সোনালী ব্যাংক শাখার বিরুদ্ধে বাড়তি লেনদেন ও ঘুষের অভিযোগ প্রশাসন নিরব

উপজেলা প্রতিনিধি, সুন্দরগঞ্জ

২২ মার্চ, ২০২২, ২ years আগে

সোনালী ব্যাংক শাখার বিরুদ্ধে বাড়তি লেনদেন ও ঘুষের অভিযোগ প্রশাসন নিরব

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ সোনালী ব্যাংক শাখার বিরুদ্ধে টাকা ছিনতাই, গ্রাহক এর সাথে বাড়তি লেনদেন, ঘুষ ও গ্রাহকের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগ উঠেছে।

গত ০৬-০৩-২০২২ইং তারিখে সোনালী ব্যাংক শাখায় বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন ফলগাছা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী স্ত্রী সালেহা বেগমের স্বামীর পেনশনের ১৮,০০০ টাকা উত্তোলন করলে এক যুবক এসে সে ছেড়া ফাটা ও গুনে দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এরকম ঘটনা এই ব্যাংকে কয়েকদিন পরপর ঘটে থাকে। এই ঘটনা শুনে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক ব্যাংকের ভেতর প্রবেশ করে সালেহা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।

এ ব্যাপারে ব্যাংকের ম্যানেজার জ্যোতিসময় সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন সালেহা বেগম থানায় অভিযোগ করলে আমরা পরবর্তীতে বিষয়টি দেখব বলে। সালেহা বেগম সারাদিন ব্যাংকে অপেক্ষার পর কোন সমাধান না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বিকেলে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে অশ্রুভেজা চোখে বাড়ি ফিরে যান। এই ঘটনার তথ্য জানতে এসে ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহকরা তাদের পার্সোনাল লোনের ব্যাপারে ঘুষ, বাড়তি লেনদেন, হয়রানি ও খারাপ আচরণের কথা আমাদেরকে জানান। পরে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা নিরুপায় হয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আল- মারুফ এবং সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিস গাইবান্ধা শাখার ডিজিএম মতিয়ার রহমান বরাবর ০৬-০৩-২০২২ ইং তারিখে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।সোনালী ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহকদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক শাখায় ভুক্তভোগী গ্রাহকরা পার্সোনাল লোনের জন্য আবেদন করতে এলে ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার সানোয়ার প্রামানিক পার্সোনাল লোনের ফরম বাবদ ২০০/৩০০ টাকা, সিআইবি চার্জ বাবদ ৬০০/৭০০ টাকা নেন। পরবর্তীতে সেই পার্সোনাল লোনের আবেদন ফরম জমা দিতে গেলে আবারো গ্রাহকের নিকট থেকে ২০০ টাকা নেন। এ ব্যাপারে ব্যাংক ম্যানেজার জ্যোতিসময় সরকারকে বারবার মৌখিক অভিযোগ করেও কোন প্রকার সুফল পায়নি। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১০-০২-২০২২ইং তারিখে সিআইডি চার্জ জমা দিলেও তার রিপোর্ট এখন পর্যন্ত পাইনি।২ দিন/৩ দিন পরপর ব্যাংকে ম্যানেজার জ্যোতিসময় সরকার এবং লোন অফিসার সানোয়ার প্রামানিক দায় সাড়া জবাবে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের একেক জনকে একেক রকম কথা বলেন।

লোন অফিসার বলেন আমরা সিআইবি রিপোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছি। আবার কাউকে বলেন, আমরা সোনালী ব্যাংক হেড অফিসে পাঠিয়েছি। এই রিপোর্ট আস্তে ছয় মাস সময়ও লাগতে পারে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ এবং ভয়-ভীতি দেখান। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে জানান, আমরা উপঢৌকন দিতে পারছিনা জন্য আমাদেরকে এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ কপি ভিডিও সাক্ষাৎকার অসংখ্য অডিও রেকর্ড ঘুষ বাড়তি লেনদেনের বিষয়টি আমাদের মুঠোফোনে রেকর্ড রয়েছে। ভুক্তভোগীদের এই অভিযোগ গত ০৮-০৩-২০২২ তারিখে বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এভাবে চলে যায় চারদিন। পরে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে মুঠোফোনে বিষয়টি অবগত করলে তিনি অভিযোগ কপি ভিডিও এবং প্রকাশিত পত্রিকার পেপার কাটিং চাইলে সেগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আমি এ বিষয় নিয়ে গাইবান্ধা সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলবো এবং প্রয়োজনে সোনালী ব্যাংক হেড অফিস এর সাথে কথা বলবো বলে জানান। এ বিষয়ে গাইবান্ধা সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিস ডিজিএম মতিয়ার রহমানের নিকট মুঠোফোনে মতামত জানতে চাইলে বলেন, ভাই এলাকাটা আপনাদেরই আপনারা এই বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন। বিষয়টি আমি দেখতেছি।

এদিকে গত ১৬-০৩-২০২২ইং তারিখে মনিরাম দাখিল মাদ্রাসা সহকারী শিক্ষক মুঠোফোনে নুর আলম মিয়া জানান, ভাই কি বলবো দুঃখের কথা আমি এবং আমার বন্ধু মাহবুর রহমান দুইজনে সিআইবি চার্জ বাবদ আব্দুর রাজ্জাক পিয়নকে ৩৬০০ টাকা নগদ দিয়েছি, সেই সাথে লোম দ্রুত করার জন্য ১০০০০ করে দুইজনে ২০০০০ টাকা ঠিক করেছি বাকি ২০০০০ টাকা যেদিন ক্যাশ হবে সেদিন দেব এই চুক্তি করার তিন দিনের মধ্যে আমাদের লোন পাস হয়ে যায়। আমি প্রশ্ন করলে তখন তিনি বললেন ভাই দুই মাস হয়ে গেল ফাইল জমা দিয়েছ কোন কাজ হচ্ছে না তাই। কিন্তু আমার বন্ধু সহকারী শিক্ষক নিকট থেকে ১০০০০ টাকার জায়গায় ১৪০০০ টাকা নিয়েছে এবং আমার কাছেও ১৪০০০ টাকা দাবি করতেছে আমি ভয়ে ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলতে পারছি না আমি তখন তাকে প্রশ্ন করি এই টাকা কে নিতে বলেছে আমার প্রশ্ন সহকারি শিক্ষক নুর আলম বলেন এই টাকা ভিতরে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দিতে হয় বলে জানান। শুধু তাই নয় আব্দুর রাজ্জাক আজ আমার বাড়িতে রাত বারোটার সময় এসে আমার ঘরের জানালা ধাক্কা মেরে একটা পাললা ভেঙ্গে ফেলেছে টাকার জন্য। এমন ঘটনা শুনে সাংবাদিক আবারো ম্যানেজার জ্যোতিসময় সরকারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি জানিনা বলে জানান। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম এই আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ এর আগে আপনাকে বলেছি সে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ব্যাংক এবং ব্যাংকের আশেপাশেই থাকে আর আপনাদের ব্যাংক কর্মকর্তার কথা বলে গ্রাহকদের কাছে টাকা নেয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, আমি নিষেধ করেছি তারপরও যদি ব্যাংকে আসে আমি কি করবো বলে জানান।

পত্রিকা একাত্তর / মোঃ হযরত বেল্লাল

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news