ইজারাকৃত বিলে অবৈধ জেলেদের চলছে অবাধে মাছ শিকার

স্টাফ রিপোর্টার, গোমস্তাপুর

৭ জুলাই, ২০২২, ১ year আগে

ইজারাকৃত বিলে অবৈধ জেলেদের চলছে অবাধে মাছ শিকার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিলগুলোতে অবাধে চলছে মাছ শিকার এমন অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। যারা ইজারা গ্রহণ করেছে তাদেরকে পাশ কাটিয়ে স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যু জেলে সেজে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে।

ইজারাকৃত বিলগুলো হচ্ছে, বিলকুজাইন, বিল বরেন্দ্র, বিল পাথার অনন্ত হাকিলা, পাথার সুন্দরপুর, পাথার হামতালপুর, পাথার মান্দিলা, পাথার গোঠাইল, ভাটুসিংড়া প্রভৃতি। তবে এবার অনিশ্চয়তার কারণে বড় বিলা ও ছোট বিলা ইজারা দেয়া হয়নি। ফলে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে ব িত হয়েছে।

ইজারাকৃত বিলে অবৈধভাবে মাছ শিকার প্রসঙ্গে রাধানগর ইউনিয়নের দুবোইল গ্রামের জেলে আব্দুল মালেক বলেন, আমরা যারা এখানে গরীব মানুষ রয়েছি, দিন আনি দিন খাই। আমাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অন্যতম উপায় হলো বিলে মাছ ধরা। তাই উন্মুক্ত জলাশয়ে আমরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। ইজারাদারদের লীজকৃত বিলে মাছ ধরছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ইজারা টিজারা বুঝি না। "জাল যার জলা তার" এ নিয়মের রীতিতে আমরা উমুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরি।

কথা হয় চেড়াডাঙ্গা মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি আল মামুনের সাথে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জেলেরা আমাদের ইজারাকৃত বিলে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে। এমনকি তাঁরা মাঝে মধ্যে দলবল নিয়ে লাঠিসোঁটা সহকারে নিয়ে এসে মাছ ধরে। এ বিলে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি মামলা কোর্টে চলমান রয়েছে। তারপরেও তাঁরা মাছ শিকার করছে। এমনকি তাঁরা মাঝ ধরার জন্য নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে অবাধে মাছ শিকার করছে। এতে করে মাছের পোনা ধংস হচ্ছে ও প্রজনন ব্যহত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এসব সমস্যা নিয়ে এই এলাকার সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য সহ উপজেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত সমস্যা রয়ে গেছে। এ ধরনের সমস্যা থাকলে আগামীতে বিল ইজারা নিতে আগ্রহ থাকবে না। যেমন এখন পর্যন্ত ছোট বিলা ও বড় বিলা ইজারা হয়নি। ফলে সরকারের কোষাগারে কোটি টাকার উপরে রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হবে।

নিষিদ্ধ জাল নিয়ে জেলে কর্তৃক মাছ ধরাসহ মৎস্য বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কয়েকদিন পূর্বে রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সহ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তা এবং রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মতিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হুমায়ূন রেজা ও উপজেলা নিবার্হী অফিসার আসমা খাতুন এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও জেলা প্রশাসনের একটি জরুরী সভায় যোগদানের কারণে সেখানে উপস্থিত হতে পারেননি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান সেই সভা সম্পর্কে বলেন, 'আমরা সেখানে মৎস্যজীবী ও জেলেদের উদ্বুদ্ধ করণের জন্য মতবিনিময় সভা করেছি। জেলেরা যাতে নিষিদ্ধ জাল নিয়ে মাছ শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা তাদেরকে সচেতন করেছি। জেলে ও ইজারাদারদের দ্বন্দে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে কোন সমস্যা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এরকম খবর আমি শুনিনি। তবে জেলেরা যদি নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরে‌, তাহলে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আলী হোসেন শামীমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইজারাকৃত জলমহলে অবৈধভাবে কেউ মাছ শিকার করলে ইজারাদারকে স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করার পাশাপাশি যোগাযোগ করতে হবে এবং সে কি ধরনের আইনি সহযোগিতা চাই সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে।

পত্রিকাএকাত্তর / রুবেল

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news