মুজিবের হাতে বিলুপ্ত, ধ্বংস হাসিনায় হাতে

নিজস্ব প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

১৩ মে, ২০২৫, ৬ ঘন্টা আগে

মুজিবের হাতে বিলুপ্ত, ধ্বংস হাসিনায় হাতে

শেখ মুজিব ও তার কন্যা শেখ হাসিনা দুজনের হাতেই পতন ঘটেছে আওয়ামী লীগের। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে শেখ মুজিব নিজেই আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন, আর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।

এর পর ভারতে বসে শেখ হাসিনা অনলাইনে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন, এবং দেশেই তার দলীয় নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছেন। এছাড়া চলমান বিচারকার্যে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টার কারণে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত সোমবার আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

শেখ হাসিনার প্রণীত সন্ত্রাস দমন আইনের অধীনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়াও দলটির সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। এ সময় দলটির পক্ষে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যাবে না।

মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর হাত ধরে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নাম ধারণ করে দলটি, যার সভাপতি হন মওলানা ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। সেই সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন এবং 'বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ' (বাকশাল) গঠন করেন।

১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাকশালের কার্যক্রমসহ সব রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়, তবে ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মো. সায়েম রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। এরপর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি হন এবং ৪৪ বছর ধরে নেতৃত্ব প্রদান করেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর (১৯৯৬-২০০১) ক্ষমতায় আসে এবং ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে। তার নেতৃত্বে দলটি নানা দুর্নীতি, হত্যাকাণ্ড এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।

বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে বসে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং দলটির নেতাকর্মীরা দেশে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছেন। এ সময়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা বিচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা ও তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহাবুব উল্লাহ এই বিষয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে, তাতে দলের ভবিষ্যত প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দলের পেছনে ভারতের সহযোগিতা রয়েছে এবং তা মোকাবিলা করতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news