ডাক্তারের ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

১৯ জানুয়ারী, ২০২২, ২ years আগে

ডাক্তারের ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যু
প্রতীকী ছবি | পত্রিকা একাত্তর

নড়াইলে ডাক্তর সুব্রত কুমারের ভুল অপারেশনে ববিতা নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে বিভিন্নক্লিনিকে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত চিকিসকসুব্রত কুমার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারদায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বিচারের দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজনেরা। মৃতববিতা খাতুন (৩০) সদর উপজেলা হবখালী ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা এলাকার আতিয়ারসরদারের মেয়ে এবং মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার বড়লিন গ্রামের লায়েব সেখেরস্ত্রী।

নিহত ববিতা খাতুন ৬ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। তার দুই ছেলে ও দুইমেয়ে রয়েছে।প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, গর্ভকালীন নানা জতিলতার কারণে ববিতার মারেবেকা বেগম চিকিংসার জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে আসার পথে রোগীকে পানিখাওয়ানোর জন্য জনতা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। এসময়জনতা ক্লিনিকের কর্মচারি লিপি ও নাদিরা রোগী ববিতাকে ফুসলিয়ে জনতাসার্জিক্যাল ক্লিনিকের মালিক শিপনের কাছে নিয়ে যায়।ক্লিনিকের মালিক শিপন গর্ভবতী ববিতার চিকিংসার কাগজ পত্র দেখে ৭২ ঘন্টারমধ্যে রোগী সুস্থ্য হয়ে যাবে বলে ২২ হাজার টাকা নেয় রোগীর মা রেবেকাবেগমের কাছ থেকে। গত ১৯ নভেম্বর ২০২১ ববিতা খাতুনের সিজার করে সদর উপজেলাস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুব্রত কুমার।

সিজার করার পর২/৩ দিন ক্লিনিকে রেখে রেবেকা বেগমকে বলেন আপনারা বাড়ি চলে যান তিনদিন পরক্লিনিকে এসে সেলাই কেটে যাবেন।বাড়িতে গিয়ে ববিতা খাতুন আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তাঁর পেট ফুলেপ্রশাব পায়খানা বন্দ হয়ে জ্বালা যন্ত্রণা করে অসুস্থ্যতা বাড়তে থাকে। পরে রেবেকা বেগম তার মেয়ে ববিতা কে নিয়ে সদর হাসপাতালে গাইনী বিশেষজ্ঞচিকিংসক (অব:) ডাঃ মিনা হুমায়ুন কবিরের কাছে নিয়ে গেলে তিনি কিছু পরীক্ষাকরতে বলেন। পরীক্ষা রিপোর্টে দেখা যায় রোগীর পেটের মধ্যে ২/৩ প্যাকেটরক্ত পুজ জমা হয়ে আছে।

এ ব্যাপারে ডাঃ মিনা হুমায়ূন জনতা সার্জিক্যাল ক্লিনিকের মালিক শিপনের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলে ওই রোগী কে পুনরায় ওই ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। ওইরোগীকে আবারও অপারেশন করেন সেই ডাক্তার সুব্রত। অপারেশনের সময় ডাক্তারসুব্রত পায়খানা প্রসাবের নাড়ি সহ আরও অনেক গুরুত্বপুর্ন নাড়ি কেটে ফেলেন।ফলে রোগীর অবস্থা ক্রমাবনতি হতে থাকলে কিøনিকের মালিক শিপন রোগী ও তাঁরমাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে সেখানেতাদেরকে রেখে পালিয়ে চলে আসেন বলে অভিযোগ করেন মৃত ববিতার মা।

পরে কিছুব্যাক্তি তাদেরকে আর্থিক সাহায্য করলে তারা আবার রোগীকে নিয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখান থেকে আবারও ক্লিনিক মালিক শিপন তাদেরযশোর উত্তরা প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে ঢাকায় নিয়ে গেলেএকদিন পর ১২ জানুয়ারি ২০২২ ববিতার মৃত্যু হয়। নিহত ববিতার মা রেবেকা বলেন, আমার মেয়েকে ডাক্তার সুব্রত একাধিকবারঅপারেশন করেছে। মেয়েকে ডাঃ সুব্রত ভুল চিকিংসা করে আমার মেয়েকে মেরেফেলেছে, আমি এর বিচার চাই। আমি এখন তার চার ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাবোকি করবো?

ববিতার ভাই মহিন সরদার বলেন, ডাঃ সুব্রত আমার আপু ববিতাকে ভুল চিকিংসাকরে মেরে ফেলেছে। এ নিয়ে আমরা যখন ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাবো তখন তার স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে হুমকি দিয়ে বলে মামলা করলে আমাদের কিছুইকরতে পারবে না। বেশি বুঝে না আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে কিন্তু আমরাওমানহানির মামলা করবো তোমাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করারজন্য হুমকিও দেন।নড়াইল জনতা ক্লিনিকের মালিক শিপন অভিযোগ আস্বিকার করে বলেন, রোগীরশারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় আমরা প্রথমে অপারেশন করতে রাজি হয়নি। রোগীরস্বজনরা আমাকে এবং ডাক্তারকে অনেক অনুনয়-বিনয় করার পওে ডাক্তার রোগীরঅপারেশ করতে রাজি হন। রোগী সুস্থ্য করার জন্য আমরা খুলনা ও যশোর নিয়েসাধ্যমত চেষ্টা করছি। রোগীর স্বজনরা সবকিছু জেনে এবং লিখিত দিয়েই অপারেশনকরিয়েছে বলেও তার দাবি।

অভিযুক্ত সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুব্রত কুমার ভুল অপারেশনের অভিযোগ অ¯ী^কার করে বলেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা ভালোছিলো না। রোগীর স্বজনদের পিড়াপিড়িতে অপারেশন করি। রোগীর শারিরীক অবস্থারঅবনতি হলে রোগী সুস্থ্য করার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। সরকারি গাড়িব্যবহার করে ক্লিনিকে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও গাড়ি নিয়ে নিজেরগ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। এক পর্যায়ে ডাঃ সুব্রতকুমার বলেন, ভাই আপনাদের এই বিষয় টা নিয়ে নিউজ করার দরকার নাই। তিনি একটিখাম বের করে বলেন, ভাই এটা আপনারা রাখেন। এটা আপনাদের মিষ্টি খেতে দিছি।

রাখতে রাজি না হলে তিনি বার বার ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।সিভিল সার্জন ডাঃ নাছিমা আক্তার বলেন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুব্রত কুমারের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তকরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পত্রিকা একাত্তর/হাফিজুল নিলু

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news