প্রচারনার অফিস ভেঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর উপর দোষ চাপানোর অভিযোগ

পত্রিকা একাত্তর

পত্রিকা একাত্তর

৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ২ years আগে

প্রচারনার অফিস ভেঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর উপর দোষ চাপানোর অভিযোগ

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে চাপে রাখতে এবং স্বার্থ হাসিলের জন্য সাভারের পাথালিয়ায় নিজেই নিজেদের নির্বাচনী অফিস ভাঙার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী পারভেজ দেওয়ানের কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

বুধবার(২৯ ডিসেম্বর) রাতে পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় এই ঘটনা ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

ঘটনাস্থল ঘুরে জানা যায়, আগামী ৫ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পাথালিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান আবারও নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতায় লড়ছেন। অন্যদিকে পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন স্বতন্ত্র হয়ে আনারস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোয়াজ্জেম হোসেন নৌকা মার্কার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিলেকশনেও তিনি এগিয়ে ছিলেন,কিন্তু অজানা কারণে তাকে নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এদিকে নৌকার চেয়ে আনারসের জনপ্রিয়তা বেশি হওয়ার আশঙ্কায় চেয়ারম্যান প্রার্থী পারভেজ দেওয়ান। নৌকার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনকে চাপে রাখতে নৌকার অফিস ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিদ্রোহী প্রার্থীর উপরে অভিযোগ আনা হয়েছে।

স্থানীয় ভোটার মোজাফফর হোসেন (ছন্দনাম) জানান, আমি তিন নং ওয়ার্ডের ভোটার। আমাদের এলাকায় মোয়াজ্জেম হোসেন বেশ জনপ্রিয়। তার জন্য আমরা আমাদের ভোট উৎসর্গ করবো। তিনি অত্যন্ত ভালো লোক। কিন্তু তার জয় নিশ্চিত জেনে তার সমর্থক ও আমাদের মত সাধারন ভোটারদের উপর নৌকার সর্মথকরা চাপ সৃষ্টি করছে। তারা বলছে আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে কোন ভোটারকে নৌকা মার্কা ব্যতীত ভোট দিতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ দিতে চায় তার হাড় হাড্ডি ভেঙ্গে দেওয়া হবে। আজীবনের জন্য পঙ্গু করে মোয়াজ্জেমের ঘাড়ে উঠিয়ে দেওয়া হবে। দেখি কার এত বড় সাহস হয়!

স্থানীয় ভোটার রমজান আলী (ছন্দনাম) জানান, বুধবার রাতে আমরা চারিগ্রাম এলাকার স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনের নির্বাচনী ক্যাম্পে বসেছিলাম। অফিসের নিয়মিত কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন মোয়াজ্জেম হোসেনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ। তারা আসার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করেই তাদের ওপর চড়াও হয় নৌকার সমর্থকরা। এ সময় তাদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয়। এতে প্রতিবাদ করলে ক্যাম্প পরিচালনায় দায়িত্বরত মিজান এবং জুলহাসের উপর হামলা করা হয়। একদল দুর্বৃত্ত এসে নির্বাচনী ক্যাম্পে থাকা সবাইকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এতে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ আসার পর দোষ এড়াতে তাদের নির্বাচনী অফিস ভেঙ্গে ফেলে অগ্নিসংযোগ করে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো ৩ নং ওয়ার্ডে মোয়াজ্জেম হোসেনের আনারস প্রতীকের নির্বাচনী অফিস ১ টি অন্যদিকে পারভেজ দেওয়ানের নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস ৩ টি। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা তাদের নির্বাচনী অফিস গুলো ভেঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেয়।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী পারভেজ দেওয়ানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার নিকটতম একটি সূত্র নিউজে তার নাম না বলার শর্তে জানিয়েছে, পারভেজ কাকা এখন ভেজালে আছে, পরে ফোন দিয়েন।

মোয়াজ্জেম হোসেনের অফিস ভাঙার ঘটনা ও তার লোকজনের উপর হামলার পর নিজের অফিস ভাঙ্গার অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রশ্ন করা হলে ওই সূত্রটি জানিয়েছে এখন আমি কিছু মন্তব্য করব না তবে তারা এলাকায় থাকতে পারে কিনা আগে দেখেন।

নির্বাচনী অফিস ভাঙ্গার ব্যাপারে মোয়াজ্জাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চারিগ্রামের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। বর্তমানে দুইজন চিকিৎসাধীন আছেন।

আপনার বিরুদ্ধে নৌকার অফিস ভাঙ্গার অভিযোগ আনা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মিথ্যা আল্লাহ সহ্য করেন না। এসব আমাকে চাপে রাখতে এবং আমার সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্য করা হচ্ছে, এসব রাজনৈতিক চাল। আমার সাথে কোন লাঠিয়াল বা সন্ত্রাসের সখ্যতা নাই,যে তারা এসব কাজ করে বেড়াবে। আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ, আমাকে মানুষ ভালোবাসে এটাই আমার পাওয়া।

তিনি বলেন, আমার অফিসে হামলা হওয়ার পরপরই আমি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়েছি। আমাদের নির্বাচনী অফিস ও সমর্থকদের উপর হামলার বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে পুলিশ এসে নৌকার সমর্থকদের হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া সকলকে উদ্ধার করে। সময়মতো পুলিশ না আসলে আমার সমর্থকদের আরও বড় ক্ষতি হয়ে যেত। আমার আশংকা হচ্ছে"তবে এসব ভয়-ভীতি দেখিয়ে কোন লাভ নেই শেষ পর্যন্ত ভোটারদের নিয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকবো। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে আমি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলকে উদাত্ত আহবান জানিয়েছি ।

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) হারুন অর রশীদ বলেন, অফিসে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। দুই পক্ষের অফিস ভাঙচুরের প্রমাণ মিলেছে।

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news