বধ্যভূমির পাশে পতিতালয় ; মাদকসেবিদের অভয়ারণ্যে !

স্টাফ রিপোর্টার

স্টাফ রিপোর্টার

৩ এপ্রিল, ২০২২, ২ years আগে

বধ্যভূমির পাশে পতিতালয় ; মাদকসেবিদের অভয়ারণ্যে !

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌর এলাকার পূণর্ভবা নদীর পাশে তৎকালীন সময়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রহনপুর আহম্মাদী বেগম (এবি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গড়ে তোলা পাক বাহিনীর ক্যাম্পে আটক নিরীহ বাঙ্গালীদের নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা ব্যক্তিদের মৃতদেহ ফেলে মাটি চাঁপা দেয়া হত। এর পূর্ব পাশে রহনপুর বিজিবি ক্যাম্প সেই স্থানটি এখন রহনপুর পৌরসভাধীন একমাত্র বধ্যভূমিতে পরিনত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সে জায়গায় আকর্ষনীয় স্মৃতি স্তম্ভ তৈরী করেছে এবং রহনপুর পৌরসভা বেড়া দিয়ে দু'ধারে ফুল গাছ লাগিয়ে শোভাবর্ধন এর কাজটি করে স্বাধীনতার চেতনা ধারনকারী মানুষ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে প্রতিটি জাতীয় দিবসে একত্রিত হয় সর্বস্তরের মানুষ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এর পাশেই রেলওয়ের জমিতে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে একটি পতিতালয়। যা স্থানীয়ভাবে শান্তিপাড়া নামে পরিচিত। যেখানে পতিতাবৃত্তির পাশাপাশি চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা এবং স্মৃতি স্তম্ভের ভিতরে মাদকসেবিদের অভয়ারণ্যে । বিশেষ করে আম মৌসুমে এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যৌনকর্মীরা ভীড় জমায়। এর পাশেই অবস্থিত বধ্যভূমি সংলগ্ন এলাকায় এমন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়ায় উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে । তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বধ্যভূমির পবিত্রতা নষ্ট করে এলাকাটিতে অপরাধ ও অপরাধীদের স্বর্গ রাজ্যে পরিনত করা হয়েছে । রহনপুর পৌর এলাকায় যে অপরাধগুলো সংঘটিত হচ্ছে তার সবগুলোর সূতিকাগার হচ্ছে ওই বস্তি। গভীর রাতে আসা ট্রেন যাত্রীরা প্রায়ই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে।

এছাড়াও আইন প্রয়োগকারী সংস্হা অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের কাছে হেনস্তা হওয়ারও রেকর্ড রয়েছে। ঐ এলাকায় অপরিচিত কোন ব্যক্তিদের ঘোরাঘুরি করতে দেখলে তাদের জোর পূর্বক ঘরে ঢুকিয়ে বিবস্ত্র করে তাদের পালিত মেয়েদের সাথে ছবি তুলে নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ সর্বস্ব কেড়ে নেয়া হয়। তাদের খুটির জোর কোথায় ? ঐ বস্তির মহিলা-পুরুষদের এহেন কর্মকাণ্ডে এলাকার জনসাধারণের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।

বস্তিটি রহনপুরে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দর বাস্তবায়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বলে অনেকেই মনে করেন। তাদের রেলওয়ের জমি থেকে উচ্ছেদ করে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

এদিকে সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোস্তফা কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম সোনার্দি,তাহের আলি মন্টু, নজরুল ইসলাম গান্ডু বলেন বিষয়টি পূর্বের উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) অফিসারদের বারবার অবগত করা হয়েছে কিন্তু কোন সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যায়নি। নবাগত ইউএনও কে আমরা বিষয়টি এখনও জানায়নি তবে অতি শীঘ্রই বিষয়টি জানাবো।

এ ব্যাপারে গোমস্তাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ দিলীপ কুমার দাস জানান এটি বৃটিশ আমলের স্টেশন অনেক আগে থেকেই দেহ ব্যবসা, মাদক ব্যবসা ও মাদকসেবন হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে জেলে-হাজতে পাঠায় আবার ছুটে এসে পূর্বের মত কাজ শুরু করে। ইদানিং এমন কর্মকান্ড সেখানে অনেক কমে গেছে আর মাঝেমধ্যে ওই বস্তিটিতে আইনশৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকে বলে তিনি জানান।

এ বিযয়ে নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি নতুন এসেছি বিষয়টি কিছুটা জেনেছি এবং আপনার কাছ থেকে বিস্তারিত জানলাম। আমি প্রশাসন,পুলিশ, বিজিবি,এলাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বসে আলোচনা করে আন্তরিক ভাবে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্হা গ্রহন করবো।

পত্রিকা একাত্তর/ইয়াহিয়া খান রুবেল

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news