অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও কর্মচারির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

নড়াইল জেলা প্রতিনিধি

২৩ জুন, ২০২২, ১ year আগে

অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও কর্মচারির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ, কয়েক শিক্ষক ও কর্মচারির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে সম্প্রতি কলেজের ২টি গাছ কাটা, প্রাইমারী নিয়োগ পরীক্ষায় কলেজের কর্মচারিদের প্রাপ্য সম্মানি না দেওয়া, ক্রয় কমিটির কেনাকাটায় দুর্নীতি, মেয়েদের হোস্টেলে বিভিন্ন অনিয়ম, একজন শিক্ষক বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে থাকা সত্ত্বেও তাকে বিধিবহির্ভূতভাবে মাস্টার্স কমিটির সদস্য হিসাবে সম্মানীর অর্থ প্রদান, বিনা ছুটিতে কলেজে অনুপস্থিত ইত্যাদি।

অভিযোগে জানা গেছে, নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক সুপর্ণা নাগ গত ২০ এপ্রিল এ কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।এর পূর্বে অধ্যক্ষ ছিলেন প্রফেসর ডঃ মোঃ মাহবুবুর রহমান। কলেজটিতে গত কয়েক বছর ধরে এসব অনিয়ম-দূর্নীতি চলে আসছে, যা বর্তমান অধ্যক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পরে অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়ে কলেজ জর্জরিত হয়েছে।গত দু’সপ্তাহ পূর্বে সরকারি নিয়ম-নীতি না মেনে কলেজ হোস্টেলের ১টি মেহগনি ও ১টি নারকেল গাছ কাটা হয়েছে।

গত ৬জুন অনুষ্ঠিত প্রাইমারী নিয়োগ পরীক্ষায় ১৪জন কর্মচারী প্রত্যেককে ৪৯৫ টাকা করে সম্মানি দেওয়া হয়। অথচ ২০১৮ ও ২০২০ সালে বরাদ্দ কম থাকা সত্ত্বেও ১ হাজার টাকা পেয়েছিল। কিন্তু এবার তাদের প্রাপ্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করে ভুয়া ভাউচার করে অধ্যক্ষ নিজে ও কমিটির সদস্যরা টাকা ভাগ বটোয়ারা করে নেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বৈশাখী ঘোষ গত ২১মার্চ থেকে একটানা ২মাস ১৭দিন ৭জুন পর্যন্ত বিনা ছুটিতে কলেজে অনুপস্থিত থেকে বেতন ভোগ করলেও অধ্যক্ষ বিধি মোতাবেক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বরং ৮ জুন থেকে তাকে যোগদানের অনুমতি প্রদান করেছেন।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক সন্ধ্যা রানী কুন্ডু নায়েমে ৪ মাসের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অবস্থান করলেও তার অনুপস্থিতিতে তাকে মাস্টার্স কমিটির সদস্য হিসাবে বিধিবহির্ভূতভাবে সম্মানীর অর্থ প্রদান করেছেন। টেন্ডার ক্রয় কমিটির কেনাকাটার ক্ষেত্রে কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষক পীযূষ কুমার দাস কমিটির অপর দুই সদস্যের সাথে সমন্বয় না করে নিজে অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে কেনাকাটা করেছেন। বাজেট ও ক্রয় সম্পর্কে অবহিত না করে অধ্যক্ষ ও কমিটির আহবায়ক কৌশলে অপর দুই সদস্যের স্বাক্ষর করিয়ে নেন।

অভিযোগ রয়েছে, কলেজ হোস্টেলের মেয়েরা প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে দিলেও দুই বছরের বেশী সময় ধরে নিন্মমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এর আগে কলেজ হোস্টেলের মেয়েরা নিজেরা বাজার করে খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করলেও বিগত ২ বছর ধরে ২০১৪ সালে শহরের দূর্গাপুরে বিএনপি-জামাতের সাথে পুলিশের সংঘষের্র মামলার আসামি আশরাফুল আলমকে দিয়ে মেয়েদের বাজার করানো হয়।

গত কয়েক কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা নিজেদের কাঁচা বাজার নিজেরা করতে চাইলে অধ্যক্ষ তাদের ফোনে ডেকে এনে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আশরাফুলই বাজার করবে, অন্যথায় তোমাদের হোস্টেল ও কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হবে’। এ বিষয়ে আন্দোলন করায় সম্প্রতি কেয়া নামের ১জন এতিম ও অসহায় মেয়েকে বিনা নোটিশে ১ ঘন্টা সময়ের মধ্যে হোষ্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া কলেজ হোস্টেলের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে মেয়েরা বিভিন্ন আপত্তি ও অভিযোগ করলেও অধ্যক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো মেয়েদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে জোর করে বাজার করতে চাইনা এবং আশরাফই বাজার করবে মর্মে অধ্যক্ষ বরাবরে আবেদনে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রীদের অভিযোগ আশরাফুল তার চাচা কলেজের প্রধান সহকারী আব্দুল আলীমের বাসায় মেয়েদের টাকার বাজার করে দেয়। এভাবে সে ২ বছর ধরে বাজার করে আসছে।

