৩ মাসেও নিখোঁজ তারিকুর রহমানের সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ

চট্টগ্রাম মহানগর প্রতিনিধি

১৩ এপ্রিল, ২০২২, ২ years আগে

৩ মাসেও নিখোঁজ তারিকুর রহমানের সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ

তারিকুর রহমান (৩৫) নিখোঁজ হওয়ার ৩ মাস পরও তাঁকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা এলাকা থেকে সে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন ১৪ জানুয়ারি নগরীর কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তাঁর ছোট ভাই আরিফ।

নিখোঁজ তারিকের ছোট ভাই আরিফুর রহমান এই প্রতিনিধিকে জানান, তারিকুর রহমান নগরীর আন্দরকিল্লাস্থ মসজিদ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় বাংলাদেশ অনুবাদ কেন্দ্র নামক প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সেকশনে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো ১৩ জানুয়ারি রাতে কাজ শেষে দোকান থেকে বের হন। স্ত্রীকে ফোনে বাসায় ফিরতে কিছুটা দেরি হওয়ার কথাও জানান। কিন্তু তিনি রাতে আর বাসায় ফেরেননি। এরপর থেকে তাঁর মোবাইল নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক চেষ্টার পরও বড় ভাইয়ের খোঁজ না পাওয়ায় অবশেষে পুলিশের দারস্থ হন আরিফ। নিখোঁজের পরের দিন (১৪ জানুয়ারি) সাধারণ ডায়েরি করেন কোতোয়ালি থানায়। সেই থেকে এখনো নিখোঁজ তারিকের কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পায়নি পুলিশ।

তারিকের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালি উপজেলার সৈয়দপুরে। সে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এইচ এস সি কোর্স সম্পন্ন করেন। সে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে নগরীর কাপাসগোলা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ অনুবাদ কেন্দ্র নামক প্রতিষ্ঠানটিতে তারিকের সাথে আরো একজন কাজ করতেন। তাঁর নাম মোহাম্মদ রাসেল। রাসেল জানান, তাঁর সাথে তারেকের কোনো দ্বন্দ্ব ছিলনা। সে তাঁর খুব ভালো বন্ধুও বটে। অন্যকারো সাথে দৃশ্যমান কোনো দ্বন্দ্বের বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রতিষ্ঠানটির দুই কলিগের মধ্যে আগে থেকে কোনো বিরোধ না থাকার বিষয়টি জানিয়েছেন নিখোঁজ তারিকের ছোট ভাই আরিফও। আরিফ আরো জানান, তাঁর ভাইয়ের সাথে কলিগ কিংবা কারো শত্রুতা ছিলনা। তবে, একজন প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে বেশ সখ্যতা ছিল। ঐ মহিলার নাম রানু। তাঁর বাসা চাঁদগাঁও থানাধীন খাজা রোডের পাশ্ববর্তী বাদামতল এলাকায়। একই এলাকায় নিখোঁজ তারিকেরও একটি প্লট আছে। তারিক ঐ প্লট দেখাশোনা করতে যাওয়ার সুবাদে প্রবাসীর স্ত্রীর(রানু) সাথে সম্পর্কে জড়ান। এরপর থেকে তারিক রানুর বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। মাঝে মাঝে রানু'কে আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করতেন।

তারিক নিখোঁজ হন ১৩ জানুয়ারি রাতের বেলা। সে ঐ রাতে নানার বাসায় যাওয়ার কথা বলে মূলত রানুর (প্রবাসীর স্ত্রী) বাসায় গিয়েছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন নিখোঁজ তারিকের স্ত্রী নাজমা আকতার। নাজমা বলেন, আজ আমাদের বিয়ের বয়স প্রায় দশ বছর। আমার স্বামী খুবই ভালো লোক। তাঁকে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। সে কখনো আমার সাথে মিথ্যা বলেনা। কিন্তু সেদিন কেন জানি সে আমার সাথে মিথ্যা কথা বললো, ঠিক বুঝলামনা! সে আমার সাথে মিথ্যা বলে মূলত রানুর বাসায় গিয়েছিল।

পুলিশের মতে, এটা অপহরণ নয়। পারিবারিক কোনো ইস্যু হতে পারে। কারণ, তারিকের বিকাশ একাউন্টে এখনো ২০ হাজার টাকা গচ্ছিত আছে। তাঁকে অপহরণ করা হলে তাঁর মোবাইলসহ বিকাশ একাউন্টের টাকাগুলোও কেড়ে নিত অপহরণকারীরা।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ঐ রাতে নিখোঁজ তারিকুর রহমান যে মহিলার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন, তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট কর্তৃকও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রানু (প্রবাসীর স্ত্রী) তাঁর সাথে নিখোঁজ তারিকের ভালো সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে রানু পুলিশকে জানান, ঐ রাতেও তারিক তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সাক্ষাতের পর আবার চলে যান।

তবে, নিখোঁজের পরেরদিন তারিকের স্ত্রী রানুর বাসায় গিয়ে তারিকের সাথে রানুর সাক্ষাতের বিষয়টি জানতে চাইলে রানু তা অস্বীকার করেন বলে জানিয়েছেন তারিকের স্ত্রী নাজমা আকতার। নাজমা বলেন, সেদিন রানু সাক্ষাতের বিষয়টি অস্বীকার করায় তাঁকে আমার সন্দেহ হয়।

এদিকে, তারিককে উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। কিন্তু, কিছু একটা ক্লু পেতে হবে-তো। নইলে আমরা কিভাবে আগাবো?

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তারিক-নাজমা যুগলের বিয়ের বয়স দশ বছর হলেও তাঁদের কোনো সন্তান নেই। তারিকের স্ত্রী জানান, তাঁর স্বামীর উপর তাঁর বিশ্বাসের কোনো ঘাটতি নেই। যে কোনো মূল্যে স্বামীকে ফিরে ফিরে পেতে চান তিনি। স্বামীকে ফিরে পেতে গনমাধ্যম এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্ত্রী নাজমা আকতার।

পত্রিকা একাত্তর/ইসমাইল ইমন

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news