নোনা পানি মুক্ত ফসলে কৃষকের স্বপ্ন

সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি

৬ জানুয়ারী, ২০২২, ২ years আগে

নোনা পানি মুক্ত ফসলে কৃষকের স্বপ্ন
ফাইল ছবি | পত্রিকা একাত্তর

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় ৫ নং কৈখালী গ্রামে নোনা পানি মুক্ত লবণসহিষ্ণু ফসল চাষ।

ইউনিয়নের গাঁ ঘেঁষে ভারত সীমান্তবর্তী কালিন্দীনদী পাশে,এই নদী থেকে নোনা পনির অপরিকল্পিত চিংড়ি মাছের ঘের করে রাখছিলো কিছু মানুষ ব্যাক্তি স্বার্থে।

প্রায় ১২০০ বিঘা জমি যাহা ছিল কৈখালী সর্বস্তরের সকল শ্রেণির মানুষের দীর্ঘ ২৭ বছর ভোগান্তি, এরকম পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে স্থানীয় কয়েকজন সচেতন নাগরিকদের বিভিন্ন রকম প্রতিবাদে মানববন্ধন সাংবাদিক সম্মেলন বিভিন্ন মহলে অভিযোগ দায়ের করে মুক্ত হয় অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ নোনাপানি মুক্ত।

এই লবণাক্ত জমিতে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন কৈখালীর কয়েক হাজার কৃষক। লবণাক্ততা সহনশীল ফসল উদ্ভাবন ও বিষমুক্ত চাষে এই স্বপ্ন দেখছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা হিসেবে পরিচিত শ্যামনগর কৈখালীর বাসিন্দারা।

তবে এতে বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা, খাল ইজারা।

চাষিরা বলেছেন, পূর্ব কৈখালী,পশ্চিম কৈখালী, বড় মৌকটলা ও ছোট মৌকটলা খাল, এই খালগুলো ইজারা দেওয়া বন্ধ করে পুনরায় খাল খনন পানি সরাবরাহের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে পাল্টে যাবে ১০ সহস্রাধিক কৃষকের ভাগ্য।

ওই কাজের অংশ হিসেবে কৃষকেরা উপজেলার কৈখালী গ্রামে লবণ সহনশীল ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিতে কাজ করছে, গ্রামটির কয়েক শ বিঘা জমিতে লবণসহিষ্ণু ধান,তরমুজ, শসা, আলু, রসুন, পালংশাক ও লালশাকের চাষ করা যাচ্ছে। কয়েক দশক পর এই জমিতে ফসল ফলিয়ে নতুন আশা দেখছেন কৃষকরা। তবে স্থানীয় দক্ষিণ কৈখালী,পূর্ব কৈখালী, পশ্চিম কৈখালী, ছোট মৌকটলা ও বড় মৌকটলা খালগুলো উন্মুক্ত না হলে এই আশা ভঙ্গ হবে। দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি মহল এসব খাল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছে।

ফলে বেশির ভাগ সময় খালগুলো বিভিন্নভাবে আটকে রাখা হয়। বিশেষ করে চিংড়ি চাষ মৌসুমে লবণপানি প্রবেশ করানোর ফলে পুরো এলাকা লবণাক্ততায় রূপ নিয়েছিলো।

পূর্ব কৈখালী গ্রামের জামাল গাজী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চিংড়ি চাষের জায়গা ব্যাতীত আমাদের বাকি বহু জমি পতিত পড়ে থাকত। লবণপানির কারণে কিছুুই হতো না। শুধু এক মৌসুমে কিছু ধান পাওয়া যেত। ২৫-২৭ বছর পর আলু, শসা,ধান, সবজি, তরমুজসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে। এখন আমরা নতুন আশায় বুক বাঁধছি।

কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন,খালের ইজারা বন্ধ না হলে আমাদের কোনো কিছুই হবে না এবং খালগুলো উন্মুক্ত করতে হবে। ইজারাদাররা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায়,মামলা-হামলার ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না। আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।

কৈখালী গ্রামের আল-আমীনসহ দক্ষিণ কৈখালী, পূর্ব কৈখালী, পশ্চিম কৈখালী, মধ্যে কৈখালীর কয়েকজন মানুষেরা বলেন, নোনা জমিতে ধান চাষের পাশাপাশি ওলকপি আলু, পালংশাক, তরমুজ, লালশাকের উৎপাদনে সবাই খুশি। বিশেষ করে খালগুলো খোলা থাকলে আরো ভালো ফসল উৎপন্ন হবে।

এতে কৈখালী ইউনিয়নের সকল মানুষ ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবে।

সাহেবখালী এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের কয়েকজন বাসিন্দারা জানান, খাল উন্মুক্ত করলে কৈখালী ইউনিয়নে কৃষি কাজে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা সফল হবে। কিন্তু খালগুলো উন্মুক্ত না হলে কৃষক ও এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কৃষকর জানান আমাদের এই নোনা এলাকায় চমৎকার ফসল ফলেছে। আমরা গোটা উপকূলীয় এলাকায় এ নোনাপানি মুক্তির কার্যক্রম চাই। আমরা এই প্রত্যন্ত এলাকায় ফসলের এমন সমারোহ দেখে অভিভূত।

সচেতন মানুষদের স্লোগান খাল খনন ও তা উন্মুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশ রয়েছে। আমরা এখানকার খাল ইজারার বিষয়টি জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছি খাল গুলো উন্মুক্ত করার দাবী জানিয়েছি।

কিন্তু আমাদের এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম দেখা মেলেনি, খাল দখল করে লবণপানি উত্তোলন এবং সাধারণ মানুষের ক্ষতি করা চলবে না। কৃষক ও সচেতন নাগরিকদের দাবী

এবিষয়ে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ।

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news