পাড়ার ক্রিকেটে নেই আর আগের মতো অবস্থা। একটা সময় দেখা যেতো গ্রাম-গঞ্জে, অলিতে-গলিতে ছেলে-পেলেরা বাট বল নিয়ে সারাদিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ক্রিকেট খেলায় মগ্ন থাকতো। গ্রামে টেপ টেনিস বলের ক্রিকেট নিয়ে আর কি বলবো।
একটা সময়ে দেখা যেতো, একটা বল কেনার মতো টাকা নেই বা একটা ব্যাট কেনার মতো টাকা নেই ছেলেপেলেদের কাছে। তবুও নিজেদের মধ্যে চাঁদা ধারণ করে সেটা সংগ্রহ করে বল কিনতো।
ব্যাটের তো তখন অনেক দাম ছিলো, তাই একটি নতুন ব্যাট কেনার সাধ্য হতো না কারো। পরিত্যক্ত কাঠ দিয়েই বানিয়ে ফেলতে ব্যাট। আহা! সেই ব্যাট নিয়ে কি উত্তেজনা। কোথায় গেলো সেই ক্রিকেট? এখন আর হাজারো খুঁজলেও সেই চিরচেনা ক্রিকেট আর চোখে পড়ে না কোথাও।
ছোটবেলায় ধানের জমিতে ধান কাটতে না কাটতেই পাড়ার ছেলেরা মিলিত হয়ে বানিয়ে ফেলতো বাইশ গজের পিচ। স্টাম্প কেনার সাধ্য ছিলোনা বলে গাছের ঢাল কেটে বানিয়ে ফেলতো স্টাম্প। মানতো না কোনো ঝড়-বৃষ্টি। গুরুজনেরা তেমন উৎসাহ দিতো না, তবুও একটুও কমতো না খেলার উত্তেজনা। কোথায় গেলে সেই পাড়ার ক্রিকেট?
পরিসংখ্যান বলে, এই খেলার মতো মনোভাব ধ্বংসের পিছনে দায়ী আধুনিক প্রযুক্তিই অর্থাৎ স্মার্টফোন আর ভিডিও গেম। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে আসে স্মার্টফোনের ছোঁয়া। ছেলেমেয়েদের হাতে আসে এক নতুন জগৎ। ধীরে ধীরে আসতে থাকে পাবজি, ফ্রী-ফায়ারের মতো ভিডিও গেম।
আর এসব গেমে আসক্তির মাত্রা সম্পর্কে বর্তমান সময়ে আমরা সবাই অবগত। এখন আর ১১ জন ছেলেকে একসাথে দেখা যায় না, দেখা যায় বল, ব্যাট কেনার জন্য চাঁদা সংগ্রহ করতে। কারণ,সবাই ভার্চুয়াল জগতের নতুন ছোঁয়ায় আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। আর এভাবেই হয়তো ফুটবলের মতো ক্রিকেটেরও নাশ হয়ে যাবে বাংলাদেশ থেকে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবস্থা হয়তো সেটাই জানান দেয়। সম্পদের দিক থেকে চোখ রাখলে দেখা যায়, বাংলাদেশ বিশ্বের ৫ম সর্বোচ্চ ধনী ক্রিকেট বোর্ড। অথচ, এদেশে এখনও তৈরী হয়নি জেলাভিত্তিক ক্রিকেট একাডেমি।
বোর্ডকে কখনো প্রতিভার সন্ধানে কোনো প্রকার কার্যক্রম করতে দেখা যায় না। একটা সময় এসব পাড়ার ছেলেপেলে গুলোও হয়তো স্বপ্ন দেখতো জাতীয় দলে খেলবে। হয়তো স্বপ্নগুলো টাকার অভাবে হারিয়ে গেছে তাদের। আর সেই ভাঙা স্বপ্নের কারনেই হয়তো পাড়ার ক্রিকেটের এই শূন্য পরিস্থিতি।
পত্রিকাএকাত্তর /মাহমুদ রাফি