মাটি খেকোদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ কোম্পানীগঞ্জের মানুষ নীরবতায় প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

৪ এপ্রিল, ২০২২, ২ years আগে

মাটি খেকোদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ কোম্পানীগঞ্জের মানুষ নীরবতায় প্রশাসন

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মাটি খেকোদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারন মানুষ। ভেঙে পড়ছে গ্রামীণজনপদের সড়কগুলো। প্রশাসনিক দূর্বলতাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ মদদে ফসলী জমির উর্বরাংশ (টপ সয়েল) চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এককথায় বলতে গেলে উপজেলার সর্বত্র কৃষি জমির উর্বরাংশ কাটার মহোৎসব চলছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকায়।

সরকারী খাসজমি, নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলের চাষ যোগ্য খাসজমি এবং ব্যাক্তিগত মালিকানাধীন তিন ফসলী জমির উর্বরাংশের (টপ সয়েল) মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দেয়ার ফলে এখানে চাষ যোগ্য আবাদী জমির পরিমান কমে যাচ্ছে। ব্যবহার ও চলাচল অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে গ্রামীন জনপদের পাকা, আধাপাকা, এইচবিবি (হেরিং বন্ড ব্রিক) সলিং ও কাঁচা রাস্তাগুলো। স্থানীয়রা বাধা দিলেই মাটি ও বালু খেকোরা অভিযোগ তোলে চাঁদাবাজীর। হয়রানীর ভয়ে সাধারণ মানুষও এখন যেন প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। দলীয় ক্যাডার ও পুলিশ দিয়েও হয়রানি করা হয় এসবের প্রতিবাদকারীদের। চরহাজারীর প্রতিবাদী যুবক যুবলীগ কর্মী রিয়াদকে দলীয় ক্যাডারদের ইঙ্গিতে পুলিশি হুমকি ও হয়রানী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাটইয়া ইউনিয়নের বিস্তির্ণ কৃষি জমি, চরহাজারীর বিভিন্ন খাসজমি ও কৃষিজমি, চরপার্বতী ইউনিয়নে মৌলভীবাজার সংলগ্ন ফসলের জমি ও জেগে ওঠা চরের জমি, চরকাঁকড়া, মুছাপুর ও রামপুর ইউনিয়নের খাস ও সদ্য জেগে ওঠা আবাদযোগ্য জমি থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত, শত বড় ট্রাক ও ট্রাকটর যোগে মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইট ভাটায় এবং ব্যক্তিগত পুকুর, ডোবা, নিম্নভূমি ভরাট করনে। মাটিবহনকারী ট্রাক ও ট্রাকটর চালকরা জানান, এসব ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের অর্থ দিয়ে এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ মাটি নেয়া হচ্ছে।

সিরাজপুরের মাটি ব্যবসায়ী কাইয়ুমসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, প্রশাসন, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ না করে এ ব্যবসা করার সাধ্য কারো নাই।

স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, চরপার্বতীর মৌলভীবাজার সংলগ্ন এলাকার মাটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে স্থানীয় আইয়ুব আলীর নেতৃত্বে। চরহাজারীর মাটির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আশরাফ আলী, ফারুক, মিলন কোম্পানী, সবুজ কোম্পানী, জন্টু হাজারী। তবে এদের মূল নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

মাটিখেকোদের প্রতিদিন শত শত গাড়ীর দোরাত্নে পথচারী নারী, পুরুষ, শিশু উড়ে যাওয়া ধুলাবালিতে নানারোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রাতের বেলায় এসব গাড়ীর বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় মানুষের।

মুছাপুর ইউনিয়নের উত্তর মুছাপুর সরকারি খাস জায়গা থেকে ২৮টি ট্রাক ও ৩টি স্কেবেটর দিয়ে চাষ উপযোগী সরকারী খাসজমির মাটি লোপাট হচ্ছে। এতে ওই এলাকার সব রাস্তা ভেঙ্গে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে শুক্রবার রাতে স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ভিডিও চিত্রসহ বারবার জানানোর পরও স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে ওই এলাকাবাসী। শান্তিরহাটের পূর্বদিকে মাতালিয়া ঘাটরোড এলাকায় নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চল ও চাষাবাদ উপযোগী শতশত একর খাসজমি থেকে ৫-৭ফুট গভীর করে মাটি লুট হয়ে যাচ্ছ।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, আমি সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে। কেন যেন পেরে উঠছিনা, কোথাও আমার বিরুদ্ধে কোন অনৈতিকতার অভিযোগ পেলে আমাকে বলুন, শুধরে নিতে কোন কার্পণ্য করবোনা।

এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, মাটি, বালু খেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া আছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাকে।

ছবির ক্যাপশন- নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মাটি খেকোচক্র কৃষি জমির উর্বারাংশ (টপ সয়েল) কেটে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ইট ভাটায়।

পত্রিকা একাত্তর/ আবু সাঈদ শাকিল

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news