রহনপুরে রেলবন্দরের দাবীতে আন্দোলন তুঙ্গে

স্টাফ রিপোর্টার, গোমস্তাপুর

১ এপ্রিল, ২০২২, ২ years আগে

রহনপুরে রেলবন্দরের দাবীতে আন্দোলন তুঙ্গে

দেশের ২য় বৃহত্তম রেলওয়ে স্টেশন চাঁপাই নবাবগঞ্জের রহনপুরকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দর স্থাপনে প্রধান বাঁধা অবৈধ দখলদারদের অপতৎপরতা সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। রহনপুর রেলস্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দর করার দাবিতে এলাকাবাসীর আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন অবৈধ দখলদার চক্র নানা তৎপরতা শুরু করেছে। অবৈধ দখলদারগন তাদের দখলে থাকা রেলওয়ের শত শত বিঘা জমি রক্ষা করতে “রক্ষা কমিটি” নামে একটা কমিটি তৈরি করে বন্দর বিরোধী নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে কয়েকটি গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

রেলবন্দর বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক নাজমুল হুদা খান রুবেল জানান, প্রায় ৩০ বছর পূর্বে শুরু হওয়া রহনপুর-সিঙ্গাবাদ রেল রুট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত- নেপালের সীমান্ত বানিজ্য এখনো চালু রয়েছে। এই রেল রুটকে ত্রিদেশীয় বাণিজ্যের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। রহনপুরের বন্দর এলাকায় অবৈধ দখলদারদের কারণে একে পূর্ণতা দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে জায়গা অবৈধ দখলে থাকার কারণে রেল কর্তৃপক্ষ এখানে রেলবন্দরের পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারেনি। এ কারণে এখানে আমদানিকারকরা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পাচ্ছেন না।

রেল কর্মকর্তারা জানান, এ রেলরুটকে ঘিরে নানা পরিকল্পনা রয়েছে। ভারতের সিঙ্গাবাদ রেল রুট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল ট্রানজিট দেয়ার পর থেকেত্রিদেশীয় বাণিজ্যের দ্বার উম্মোচিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে গত বছর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেপালের সঙ্গে থাকা ট্রানজিট চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু যাকে নিয়ে এত কিছু সে রেলস্টেশনের অবকাঠামোর কোন উন্নতি হয়নি বরং দিন দিন রেলের জমি গুলো চলে যাচ্ছে দখলদারদের হাতে। দখলদারদের অপতৎপরতায় রেলওয়ের শত শত বিঘা জমি দখলমুক্ত হচ্ছে না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও অবৈধ দখলদারদের বাঁধার কারণে উচ্ছেদ করতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ভারত-বাংলাদেশ চেম্বারস এর জয়েন্ট সেক্রেটারি আবদুল ওয়াহেদ জানান, গত ২০০৮ সালে তৎকালীন সরকার এ রেলওয়ে স্টেশনকে আরো উন্নত করতে উদ্যোগ নিলেও এখন পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে এখন এ রেলওয়ে স্টেশনের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে এবং রাজস্ব আয় আগের চেয়ে বেশি। সুতরাং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

পশ্চিম রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে রহনপুর রেল স্টেশন এর আশেপাশের এবং ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট শিবরামপুর পর্যন্ত ৩৭৮.৮৮ একর সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে ১৪৭.৮৪ একর রেলের জায়গা দখলে রয়েছে। বাকি জমির মধ্যে প্রায় ২৩৪ বিঘা জমি অবৈধ দখলদারদের হাতে রয়েছে। রহনপুর রেলওয়ে ষ্টেশন পশ্চিম পাশে সংলগ্ন আম বাজার এবং পূর্ব দিকে দৈনিক বাজার বসিয়ে রহনপুর পৌরসভা লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করছে। বিষয়টি নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ পৌরসভাকে কয়েকবার আইনি নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু এর কোনো সুরাহা হয়নি।

এদিকে দখলদারদের মধ্যে কেউ কেউ নামমাত্র লিজ নিয়ে রেখেছে। কিন্তু লিজ নেয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের লিজকৃত নির্ধারিত জায়গা ছাড়া অতিরিক্ত জায়গা অবৈধ ভাবে দখলে রেখেছে। সেখানে বাড়ি, মার্কেট নির্মাণ সহ বিভিন্ন কাজে রেলের জমি ব্যবহার করছে। এতে করে রেলওয়ে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

রহনপুর স্টেশন বাজার ব্যবসায়ী নেতা আশরাফুল ইসলাম, ঔষধ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হোসেন, জামায়াত নেতা সানোয়ার হোসেন, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম তুহিন ও যুবদল নেতা সাইফুল ইসলাম ডাবলু, তেল ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম সহ অনেকেই রহনপুর স্টেশন বাজার এলাকায় রেলের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে লক্ষ-লক্ষ টাকায় পজিশন বিক্রয়সহ বছরে কয়েক লক্ষ টাকা ভাড়া আদায় করছে। এছাড়াও টিনের ছাউনি করে সবজি আড়ৎ বসিয়ে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা ভাড়া আদায় করছে।

এদিকে রহনপুর কলেজ মোড় এলাকায় আশরাফুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমান হবি রেলের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করেছেন। রেলের জায়গায় এম এম ফুড নামে একটি বেকারি কারখানা নির্মাণ করেছেন ব্যবসায়ী জাকির হোসেন। তাছাড়া রেলের জমিতে অসংখ্য বাড়িঘর রয়েছে। প্রায় শতাধিক আমের আড়ৎ রয়েছে। এদিকে রেলওয়ের জায়গা দখল করে রীতিমতো একটি পাড়া গড়ে উঠেছে। যা কেডিসি পাড়া নামে পরিচিত। এ কেডিসি পাড়ায় অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। প্রতিনিয়ত এখানে মাদক কেনাবেচা হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। অথচ এখানে স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরনে বধ্যভূমি রয়েছে।

রেলের জমি যাদের দখলে রয়েছে তাদের সাথে কথা বললে তারা রেলের জমি অবৈধভাবে দখল নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তারা বলেন নিয়ম মেনে তারা লিজ নিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে যে প্রতিবছর নবায়ন করার কথা থাকলেও নবায়ন করাহয় না। অবৈধ দখলদারদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায় রেলবন্দর স্থাপন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করলে প্রয়োজনে তারা রেলের জায়গা ছেড়ে দেবেন।

এ বিষয়ে কথা হয় রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেট নুরুজ্জামানের সাথে। তিনি জানান, লীজকৃত জায়গাগুলো প্রতিবছর নবায়ন করার কথা থাকলেও কখনো কেউ ঠিকমতো নবায়ন করে না। তাছাড়া রেলের জায়গা ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বারবার উদ্যোগ নেয়া হলেও স্থানীয় দখলদারদের বাঁধার কারণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

রেলবন্দর বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে বর্তমানে রহনপুর সহ গোমস্তাপুর-নাচোল-ভোলাহাট এ তিন উপজেলার মানুষ নিয়মমাফিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে আসছে। তাছাড়া তারা ইতিমধ্যে রেলমন্ত্রী, রেল সচিব, রেলওয়ের মহাপরিচালক, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকসহ অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবর আবেদন জমা দেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে তাদের স্বাক্ষরিত আবেদনও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেয়া হয়েছে। অত্র এলাকার মানুষ রেলওয়ের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করে রেলবন্দর বাস্তবায়নে সরকারের ঘোষণার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। এটি এলাকাবাসীর দাবী নই অধিকার।

পত্রিকা একাত্তর/ ইয়াহিয়া খান রুবেল

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news