গুরুতর অসুস্থ ভাষা সৈনিক রিজিয়া খাতুন! এখনো পাননি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

নড়াইল জেলা প্রতিনিধি

১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ২ years আগে

গুরুতর অসুস্থ ভাষা সৈনিক রিজিয়া খাতুন! এখনো পাননি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি
ভাষা সৈনিক রিজিয়া খাতুন

মাতৃভাষা বাংলার আন্দোলন প্রথম শুরু হয় ঢাকায়। বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫২ সালে সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাউদ্দিনসহ নাম না জানা অনেকে জীবন উৎসর্গ করে অমর হয়ে আছেন। ঢাকার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তৎকালীন সমগ্র পূর্ব পাকিস্থানে ভাষার আন্দোলন শুরু হয়। ভাষার আন্দোলনে ঢাকার ছাত্ররা দেশের ছাত্রসমাজকে রাজপথে নামার আহ্বান জানালে তার ঢেউ এসে পড়ে জেলা শহরগুলোতে।

এই ঢেউ তৎকালীন নড়াইল মহকুমা শহর নড়াইল জেলাকেও স্পর্শ করেছিল। আন্দোলনে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। তারা 'রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা চাই' শ্লোগানে প্রকম্পিত করেছিল এই জনপদ। বাদ যায়নি ছাত্রীরাও। তখন রাস্তায় নেমে আসা ছাত্রীদের মধ্যে একজন রিজিয়া খাতুন, তখন তিনি ছিলেন শহরের দিলরুবা গার্লস হাই স্কুলের (বর্তমান নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) ছাত্রী। তিনি ছিলেন ইতিহাসখ্যাত নড়াইলের তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম নেতা নূরজালাল মোল্যার কন্যা।

রাজনীতির আবহে বেড়ে ওঠা রিজিয়া খাতুনও নড়াইলের ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন এবং অন্যান্য ছাত্র কর্মীদের সঙ্গে মিছিল মিটিং এ নিয়মিত অংশ নিতেন। মেয়েদের মধ্যে মিছিলে নেতৃত্ব দিতেন সুফিয়া খাতুন, রিজিয়া খাতুন ও রুবি বেগম। ২১শে ফেব্রুয়ারী ঢাকায় গুলি বর্ষণের খবর সন্ধ্যায় নড়াইল পৌছালে ঐ রাতেই অন্যান্য আন্দোলনকারিদের সাথে তিনি নড়াইল পৌর পার্কের কালিদাস ট্যাঙ্কের পাড়ে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন এবং সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। যদিও ভাষা আন্দোলনে তাঁর অবদান স্থানীয়ভাবে স্বীকৃত, তবে এটি এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত হয়নি। গুরুতর অসুস্থ অশীতিপর রিজিয়া খাতুন বর্তমানে শহরের আলাদতপুর এলাকায় বসবাস করছেন। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি শয্যাশায়ী। তার মেয়ে স্বতন্ত্রা বুলবুল সন্তু ইংরেজির প্রভাষকের চাকরি ছেড়ে মায়ের সেবাযতœ করছেন। ভাষা আন্দোলনের এই বীর যোদ্ধার একমাত্র দাবি ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।

অসুস্থ রিজিয়া খাতুন বলেন, ‘শহরের মহিষখোলা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা আফসার উদ্দিনের বাড়িতে বৈঠক হত। তখন ছাত্রীদের মধ্যে আফসার উদ্দিনের মেয়ে সুফিয়া খাতুন, রুবি ও আমি অন্য ছাত্র কর্মীদের সঙ্গে মিটিংয়ে অংশ নিতাম। আমরা ছাত্রদের সংগঠিত করার জন্য কাজ করেছি। মিছিলে, মিটিংয়ে, ভাষার জন্য সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম। আমি এবং আরও ১০-১২ জন মিলে পৌরসভা পার্কের তৎকালীন কালিদাস ট্যাঙ্কের কাছে প্রথম শহীদ মিনার তৈরি করি।’ আমি কখনই কারও কাছে কিছু চাইনি। ভাষা আন্দোলনে সরকার যদি আমার অবদানের স্বীকৃতি দেন, তাহলে হয়তো আমি প্রসন্নচিত্তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারব।” এসব কথা বলতে গিয়ে তিনি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

নড়াইলের নারী নেত্রী ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দিলারা বেগম বলেন, নড়াইলের ভাষা আন্দোলনে রিজিয়া খাতুনের ভূমিকা জাতীয় স্বীকৃতির দাবী রাখে।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুন্সী হাফিজুর রহমান ভাষা আন্দোলনে নড়াইল ও রিজিয়া খাতুনের ভূমিকা উল্লেখ করে বলেন, ”১৯৫২ সালে নড়াইলে যে মিছিল হয়েছিল তাতে রিজিয়া খাতুনের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গণমাধ্যম মারফত দাবি জানান, রিজিয়া খাতুনকে যেন ভাষা সৈনিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়”। সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফ হাফিজুর রহমান খোকন বলেন, আমরা দাবি করছি সেই সময় যেসব নারী সাহসিকতার সঙ্গে ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হোক।

সেই সময় মাতৃভাষার জন্য রাজপথে নেমে আসা নারী রিজিয়া খাতুনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে এই প্রত্যাশা নড়াইলবাসীর।

পত্রিকা একাত্তর/ হাফিজুল নিলু

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news