এছাড়া ঠিকমতো হিসেব দেয় না এবং নিজের পকেটে ভারী করে। শুধু তাই নয় আশরাফুল নিয়ম-নীতি বহির্ভূতভাবে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের তিন তলার একটি চিলে কোঠায় নিজের বাসার মতো করে থাকেন। কলেজের প্রধান সহকারী শেখ আব্দুল আলীমের ভাতিজা আশরাফুল আলম। যে কারনে অন্যান্য কর্মচারীরা বাজার করতে চাইলে তাদের বাজার করতে দেয়া হয় না। স্থায়ী কর্মচারী আজিম বলেন, আমি বাজার করতে চাই কিনা সেটা অধ্যক্ষের উপস্থিতিতে মুহাম্মদ নাজমুল হুসাইন রনি স্যার আমার কাছে জানতে চাইলে আমি বলেছিলাম বাজার করতে রাজি আছি।

কিন্ত আমাকে বাজার করতে দেওয়া হয়নি। আমার মতো অন্যান্য কর্মচারীরা ও বাজার করতে চায়। কেন জানিনা একা আশরাফুল বাজার করবে। কি আছে এর মধ্যে আমরা ও দেখতে চাই। আমরা কলেজের স্থায়ী কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও আমাদের থেকে বেশি সুযোগ সুুবিধা দেন আশরাফুলকে। আশরাফুল আলম অস্থায়ী কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র প্রধান সহকারী আব্দুল আলীমের ভাতিজা হওয়ায় অন্যায় ভাবে কলেজের ভিতরে রাতদিন থাকে বাসা হিসাবে ব্যবহার করে।

আজিম আরো বলেন আশরাফুল আলম একজন দুর্গাপুরের পুলিশ মারা মামলার ৬মাস জেল হাজতে থাকা আসামী। অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রধান সহকারী শেখ আব্দুল আলীম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুপর্ণা নাগকে ক্রয় কমিটি ও অন্যান্য খাত থেকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা দেওয়ায় তিনি অস্থায়ী কর্মচারী আশরাফুল আলমকে দিয়ে বাজার করান এবং কলেজে রাতে বাসা হিসাবে ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

যে কারনে মেয়েদের আপত্তি সত্ত্বেও আশরাফুল আলম অনুমতি ছাড়াই মেয়েদের হোস্টেলে রাত বিরাত অবাধে যাতায়াত করে। বিধি মোতাবেক কোন কর্মচারী রাতদিন ২ শিফটে দ্বায়িত্ব পালন করতে পারেনা। অস্থায়ী কর্মচারী আশরাফুল, প্রধান সহকারী শেখ আব্দুল আলীম ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুপর্ণা নাগ যোগসাজসে কলেজের স্টোর রুমের সকল মালামাল গোপনে বিক্রি করে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।

অভিযোগ আছে কলেজের যে সমস্ত মালামাল ফার্নিচার পরিবর্তন করা হয় তার মধ্যে যে গুলো ব্যবহার করার মতো সেগুলো কর্মচারী আশরাফুল আলম তার চাচা প্রধান সহকারী শেখ আব্দুল আলীমের বাসায় দিয়ে আসে। শেখ আব্দুল আলীমের বাসায় যে গেটটা লাগানো সেটা কলেজের পুুরাতন কলাপ্সাবেল গেট। এ ছাড়াও কলেজের আম কাঠাল নারকেল ও অন্যান্য ফল গোপনে রাতে প্রধান সহকারী শেখ আব্দুল আলীমের বাসায় দিয়ে আসে।

কর্মচারীরা কলেজ মিটিংয়ে বললেও কোন ব্যবস্থা নেননি অধ্যক্ষ। বিভিন্ন ক্রয়ে অনিয়মের ব্যাপারে কমিটির সদস্য প্রভাষক মোঃ আলী হোসেন ও প্রভাষক নিত্যরনজন সরকার বলেন,টেন্ডার বাজেট এবং ক্রয় সম্পর্কে আমাকে তেমন কিছু জানানো হয়নি শুধু বিল ভাউচারে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক সুপর্ণা নাগ বলেন,আমি এখানে ভেসে আসেনি আমার বাড়ি এই নড়াইলের মিরাপাড়ায়। কলেজ আগে যেভাবে চলছিল এখনো সেই ভাবে চলবে।

পত্রিকাএকাত্তর /হাফিজুল নিলু

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news