চাঁদাবাজির উৎসস্থলে চসিকের উচ্ছেদ অভিযান

চট্টগ্রাম মহানগর প্রতিনিধি

৮ আগস্ট, ২০২২, ১ year আগে

চাঁদাবাজির উৎসস্থলে চসিকের উচ্ছেদ অভিযান

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বলেছিলেন, নগরীর ফুটপাত তিনি যেকোনো মূল্যে মুক্ত ও জনগণের চলাচলের উপযুক্ত করবেন।

তারই ধারাবাহিকতায় নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বাকলিয়া, চকবাজার এলাকার ত্রাস, প্রশাসনের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার ও আশপাশের এলাকার ফল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী মোঃ সোহেল ওরফে ফ্রুট সোহেলের চাঁদাবাজির উৎস ফুটপাতের উপর অবৈধ ফলের দোকানে বুলডোজার চালিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

৭ আগষ্ট (রবিবার) বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী'র নির্দেশনায় এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেতৃত্বে নানান অভিযোগের ভিত্তিতে ফুটপাতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ফ্রুট সোহেলের নিয়ন্ত্রণে চলা ফলের দোকানে উচ্ছেদ অভিযান চালায়।

তথ্যমতে, সন্ত্রাসী ফ্রুট সোহেলের পরিচালিত "বহদ্দারহাট একতা ক্ষুদ্র ফল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি" নামক একটি সমিতির নামে চলতো চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী। বহদ্দারহাট এলাকায় ফল ব্যবসা করতে হতে হবে এই সমিতির সদস্য।

নাহলে এলাকায় ফল ব্যবসা করা যায় না ফ্রুট সোহেলের সন্ত্রাসী বাহিনীর তান্ডবে। এছাড়াও যারা ফুটপাত ও ভেনগাড়িতে ফলের ব্যবসা করে তাদের থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে দৈনিক চাঁদা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এর বিরুদ্ধে।

তবে, প্রকাশ্যে এর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে রাজি নয় কেউ। তার কারন হিসেবে কয়েকজন তাদের নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ফ্রুট সোহেলের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারে কোপায় অর্থাৎ প্রকাশ্যে হত্যার চেষ্টা করে। এছাড়াও কিশোরগ্যাং ধারা নির্যাতন করে। পুলিশের কাছে কেন অভিযোগ দেন না আপনারা প্রশ্ন করলে তারা বলেন, ওর অফিসে ওর সাথে বসে পুলিশরা চা খায়। কার কাছে অভিযোগ দিবো এমন হলে?

জানাযায়, চট্টগ্রাম জেলার খিরমোরখালী গ্রামের বারাইয়ারহাট জোরারগঞ্জ থানাধীন মৃত তফাজ্জল হোসেনের সন্তান এই মোঃ সোহেল। তরুণ বয়স থেকে তার এলাকায় চুরি ছিনতাই সহ নানান অপ কর্মকান্ডের ঝুলি নিয়ে যোগদেন মুরাদপুরে অবস্থিত তার পিতার চায়ের দোকানের কর্মী হিসেবে।

সেখান থেকে পকেটে মাত্র ১৬০ টাকা নিয়ে চলে আসেন নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায়, শুরুতেই ভেনগাড়িতে ফলের ব্যবসা শুধু করেন জমা পূঁজি দিয়ে। এর সাথে সাথে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সাথে মিলে জড়ান নানান অপকর্মে।

তখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের মিছিল মিটিংয়ে কর্মী পাঠানোর মাধ্যমেই তার অপরাধ জগতের মধ্যে পুরোপরি সংশ্লিষ্টতা শুরু হয়। সোহেল নামের মধ্যে নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত হতে তার নামের আগে "ফ্রুট" যোগ হয়ে হয় "ফ্রুট সোহেল"। এই নামেই তার এখন বড় পরিচয় অপরাধ জগতে।

নগরীর চান্দগাঁও এলাকার চিহ্নিত কিশোর গ্যাং লিডার হয়ে উঠেছে মোঃ সোহেল ওরফে ফ্রুট সোহেল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। নানান অপকর্মে জড়িত কিশোর গ্যাং লিডারদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও একাধিক মামলার আসামী ফ্রুট সোহেলকে যেন দেখা যায় কিন্তু ধরা যায় না। ফলে তার আতঙ্ক এখনো বিরাজ করছে এলাকাজুড়ে।

চসিকের তথ্যসূত্রে জানা যায়, নগরের বিভিন্ন সড়কে পরিচালিত অভিযানে ২ শতাধিক দোকানপাট উচ্ছেদ ও ১১ ব্যক্তিকে ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। চলমান অভিযানে নগরের জিইসি মোড়, জিইসি থেকে গোলপাহাড় মোড়, এশিয়ান হাইওয়ে শুলকবহর হয়ে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার, বহদ্দারহাট মোড় ও শাহ আমানত সেতু সড়কের নতুন চান্দগাঁও থানা পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাতের উভয় পার্শ্বের বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনাসহ দুই শতাধিক দোকানপাট উচ্ছেদ করে রাস্তা ও ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়।

এই সময় রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল রেখে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির দায়ে ৪ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু পূর্বক ২৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অংশ নেন সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম ও চসিকের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জুনাইদ কবির সোহাগ।

অপর অভিযানে স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন এর নেতৃত্বে নগরের ফিরিঙ্গীবাজার এলাকার বিভিন্ন সড়কের উভয় পার্শ্বের রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল ও নির্মাণ সামগ্রী রেখে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির দায়ে ৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু পূর্বক ১৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

অভিযানকালে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ৩১ আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা ম্যাজিস্ট্রেটগণকে সহায়তা প্রদান করেন। এসময় পথচারী ও যানবাহন চালক সহ যাত্রীরা দখল উচ্ছেদ হওয়ায় চসিক মেয়র ও সহ উচ্ছেদে অংশগ্রহণ কারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

পত্রিকাএকাত্তর /ইসমাইল ইমন

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news