চিলাহাটিতে নৈশপ্রহরী কর্তৃক স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ

উপজেলা প্রতিনিধি, ডোমার

উপজেলা প্রতিনিধি, ডোমার

১ জুন, ২০২২, ১ year আগে

চিলাহাটিতে নৈশপ্রহরী কর্তৃক স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ী একরামিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী মেরাজুল ইসলাম (৩৫) কর্তৃক একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নির্যাতিত একাধিক শিশু শিক্ষার্থী জানায়, দপ্তরি মেরাজুল দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ করে আসছে। গত বৃহস্পতিবার (১৯শে মে) এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার সময় কয়েকজন শিশু বিষয়টি দেখে ফেলে। মেরাজুল এই ঘটনা কাউকে জানালে তাদের সাথেও এরকম করবে এই হুমকি দিলে প্রায় সপ্তাহখানেক পরে ঘটনাটি শিশুরা তাদের অভিভাবকদের জানায় এবং বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।

এবিষয়ে অভিভাবক মুসা ইসলাম জানান, আমরা কয়েকজন মিলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীনকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন তাকে নাকি কেউ অভিযোগ জানায় নাই, অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নিবে। অথচ অন্যান্য অভিভাবকেরা বলছেন প্রধান শিক্ষক বাড়িতে না জানানোর জন্য ভয়ভীতি দেখান এবং শিশুদের উপবৃত্তি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী মেরাজুল এর আগেও ২/৩ বার এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। আমারও তো মেয়ে আছে, আমরা এমন ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

বিদ্যালয়টির নির্যাতিত ও ভুক্তভোগী পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীটির কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে শিশুটির চাচা এসে ভয়ভীতির কারণে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে ও বাসায় একজন সদস্যকে মারধর শুরু করে। তিনি সাংবাদিকদের তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এবিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গত সোমবার (৩০শে মে) দুপুর দেড়টায় স্কুলে গেলে দপ্তরি মেরাজুলকে স্কুলে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। স্কুলের এক সহকারী শিক্ষিকা জানান মেরাজুলকে ছুটি দেয়া হয়েছে।

এসময় ভোগডাবুড়ী একরামিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন স্কুলে না থাকায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি নিজ বাসায় দেখা করতে বলেন। তার বাসায় কথা হলে রেকর্ড না করার শর্তে তিনি জানান, “মেরাজুল গত আট বছর ধরে চাকরি করছে। এতদিন আমাদের চোখে তার কোনো খারাপ আচরণ চোখে পড়েনি। এমনকি এতদিন কোনো অভিভাবকও আমাকে জানায়নি। পরে জানতে পারলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে আমি বিষয়টি জানাই এবং নির্যাতিত শিশুর বাসায় একজন সহ গিয়ে শিশুর সাথে কথা বলে বিস্তারিত শুনি। পরবর্তীতে মেরাজুলের সাথে কথা বললে সে সবকিছু স্বীকার করে। এরপর আমি, সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বারের সাথে কথা বলে এবিষয়ে ৩১শে মে (মঙ্গলবার) সভা আহ্বান করি। প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তার বিরুদ্ধে মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিব।”

গত মঙ্গলবার (৩১শে মে) দুপুর ২টায় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান, সহ-সভাপতি হারুন, প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার সাদেকুর রহমান, সদস্য গোলাপ, নির্যাতিত শিশুর অভিভাবক, স্কুলের শিক্ষিকাবৃন্দ ও অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে আলোচনা সভায় আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী মেরাজুল ইসলাম মেরাজের অনুপস্থিতিতেই তাকে ৭ দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় ম্যানেজিং কমিটি।

প্রধান শিক্ষক জানান, আমরা তাকে সাত দিনের সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সাতদিনের মধ্যে আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠাব তারপর যা ব্যবস্থা নেয়ার অফিস নেবে।

ডোমার উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রকিবুল হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “বিষয়টি আমি শুনেছি, কিন্তু এবিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি, পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। তবে ভোগডাবুড়ী এলাকার স্থানীয় এক নাগরিক ইয়াছিন আলী মমতাজ (এ্যাডভোকেট, জজকোর্ট নীলফামারী) জেলা শিক্ষা অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে শুনেছি।”

পত্রিকা একাত্তর/রিশাদ

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news