আক্তারুল ইসলাম,বটিয়াঘাটা - বটিয়াঘাটা উপজেলার রায়পুর কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন দীর্ঘদিন যাবত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসি। রাস্তার পাশেই একটি টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে যাচ্ছে দায়িত্বরত স্বাস্থ্যকর্মীরা। অন্যদিকে কমিউনিটি ক্লিনিকের ম্যানেজিং কমিটি বিরুদ্ধে উঠে এসেছে নানাবিধ অভিযোগ। দীর্ঘ ৫/৭ বছর কমিটির কোন কর্মকান্ড নেই। নামেমাত্র কমিটি থাকলেও নেই তার কোনো কার্যকারিতা। যে কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই কমিউনিটি ক্লিনিকের আওতাধীন ১০/১২ টি গ্রামের জনসাধারণ। দীর্ঘ চার বছর ধরে এই কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। জানালা দরজা এমনকি ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে অবস্থিত রায়পুর কমিউনিটি ক্লিনিক। ১৯৯৯ সালে এই কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপিত হয়। তৎকালীন সময় রায়পুর এলাকার বিশিষ্ট দানবীর মৃত সুরেন্দ্র মন্ডল,তার নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য চার শতক জমি দান করেন।
কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার ( সিবিএইচসি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর বাস্তবায়নে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনটি নির্মাণ করা হয়।
স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য একজন ডাক্তার ও দুইজন সরকারি লোক সার্বক্ষণিক দেখাশোনা জন্য রয়েছে। অথচ তিনজনের দুই জনই নিয়মিত কমিউনিটি ক্লিনিকে আসে না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এই ক্লিনিকে যে তিনজন স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছেন তারা হলেন, স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনার সিএইচসিপি কর্মকর্তা ডাঃ সুব্রত কুমার সরকার।
পরিবার কল্যাণ সহকারী মোছাঃ জুবাইয়রা খাতুন। স্বাস্থ্য সহকর্মী ধ্রুব মন্ডল। এদের মধ্যে ধ্রুব মন্ডল ও জুবাইরা খাতুন নিয়মিত ক্লিনিকে আসে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই ক্লিনিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয় যেমন,জ্বর সর্দি-কাশি,আমাশয়,এলার্জি, গ্যাস,ক্যালসিয়াম,আয়রন সহ নানাবিধ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
এই কমিউনিটি ক্লিনিকের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দিপালী মন্ডল বলেন,ভবনটি নষ্ট হওয়ায় স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগীদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে চাহিদা অনুযায়ী ঔষধ সরবরাহ না থাকায় সঠিক সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এলাকার জেডএম সাব্বির আকবর বলেন, ক্লিনিকের ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারছে না স্বাস্থ্যকর্মীরা। রাস্তার উপর একটি ঘরে বসে কি স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সম্ভব!
স্বাস্থ্য ক্লিনিকের ডাক্তার সুব্রত কুমার বলেন,আমাদের এখানে ক্লিনিকের ভবনের অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় পাশেই রাস্তার উপর একটি টিনশেট ঘর ভাড়া নিয়েছি। সেখানে জনগনকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হচ্ছে । ক্লিনিকের নিজস্ব ভবন চরম ঝুঁকিপূর্ণ এবং সেখান বসবাসের উপযুক্ত না হওয়ায় সঠিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের।
পরিবার কল্যাণ সহকারি জুবায়রা খাতুন বলেন,আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়।
সপ্তাহে আমার তিন দিন ডিউটির থাকে। মঙ্গলবার বুধবার ও বৃহস্পতিবার। এছাড়া দুইদিন টিকাদান কর্মসূচি সহ অন্যান্য কাজে কাজে আমি বাইরে থাকি। তিনি আরো বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায়,সেখানে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে আমরা পাশে একটি টিনশেড ঘর পাচশত টাকা মাসে ভাড়া নিয়ে সেখানে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে চলেছি। পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকের থেকেও আমাদের রায়পুর ক্লিনিকের রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু দুঃখজনক হলো এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষধ সরবরাহ নাই। যে কারনে স্বাস্থ্যসেবা দিতে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের।
অন্যদিকে ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী ধ্রুব মন্ডলের সাথে বারবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে, সে তার মোবাইল নম্বরটি কেটে দেয়। যে কারনে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও রায়পুর কমিউনিটি ক্লিনিক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সরদার নাজমুল সাকিব সিদ্দিকী বলেন,কমিটির সদস্য মোট কতজন তা বলতে পারব না। তবে সদস্য ১১ জন রয়েছেন বলে তিনি জানান। অন্যদিকে তিনি বলেন, ক্লিনিকের ভবনটি অচল হয়ে পড়ে আছে। এখানে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব নয়। প্রতিদিন ২/৩ শত লোকজন এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসে। কিন্তু ক্লিনিকের অবস্থা এত খারাপ যে, সেখানে বসে স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারেনা। যে কারণে জরুরি ভিত্তিতে আমাদের ক্লিনিকটি সংস্কার হওয়া দরকার। তাই তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ক্লিনিকটি সংস্কারের জন্য। একই সাথে তিনি জোর দাবি জানান, সরকারের কাছে ক্লিনিক পুনরায় সংস্কারের জন্য।
বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ মিজানুর রহমান এর নিকট জানতে চাইলে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পর্কে বলেন, ইতোমধ্যে সমস্যা ভিত্তিক ক্লিনিকের তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। অতিদ্রুত সেগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। কমিউনিটি ক্লিনিকের যদি কোন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়মিত না আসেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি দাবি করেন। বটিয়াঘাটা উপজেলায় মোট কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা রয়েছে বিশটি। এদের মধ্যে নয়টি পুনঃ নির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর খুলনা বরাবর পাঠানো হয়েছে। ক্লিনিকগুলো হচ্ছে সুরখালী, জলমা,ভান্ডারকোট, বালিয়াডাঙ্গা,গঙ্গারামপুর,আমিরপুর, রায়পুর, পুটিমারী,ছয়ঘরিয়া,ঘোলা,শিয়ালীডাঙ্গা,
ধাদুয়া,কায়েমখোলা,বুজবুনিয়া, নারায়ণপুর,সহ আরো বেশকিছু ক্লিনিকের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া উপজেলায় নতুন করে দুটি ক্লিনিক হতে যাচ্ছে। ভান্ডারকোট ইউনিয়নের নোয়াইলতলা ও বড়হাজিরাবাদ এলাকায় মোস্তফা আকুঞ্জি কমিউনিটি ক্লিনিক।