নড়াইলে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় পরাজিত ইউপি
চেয়ারম্যান প্রার্থী বহিস্কৃত ইউপি সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সাবেক
চেয়ারম্যান বিতর্কিত উজ্জ্বল শেখকে আটক করা হয়েছে। পরে বুধবার (১৬
মার্চ) দুপুরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাত ১১টার দিকে
তাকে সদরের গোবরা এলাকার বাড়ি থেকে আটক করা হয়। এদিকে উজ্জ্বলকে আটকের
প্রতিবাদে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নড়াইল শহরের কয়েক’শ মানুষ উপজেলা
পরিষদের সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন শুরু করলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ তারা
ফিরে যায়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) রাতে সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নে
গোবরা সাহা পাড়ায় বাংসরিক নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে নড়াইল
পৌর মেয়র আজ্ঞুমান আরা, সাহা পাড়ার প্রবীন বাসিন্দা সমাজসেবক প্রকৌশলী
শৈলেন্দ্রনাথ সাহা,স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখ উপস্থিত
ছিলেন। এক পর্যায়ে উজ্জ্বল শেখ মঞ্চে উঠে বক্তব্য দেওয়ার সময় বিভিন্ন কথা
বলার ফাঁকে বলে ওঠেন “এখানে হিন্দুদের জন্ম আজন্ম পাপ”। পরবর্তীতে
শৈলেন্দ্রনাথ সাহা বক্তব্য দেওয়ার সময় এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন,
এদেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি। এদেশে আমরা বড়ো বড়ো চাকরি করছি। আর ভারতে
গেলে হয়তো আমরা পিওন হতাম, এদেশে স্ব অধিকার নিয়ে বেঁচে আছি। এ সময়
উজ্জ্বল শেখ অনুষ্ঠান স্থলে তার সাথে তর্কে লিপ্ত হয় এবং ইউপি নির্বাচনে
নৌকা প্রতিকের কাছে পরাজিত হবার পেছনে শৈলেন্দ্রনাথসহ স্থানীয় অনেকের নাম
বলেন এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এ ঘটনার পর ১১টার দিকে সদর থানা পুলিশ
উজ্জ্বলকে বাড়ি থেকে আটক করে। এদিকে বুধবার সকালে উজ্জ্বলের লোকজন এলাকায়
মাইকের মাধ্যমে উজ্জ্বলকে ছাড়ানোর জন্য নড়াইল শহরে আসার জন্য চাপ দিতে
থাকে এবং কয়েক’শ লোক শহরে জড়ো হয়।
এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখ বলেন, আমি একজন
অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। উক্তিটি কোন খারাপ উদ্যেশ্য নিয়ে বলিনি।
কথাটির অর্থ না বুঝে বলে ফেলেছি।
সদর থানার ওসি শওকত কবির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উজ্জ্বল শেখের
উক্ত বক্তব্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠনে উপস্থিত সবার মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভের
সৃষ্টি হয়। বিষয়টি যাতে আর বেশী দূরে না গড়ায় সেজন্য তাকে আমরা আটক
করেছিলাম। পরে উজ্জ্বল শেখ সদর থানায় প্রকৌশলী শৈলেন্দ্রনাথ সাহা ও এসপি
প্রবীর কুমার রায়ের কাছে ভুল স্বীকার করলে তাকে দুপুর ২টার দিকে মুক্তি
দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ১১ নভেম্বর নড়াইলের সিঙ্গাশোলপুর ইউপি নির্বাচনে নৌকা
প্রতিকের পক্ষে কাজ করায় পরাজিত প্রার্থী উজ্জ্বল শেখ ও তার লোকজন ১৪
নভেম্বর সিঙ্গা বাজারের ব্যাবসায়ী সানোয়ারকে দোকানে ঢুকে বেধড়ক পিটিয়ে
আহত করে। ৪ ডিসেম্বর গোবরা বাজারের ধান-পাট ব্যবসায়ী আনোয়ার মোল্লার
দোকান থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ছিনতাই করে দু’পা ভেঙ্গে দেয়। ১৪ ডিসেম্বর
গোবরা প্রগতি বিদ্যাপিঠের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি ও ইউনিয়ন আ’লীগের দপ্তর
সম্পাদক মিশকাত হোসেনের ডান হাত ও ডান পা ভেঙ্গে দেয়। এছাড়া ১৫জন স্থানীয়
আ’লীগ নেতা-কর্মীকে দেখে নেওয়ার জন্য একটি তালিকাও করা হয়। এসব ঘটনায় সদর
থানায় একাধিক মামলা হয়েছে।
পত্রিকা একাত্তর / হাফিজুল নিলু