গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ১০টি শর্ত আরোপ করেছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জবিশিস)। জবিশিসের আরোপিত শর্ত না মেনেই গুচ্ছে অবস্থান নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
গত ২০ এপ্রিল জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকে তাদের শর্তগুলো জানানো হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ১০টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এক সভায় এই শর্ত দেওয়া হয়। শর্তপূরণ সাপেক্ষে এবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।যদি মে মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট শর্তসমূহ পূরণের নিশ্চয়তা না পেলে দ্রুত আরও একটি সাধারণ সভা করার কথা জানিয়েছিলেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।
শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষাতেই অগ্রসর হয়েছে শিক্ষক সমিতির দেওয়া শর্ত কতটুকু পূরন হয়েছে তা জানতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.আবুল কালাম মোঃ লুৎফর রহমান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী ৫জুন আমদের সাধারণ সভা আছে আমাদের শর্তগুলো কতটুকু মানা হয়েছে। এ বিষয়ে সাধারণ সভায় আলোচনা করে পরবর্তী করনীয় কি হবে তা জানানো হবে।
গুচ্ছ ভর্তি নিয়ে জবিশিস বলেছিলো তাদের শর্তগুলো বাস্তবায়ন না হলে তারা গুচ্ছ ভর্তিতে যাবে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান এসব বিষয় নিয়েই ৫তারিখে সিদ্ধান্ত হবে।
শিক্ষক সমিতির শর্তসমূহ ছিলঃ
বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সংশ্লিষ্ট ডিনদেরকে নিয়ে গঠিত হবে ‘ইউনিট সমন্বয় কমিটি’ যারা ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় কার্যাদি সম্পাদন করবেন। এছাড়া সব উপাচার্য এবং ইউনিট সমন্বয় কমিটির প্রধানদের নিয়ে গঠিত হবে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি’- যারা সার্বিক বিষয় তদারকি করবেন। ২০২২ সালের ভর্তি পরীক্ষা অবশ্যই জুলাই মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে শেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যবস্থা করতে শর্ত দিয়েছিল জবিশিস।
ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে যাতে যে কেউ ফলাফল দেখতে পারে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত স্কোর ও মেধাস্থান অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভর্তিচ্ছু বিভাগ নির্বাচন করবে এবং ভর্তির পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে। সকল আবেদনকারীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করতে হবে।
পরীক্ষার কেন্দ্র নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের শুধু একটি পছন্দ থাকবে এবং সেই কেন্দ্রেই পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষার আবেদন ফি ব্যতীত শিক্ষার্থীরা ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট বিভাগে ভর্তির জন্য শুধুমাত্র একবার অর্থ প্রদান করবে। মাইগ্রেশন, ভর্তি বাতিল বা অন্য যেকোন কারণে সার্ভিস চার্জ বাবদ সর্বোচ্চ একশত টাকার বেশি কোন বিশ্ববিদ্যালয় আদায় করতে পারবে না।
ভর্তি বাতিল করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ১০০ টাকা কর্তন করে জমাকৃত সমুদয় অর্থ ফেরত বা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণের পন্থা উদ্ভাবন করতে হবে। আবেদন ফি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এই অর্থ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিলে কোন অর্থ প্রদান করা যাবে না।
নীতিমালা অনুযায়ী অর্থ ব্যয়ে ঘাটতি দেখা দিলে ইউজিসিকে সে পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন কোটায় আবেদনপত্র জমাসহ ভর্তি প্রক্রিয়ার যাবতীয় কার্যাদি সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ডিন এবং চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করতে হবে।
এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন কাজে সব শিক্ষকের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আগামী বছরে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আগামী বছর গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব ব্যবস্থায় অর্থাৎ এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে।
এর আগে, গত ১৮ এপ্রিল জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় উপস্থিত সব সদস্যই গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে জবির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মতামত তুলে ধরেন। তবে শর্তপূরণ সাপেক্ষে এবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পক্ষে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। বলা হয়েছিল যদি পরীক্ষার আগে মে মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট শর্তসমূহ পূরণের নিশ্চয়তা না পাওয়া যায়। তবে অতি দ্রুত আরও একটি সাধারণ সভা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বলে জানানো হয়েছিল।
পত্রিকা একাত্তর /অশ্রু মল্লিক