ফরিদপুরে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের হওয়া মামলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের ২১ নেতাকর্মীর জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১২ মে) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ আদেশ দেন। জামিন পেয়েছেন মাত্র একজন, যিনি শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ বলে জানানো হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার মোট ২২ আসামি আগে হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জন্য অন্তর্বর্তী জামিনে ছিলেন। সেই জামিনের মেয়াদ শেষে সোমবার তারা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে নতুন করে জামিনের আবেদন করেন। তবে শুনানি শেষে ২১ জনের আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালত চত্বরে এদিন সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল। আসামিরা শুনানির পর যখন আদালতের নির্দেশে পুলিশের পাহারায় কারাগারের দিকে রওনা হন, তখন তাদের স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়।
জেলহাজতে যাওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন—আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক শেখ দেলোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইকবাল হোসেন, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর ইসলাম শেখ, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসমত হোসেন তালুকদার, যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল শেখ, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মতিয়ার রহমান এবং গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান।
তাদের সঙ্গে আরও কারাগারে গেছেন—আবুল বাসার শেখ, বাদশা সিকদার, আসলাম মোল্লা, তাবিবুর রহমান, সেলিম শেখ, আব্দুল কুদ্দুস, আজিজুর রহমান তালুকদার, সুলতান মাহমুদ, আজিজ খন্দকার, শহিদুল ইসলাম, আইয়ুব আলী, আবুল হোসেন, হাসান মিয়া এবং বিএনএম নেতা সৈয়দ আশরাফ আলী ওরফে নায়ক বাশার।
শুধুমাত্র নবাব আলী (৬৫) নামের এক আসামিকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জামিন দেওয়া হয়।
বিস্ফোরক মামলার পটভূমি অনুযায়ী, গত ১৮ জানুয়ারি আলফাডাঙ্গা থানায় মামলাটি দায়ের করেন বিএনপি-সমর্থক দিনমজুর লাভলু সরদার। এজাহারে মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ আওয়ামী লীগের ১৭০ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও প্রায় তিন হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়—তারা নাশকতা ও সহিংস কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মামলাটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করা হয়েছে। দলের স্থানীয় নেতাদের মতে, নির্বাচনী বছর সামনে রেখে একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে আওয়ামী লীগপন্থি নেতাকর্মীদের দমন করতে চাইছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "বিএনপি-জামায়াতের মদদপুষ্ট একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে এই মামলা দিয়ে মাঠের নেতাদের থামিয়ে দিতে চাচ্ছে। অথচ নিজেরাই অতীতে সহিংস রাজনীতির ধারক।"