একমাস পরে লাশ হয়ে স্কুলে ফিরলেন শিক্ষাকা

উপজেলা প্রতিনিধি, পাথরঘাটা

১৯ জানুয়ারী, ২০২২, ২ years আগে

একমাস পরে লাশ হয়ে স্কুলে ফিরলেন শিক্ষাকা
ফাইল ছবি

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়েছিলেন স্কুল শিক্ষিকা মনিকা রানি হালদার (৪০)। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ২৫ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টায় সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে নিহতের মরদেহ এসে পৌঁছায় বরগুনায়। এরপর প্রথমেই তাকে নেয়া হয় পৌর শহরের গগন মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। সেখানে গীতা পাঠ এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শেষে তাকে সমাহিত করার জন্য গ্রামের বাড়ি ফুলঝুরিতে নেয়া হয়। 

নিহত মনিকা রানি হালদার বরগুনা পৌর শহরের গগন মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামী বরগুনা সদরের ফুলঝুরি বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাবু বঙ্কিম চন্দ্র মজুমদার। তিনিও একই লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে স্কুল শিক্ষিকা মনিকা রানি হালদারের মৃত্যুতে মঙ্গলবার রাত থেকেই নিহতের পরিবার, স্বজন, কর্মরত বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বরগুনা জুড়ে বইছে শোকের মাতম। 

গগন মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মেডিকেল চেকআপের জন্য আমার সহকারী শিক্ষক মনিকা রানি হালদার গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ছুটি নিয়ে ঢাকায় যান। সেখানে চিকিৎসা শেষে তারা স্বামী-স্ত্রী অভিযান ১০ লঞ্চে ফিরছিলেন। ২৪ ডিসেম্বর তার বিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার কথা ছিলো। বিদ্যালয়ে তিনি ঠিকই ফিরলেন, তবে লাশ হয়ে। তার মৃত্যুতে বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আমরা সবাই শোকাহত। 

নিহতের ছেলে বিকাশ জাগো নিউজকে বলেন, অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর প্রথমে তাকে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়। সেখানে  ২৫ দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার পর তার মৃত্যু হয়।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটউটের আবাসিক সার্জন ডা. এসএম আইউব হোসেন জানিয়েছেন, তার শরীরের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। প্রথম থেকে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরবর্তীতে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হয়েছে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের মরদেহ এসেছে বরগুনায়। এরমধ্যে ২৪ জনের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় তাদের গণকবরে দাফন করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করে তাদের স্বজনরা নিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত নিহতদের পরিবারকে দাফন কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী অতিক্রমকালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায়  উদ্ধার হওয়া ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের মরদেহ এসে বরগুনায়। এ ঘটনায় বরগুনা, ঝালকাঠি ও ঢাকায় তিনটি মামলা হয়েছে। মামলায় লঞ্চের মালিকসহ পাঁচজন কারাগারে রয়েছেন।

পত্রিকা একাত্তর/ তাওহিদুল ইসলাম

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news