ের ঘটনা নতুন কিছুনা, এটা তার অভ্যাস। দু’এক ছাত্রী বললে তাদেরকেও অন্যরা ধমকায়, শাসায়-হুমকি দেয়। শোনলাম গতরাতেও এমনটা হয়েছে। যারা দিনে শিক্ষকের অনৈতিক কাজের কথা বলেছিলো, রাতে তাদের বাড়িঘরে গিয়ে সই-স্বাক্ষর আনছে!
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ হাতে পাইনি। গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী জানান, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পত্রিকা একাত্তর/ মো. হুমায়ুন কবির