রাণীশংকৈল হাসপাতালে সেবার মান নিয়ে রোগীদের অভিযোগ !

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি

২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ২ years আগে

রাণীশংকৈল হাসপাতালে সেবার মান নিয়ে রোগীদের অভিযোগ !

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। যার অধিকাংশ শিশু। চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুদের বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। নতুবা ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখা বাড়বে।

সন্ধ্যা হতেই কনকনে ঠান্ডা জানান দিচ্ছে পৌষের দাপট। দিনে সূর্যের তাপে ভোগান্তি কিছুটা কমলেও বিকেল থেকে শীতের তীব্রতা শুরু হয়। বাধ্য হয়ে ঘরমুখী হতে হচ্ছে সবার। তবে জীবিকার তাগিদে ঠান্ডা উপেক্ষা করেই কাজ করতে দেখা যাচ্ছে কৃষক ও দিনমজুরদের। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে রোগী।

রাণীশংকৈল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যার মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৬ ডিসেম্বর ৭ জন শিশুসহ ১২ রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। গত ২ সপ্তাহে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০-এ। যার মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ছিল ৫০ জনের মত । আর বুধবার (২৯ডিসেম্বর) সকাল ১১পর্যন্ত ৫ শিশুসহ ৭ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসাধীন ছিল।

রানীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া ছাড়াও নিউমোনিয়া কাশি শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিনিয়ত শিশু বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া এবং ঔষধপত্র হাসপাতালে সরবরাহ না থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে।

রোগীর স্বজনদের দাবি ডায়রিয়া রোগীদের সঠিকভাবে খাওয়ার স্যালাইন সহ অনান্য কোন ট্যাবলেট ক্যাপসুল দেওয়া হয়না। এতে করে গরীব অসহায় রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। পরিছন্নকর্মীরা হাসপাতালের ফ্লোর পরিষ্কার না করারও অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী রোগীরা। রোগীদের অভিযোগ হাসপাতালের বাথরুম ও ফ্লোরগুলোর ময়লার দুর্গন্ধে থাকা অনেক কষ্টকর ।

রোগীদের খাবারের মান নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ, বয়লার মুরগীর মাংস দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও প্রতিনিয়ত তা দেওয়া হচ্ছে। সরেজমিনে গেলে দেখা যায় রোগীদের বয়লারের মাংস, চালকুমরার ঝোল আর মোটা চালের ভাত দেওয়া হচ্ছে।

রাণীশংকৈল ৫০ শয্যা হাসপাতালে বর্তমানে ১১ জন ডাক্তার রয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের হাসপাতালে না থেকে বেশিভাগ সময় প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তোভোগী রোগীরা।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ক্ষুদ্র বাঁশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সুমন পাটোয়ারি বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। অবকাঠামো অনুযায়ী উপকরণ নাই, অনেক মেশিন অচল হয়ে পড়ে আছে। ডাক্তার থাকে না, গেলে কোনো সেবা পাওয়া যায় না।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি থাকায় মেজর অপারেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিকেল কর্মকর্তা থাকলেও কোনো সার্জন ও গাইনোকোলোজিষ্ট না থাকায় মেজর অপারেশন ও সিজারের জন্য রোগীদের জেলা শহরে ছুটতে হয়।

এক্স-রে মেশিন নষ্ট এবং মেশিন থাকার পরও সনোলোজিষ্ট ও ইসিজি অপারেটর না থাকায় রোগীদের এ পরীক্ষাগুলো বাইরে করাতে হচ্ছে। ফলে রোগীদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ। শুধু তাই নয়, ঘাটতি আছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বেলাতেও। জনবল কম থাকায় ব্যাহত হচ্ছে সেবার মান। একাধিক পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র একজন। ফলে হাসপাতালের পরিবেশ অধিকাংশ সময় নোংরা ও অপরিষ্কার থাকে।

রোগীদের নিন্মমানের খাবার দেওয়ার বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুস সামাদ চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন খাদ‍্যের তালিকা দেওয়া আছে (আরএমও) ডা. ফিরোজ আলম আছেন তার সাথে যোগাযোগ করে মিলিয়ে দেখেন। যদি কোন অনিয়ম থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্হা গ্রহন করা হবে।

খাদ‍্য ও পথ‍্য সরবরাহের দ্বায়িত্বরত ইজরাদার হেদায়তুল্লার কাছে রোগীদের নিন্মমানের খাবার পরিবেশন ও বয়লার মাংসের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি বলেন বয়লার মুরগীর মাংস তো মানুষই খাই, সেজন্যই মাঝেমধ‍্যে সেটা হাসপাতালের রোগীদের দেওয়া হয়।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা.হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা.ফিরোজ আলম

বলেন, ‘শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের মধ্যে শিশুদের আক্রান্তের হার বেশি। শিশুদের যেন ঠান্ডা না লাগে সে বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া শিশুদের পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি দিতে হবে।’

বয়লার মুরগীর মাংস রোগীদের দেওয়া নিষেধ আছে, তবে এরকম কিছু প্রমান পেলে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। হাসপাতালের ফ্লোর বাথরুম অপরিষ্কার দুর্গন্ধে রোগীদের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন পরিছন্নকর্মীর সংখ্যা কম বলেই এই অবস্থা। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজ অর্থায়নে একজন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দিয়েছি। খুব শীঘ্রই এসব সমস্যা আর থাকবেনা।

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news