সান্ডা থেকে গাধা : মানুষের তামাশায় প্রাণীরাও আজ নিরাপদ নয়!

নিজস্ব প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

২৪ মে, ২০২৫, ১ week আগে

সান্ডা থেকে গাধা : মানুষের তামাশায় প্রাণীরাও আজ নিরাপদ নয়!

মানুষের হাস্যরস ও কৌতুকের জগতে প্রাণীরাও অনেক সময় পরিণত হয় বিদ্রূপের পাত্রে। এর এক বেদনাদায়ক উদাহরণ হলো সিলেট থেকে ভাইরাল হওয়া ‘সান্ডা’ নামক এক নিরীহ প্রাণীর ভিডিও। ভিডিওতে সান্ডাকে কোলে নিয়ে থাকা এক ব্যক্তির দৃশ্য দেখে শুরু হয় ট্রোল ও কুরুচিপূর্ণ রসিকতার ধারা। এই প্রাণীর ভিন্ন গঠন ও স্বভাবকে নিয়েই মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে বিকৃত মিম ও যৌন রসিকতা।

তবে শুধু সান্ডাই নয়, মানুষের বিদ্রূপের শিকার হয়েছে আরও অনেক প্রাণী। যেমন—

  • ল্যামা: লাতিন আমেরিকার প্রাণী, মেমে সংস্কৃতিতে ‘স্টুপিড বাট কিউট’ নামে পরিচিত। হাঁটার ধরন আর মুখভঙ্গির জন্য বিদ্রূপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। থুতু ফেলার প্রবণতা তাকে ‘রুড অ্যানিমেল’ হিসেবে পরিচিত করেছে।
  • শ্লথ: অত্যন্ত ধীর গতির জন্য ‘লেইজি লাইফ গোলস’ বা ‘মানডে মুড’ নামে মিমের বিষয়। অথচ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এই ধীরতা অপরিহার্য।
  • গাধা: ইতিহাসে মূর্খতার প্রতীক হলেও বাস্তবে গাধা পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল প্রাণী।
  • উট: মুখভঙ্গির কারণে ‘গ্রাম্পি ওল্ড ম্যান’ নামে উপহাস হলেও মরুভূমির চরম প্রতিকূলতায় বেঁচে থাকার প্রতীক।
  • কুকুর ও বিড়াল: মানুষের বিশ্বস্ত সঙ্গী হলেও সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরসের পাত্র, যেখানে স্বাভাবিক আচরণ বিকৃত কনটেন্টে রূপান্তরিত হয়।

সান্ডা বা প্যাঙ্গোলিন হচ্ছে এক প্রকার নিশাচর স্তন্যপায়ী, যার শরীর ঢেকে থাকে শক্ত আঁশে, যা মানুষের নখ বা চুলের মতো কেরাটিন দিয়ে তৈরি। ভয় পেলে নিজেকে বলের মতো গুটিয়ে নেয়। কিন্তু এই স্বাভাবিক আত্মরক্ষামূলক আচরণই ট্রলের খোরাক হয়ে দাঁড়ায়।

প্রাণীর প্রতি এমন অবজ্ঞা শুধু প্রাণীর অপমান নয়, বরং আমাদের মানবিক সংবেদনশীলতারও পরাজয়। নিরীহ প্রাণীকে কৌতুকের বিষয় বানানো আমাদের বিকৃত রসবোধের পরিচায়ক।

২০২৫ সালের মে মাসে সিলেটে ভাইরাল সান্ডার ভিডিও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ট্রল ও বিকৃত ক্যাপশন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ছড়ায়। যেখানে কোনো যৌন প্রতীক না থাকলেও কল্পনার যৌন রসিকতা তৈরি করা হয়। এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বিকৃত মানসিকতা এবং ইন্টারনেটকে ‘নির্দ্বিধা আনন্দের মাঠ’ হিসেবে ধারণা করা। এতে সহানুভূতি ও সামাজিক নৈতিকতার অভাব প্রতিফলিত হয়।

প্রাণীর অস্বাভাবিক গঠন বা স্বভাবকে কেবল হাস্যরসের পাত্র বানানো কতটুকু গ্রহণযোগ্য? আমরা কি এতটাই মানবতা ও সভ্যতা হারিয়েছি?

সান্ডা আজ শুধু একটি প্রাণীর নাম নয়, আমাদের সমাজের বিকৃত রসবোধের এক আয়না, যেখানে অতিরঞ্জিত যৌন সংকেত ও সামাজিক অবক্ষয়ের ছাপ স্পষ্ট।

প্রাণীদের নিয়ে কৌতুক থামানো সম্ভব না হলেও রুচি, মাত্রা ও উদ্দেশ্য বিবেচনা করা জরুরি। কারণ আমরা কাকে হাস্যকর বানাচ্ছি, কেন তা করছি—সেই প্রশ্নে লুকিয়ে আছে আমাদের মানবিকতা।

সান্ডা থেকে গাধা—সব প্রাণীই এই পৃথিবীর বাসিন্দা, আর তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। না হলে, প্রাণীদের নিয়ে কুরুচিকর কৌতুক সমাজকে ছোট করে ফেলবে।

প্রশ্ন থেকেই যায়—আমরা কি এখনো সভ্য সমাজে বাস করছি, নাকি তামাশার এক নির্মম যুগে?

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news