স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলের অবৈধ আর্থিক চাহিদা মেটাতে না পারায় মাসের পর মাস ছেলের মানসিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীর ভিটে ছেড়ে একাধারে ৭ বছর বৃদ্ধা বিধবা একাকী অসহায় জীবনযাপন করছেন।
নীলফামারী ডোমার উপজেলা মাদ্রাসাপাড়ার মৃত এমএ রব্বানি এর স্ত্রী মোছাঃ খাদিজা খাতুন (৬৫) ১৬মার্চ (বুধবার) তার ছেলে আনোয়ার পারভেজ রনি (৪৫) এর বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ করেছেন। ডোমার সদর ইউপির চেয়ারম্যানের কাছে করা ওই আবেদনে তিনি সমস্যার সমাধান পূর্বক দ্রুত তাকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানিয়েছেন।
অভিযোগে বৃদ্ধা খাদিজা খাতুন উল্লেখ করেন, পহেলা নভেম্বর ২০১৪ সালে আমার স্বামীর বার্ধক্যজনিত কারনে ইন্তেকালের পর স্বামীর সম্পত্তি অর্থ সম্পত্তি তদারকি আমি নিজেই করতাম। একটা সময় আমার ছেলে আনোয়ার পারভেজ রনি তাঁর ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটানোর জন্য মোটা অঙ্কের টাকার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করে। তার আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে আমি নারাজ হলে আমার ছেলে রনি একের পর এক মানসিক ভাবে আমাকে নির্যাতন করে এবং যত দিন যায় আমার সাথে তার সমস্যা বেড়েই চলে। এমতবস্থায় আমি ছেলের বাড়ি ত্যাগ করে আমার আত্মিয়ের বাসায় অবস্থান করা শুরু করে দেই।
আমি ছেলের বাসা ত্যাগ করার পর পরই আমার ছেলে আমার স্বামী এবং আমার নামীয় সম্পত্তি একের পর এক আমাকে অবগত না করেই অনেক জমি অন্যের নিকট বন্ধক প্রদান করে এবং জমি বন্ধকের প্রচুর পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। একপর্যায়ে আমি জানতে পারলে আমার ছেলে বিভিন্ন লোক মারফত বলে যে, “আমার বাবা মৃত্যুর আগে সব সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিয়েছে” যা সম্পূর্ণভাবে অসত্য কথা।
আরও উল্লেখ করেন, অপরদিকে আমার নামীয় সকল (প্রায় ২৫ বিঘা) সম্পত্তি অন্যের দ্বারা দখল করে। পরবর্তীতে আমি জানতে পারি জমিগুলো ডোমার সদর ইউনিয়নের নবারপাড়ার আজিজার (কেন্দেলু) এর ছেলে মোঃ একরামুল, মোটাই মুন্সির ছেলে মোঃ মিজানুর, মোঃ হামিদুর এর ছেলে মোঃ আমিনুর, মৃত হোলা এর ছেলে মোঃ জিয়া, আব্দুল বাকি এর ছেলে মোঃ করিমুল, মৃত হামিদুর এর ছেলে মোঃ সেলিম, নালচন এর ছেলে মহিদুল, মৃত কাছিম এর ছেলে সাত্তার, মৃত ঢেপু এর ছেলে মোঃ রেজা বর্গা হিসেবে চাষ করার কথা বলে দখল করে আছে। এবং ডাক্তার পাড়া (চওরার বিল) এলাকার মৃত সফের আলীর দুই ছেলে আতিয়ার ও ওবাইদুল এবং মোঃ কবীর এর স্ত্রী জেসমিন আক্তার কিছু জমি দখল করে আছেন। সেই জমির ফসলের ভাগ জোরপূর্বক ভাবে আমার ছেলে আদায় করে এবং আমাকে সম্পূর্ণরূপে ফসলের ভাগ হতে বঞ্চিত করে।
অশ্রুভেজা চোখে বৃদ্ধা সংবাদকর্মীকে বলেন, এত সম্পত্তি থাকার পরেও আমি অসহায়। বর্তমানে আমি বয়সের ভারে শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ। অনেক সময় অসুস্থ্য অবস্থায় ঘরের ভিতর একাই পরে থাকি খোজ নেয়ার মতো কেউ থাকেনা। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা করতে পারছিনা, বর্তমান আমার খাওয়া-খরচ আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায় চালিয়ে আসছি। ইতিপূর্বে আমার সমস্যাগুলো নিয়ে আমি ও আমার মেয়ে মোছাঃ রাফিউ রুবাইয়া জাহান (রিম্পা মনি) (৩৫) সহ আত্মীয়স্বজন ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিকট একাধিকবার সমাধানের চেষ্টা করলে তাতেও ব্যর্থ হই। নিজ ভাইয়ের এমন আচরণের কারনে আমার মেয়ে রিম্পা মনিও পৈতৃক সম্পত্তি হতে বঞ্চিত। ১৬ মার্চ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি আমার সকল সম্পত্তি দখল মুক্ত ও জীবনের শেষ সময়টা আমার স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়িতে সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকতে চাই।
বৃদ্ধার ছোট নেয়ে রিম্পা মনি সংবাদকর্মীকে মোবাইলে জানান, ২০১৪ সালে আমার বাবার মৃত্যুর পর থেকেই আমার ভাই আনোয়ার পারভেজ রনি আমার মায়ের সাথে খারাপ আচরন করেই যাচ্ছে, একপর্যায়ে এতো বেশী খারাপ আচরন করে যে আমার মা ওই বাসা ত্যাগ করে আমার মায়ের বোনের ছেলের বাসায় গিয়ে উঠে। পরে আমার নানার জমিতে ঘর তুলে সেখানে ৭ বছর থেকে বসবাস করছে। অপরদিকে আমার ভাই রনি আমার বাবা-মা ও আমার নামীয় সম্পত্তি আমাদের বঞ্চিত করে নিজেই ভোগ দখল করে খাচ্ছে এবং আমাদের জমির বর্গাচাষীদের সাথে ফসলের ভাগ চাইতে গেলে তারাও আমার মাকে ফসলের ভাগ দেয়ার পরিবর্তে বলে “মায়ের সম্পত্তিতে ছেলে অধিকার বেশী” একথা বলে ফসলের ভাগ না দিয়ে আমার মা কে বার বার ফিরিয়ে দেয়। অনেকবার আত্মীয়-স্বজন সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করলে তাতেও কাজ হয়নি।
তিনি আরোও বলেন এবার আমাদের সমস্যা্সমূহ উল্লেখ করে ডোমার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। আমরা আসাবাদী চেয়ারম্যান মহাদয়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাবো এবং আমাদের সব সম্পত্তির সমস্যা সমূহ সমাধান করে আমার মাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে তিনি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে আনোয়ার পারভেজ রনির সাথে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নারাজ এবং একপর্যায়ে বলেন, "আমার মা চেয়ারম্যানকে অভিযোগ দিয়েছে, সালিশে দুপক্ষের উপস্থিতিতে তারা বিচার করবে কে দোষী আর কে নির্দোষ তখন প্রমান হবে।"
এ ব্যাপারে ডোমার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আহমেদ বলেন, আমরা খাদিজা খাতুন নামের এক বৃদ্ধার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের উদ্দেশ্যে খুব দ্রুত দুপক্ষের উপস্থিতিতে বসা হবে।
পত্রিকা একাত্তর/রিশাদ