বরগুনার গুদিঘাটা মাঃ বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগে বানিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার

স্টাফ রিপোর্টার

২০ মে, ২০২২, ১ year আগে

বরগুনার গুদিঘাটা মাঃ বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগে বানিজ্য

বরগুনা সদর উপজেলা গুদিঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক মাষ্টার এবং ম্যানেজিং কমিটি সভাপতির নিপা হাওলাদার উভয় মিলে চাকরী প্রার্থীর কাছ থেকে যে টাকা সংগ্রহ হবে সে টাকা কে কত পার্সেন্ট ভাগাভাগি করে নিবে কতজন প্রার্থী নিয়োগ হবে এই সকল বিষয় অসংগতি থাকার কারণেই বরগুনা সদর উপজেলা ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের গুদিঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিপা হাওলাদার নিয়োগ বাণিজ্যে নতুন ভাবে অবতীর্ণ হয়েছেন বলে বিষয়টি তার কাছে পরিষ্কার ছিল না। কিন্তূ টাকা নেয়ার ক্ষেত্রে যতেষ্ঠ যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন।

অপরদিকে প্রধান শিক্ষক যথেষ্ট দুর্নীতিবাজ হওয়ার কারণে কয়েকজন চাকরী প্রার্থীর কাছ থেকে আগেই টাকা নিয়ে খরচ করেছেন বলে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছেন।

২৬ এপ্রিল ২০২২ বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়োগ পরীক্ষার শুরুতেই সভাপতি নিপা হাওলাদার পছন্দের প্রার্থীদের পিছন থেকে ইশারার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছেন। পরীক্ষা শেষে ভাগ বাটোয়ারায় কে কত টাকা নিবে তা নিয়ে অসংগতি থাকার কারণে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার সকল পরীক্ষার্থীর খাতাপত্র নিয়ে কেটে পরেন।

অপরদিকে অল্প শিক্ষিত ও নতুন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কিভাবে প্রধান শিক্ষককে আঁটকাবে বুঝতে না পেরে মিটিং রেজুলেশন খাতা নিয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে। কয়েকদিন হলেও কেহই কারো সাথে যোগাযোগ করে নাই।

প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক মাষ্টার দুই বছর আগে থেকে তানিয়া (চাকরী প্রার্থী) বাসায় দুপুরের খাবার খেয়েছেন কারণ তানিয়াকে আয়া পদে চাকরী দিবেন। নিয়োগ পরীক্ষার আগে তানিয়ার কাছে ছয়লক্ষ টাকা দাবী করেছেন প্রধান শিক্ষক।

তানিয়ার বাবা গাছ বিক্রি করে নিজের জমানো টাকা স্বর্ণালঙ্কার বন্ধক রেখে চার লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে প্রধান শিক্ষকের হাতে তুলে দেন। কিন্তু অন্য প্রার্থী ৬,০০০০০/-( ছয়লক্ষ টাকা) দিবে বলে তানিয়াকে চাকরি নেয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক।

স্কুলের জমি দাতা নুপুর আক্তারের কাছ থেকে ছয়লক্ষ টাকা চেয়েছে আয়া পদে চাকরী নেয়ার জন্য কিন্তু নুপুর দরিদ্র হওয়ায় ছয়লক্ষ টাকা সংগ্রহ করতে না পারায় তাকেও চাকরি না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সভাপতি নিপা হাওলাদার বিগত দিনের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিদের অযোগ্য ভেবে নিজের আপন ভাইকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তার পিতা সোহরাব হোসেন মেম্বার (সাবেক) এর সাথে অলিখিত চুক্তি করেছেন।

সভাপতির ভাই সজীব ঢাকা সুপ্রিম কোর্টে দুই হাজার ইয়াবা সহ ধরা পড়ার একটি মামলা চলমান রয়েছে, সেই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে মাহমুদুল হাসান সজীবকে চাকরী দেয়া প্রক্রিয়া চলছে নৈশ প্রহরী পদে।

এ ভাবে চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা বাণিজ্য হয়েছে বরগুনার গুদিঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ দেয়ার জন্য। পত্রিকায় সার্কুলার দিয়েছেন ৩ জন নিয়োগ দেওয়া হবে কিন্তু ৪ টি পদের সৃষ্টি করে চারজনকে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নিজেদের পছন্দের প্রার্থী যারা আগে টাকা পয়সা লেনদেন করেছে তাদেরকে ইশারায় দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিকেলে টাকার ভাগাভাগি সমস্যা হওয়ার কারণে প্রধান শিক্ষক আঃ রাজাক সাহেব সকল পরীক্ষার খাতা নিজে আত্মগোপন করে অন্যদিকে সভাপতি নিপা হাওলাদার রেজুলেশন খাতা নিয়ে প্রধান শিক্ষক সাহেব কে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে।

বরগুনা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরত্বে এই স্কুলটি একসময়ে সুনামের সাথে চললেও প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান সভাপতির কারনে সেই সুনাম হারাতে বসেছে।

লেখাপড়ার মান অত্যন্ত ভালো থাকার এই স্কুলটি বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের স্বৈরাচারী মনোভাব অন্য শিক্ষকদের সাথে কোন কিছু সমন্বয় না করে ইচ্ছামত কার্যক্রম করার কারনে শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক অনিয়মের পরিনত হয়েছে।

স্কুলের শিক্ষক এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে স্কুলের পুরাতন ভবন বিক্রি করে খেয়ে ফেলেছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক।

স্কুল নতুন ভবন করার নাম করে অফিস খরচ বাবদ ৮০০০০/- (আশি হাজার) টাকা নিজের পকটস্থ করেছেন এই প্রধান শিক্ষক। আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের মেরামতের সরকারী অনুদান নিজে খরচ করেছেন।

শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে স্কুলের টিউশনের টাকা নিজের মত খরচ করেছেন।দুর্নীতির দায়ে এই প্রধান শিক্ষক আগের সভাপতির করা মামলায় জেল খেটেছেন বলে জানিয়েছেন অভিভাবক বৃন্দ।

প্রধান শিক্ষক আঃ রাজাক মাষ্টারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, অন্য কিছু না শুনেই বারবার মোবাইল লাইন কেটে দেয়।

নতুন সভাপতি নিপা হাওলাদার বলেন আমি বিএ পাশ করে সভাপতি হয়েছি অন্যান্য সভাপতিরা দূর্নীতি করেছে আমি ভাল কিছু করার চেষ্টা করছি।

নিয়োগের ব্যাপারে ডিজি প্রতিনিধি বরগুনা সরকারী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে কয়েকবার গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জনাব জসিম উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন নিয়োগে কোন রকম দূর্নীতি কাম্য নয় এভাবে নিয়োগ বানিজ্য বন্ধ না হলে জাতি মেধা শূন্য হয়ে পরবে।

পত্রিকা একাত্তর /মোঃ মনিরুল ইসলাম

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news