গাজীপুর কাশিমপুরের বিভিন্ন স্থানে জমি দখলের নতুন সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে শাহাবুদ্দিন ওরফে জুয়াড়ি মিন্টু(৩৫) । জুয়াই যার প্রধান ব্যবসা। জুয়া খেলে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিরীহ মানুষের জমি দখল করছে। দখল করেই বিক্রি করে দিচ্ছে অন্যত্র। এতে বিপাকে পড়ছে সাধারণ ক্রেতারা।
১৯৪৩ সাল থেকে ভোগদখলে থাকা আফতাব উদ্দিনের (৬০) জমিতে হঠাৎ করেই ঘর নির্মাণের পায়তারা শুরু করে মিন্টুগংরা। এতে বাধা দিলে বিভিন্ন প্রাণনাশের হুমকি আসে আফতাবের উপর। জুয়াসহ যেকোন কাজের ক্ষেত্রেই টাকার বিনিময়ে বাজি ধরে থাকে স্থানীয় এ জুয়াড়ি। ছোট্ট একটি দোকানের মালিক থেকে রাতারাতি জমি দখল ও জুয়া খেলে কয়েকটি বাড়ীর মালিক বনে গেছে সে।
তার মালিকানাধীন ছোট্ট দোকান থেকে টিভিতে খেলা দেখার মাধ্যমে বাজি ধরা থেকে শুরু তার জুয়ার নেশা। এরপর একসময় তার একমাত্র আয়ের উৎস দোকানটি ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন স্থানে বসাত জুয়ার আসর। কয়েকজন মিলে জুয়ার সিন্ডিকেট গড়ে তুলে হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। একসময় তিনবেলা তার ভাত না জুটলেও তিনি এখন চালান দামী মোটরসাইকেল, হাতে পড়েন সোনার বেসলেট, মালিক বনে গেছেন কয়েকটি বাড়ীর।
নামমাত্র কাগজ ক্রয় করে তারপর শুরু করে জমি দখল। মালিকবিহীন এক ব্যক্তির থেকে নামমাত্র মূল্যে জমি ক্রয় করে আফতাব উদ্দিন এর জমি দখল করে নিয়েছেন মিন্টুগংরা।
১৯৪৫ সালে ক্রয়কৃত আফতাব উদ্দিনের দখলকৃত কাশিমপুরের সারাব মৌজাস্থিত SA- ১০২,১০৪ নং RS-১৮,১০৮ নং খতিয়ানভূক্ত SA- ৫০৭ নং RS-৭৭০ নং দাগে ১০ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা করছে জুয়াড়ি মিন্টু ও তার বাহিনী।
ভূমিদস্যুদের দখল ঠেকাতে আদালতের আশ্রয় নিয়েও রেহাই পাচ্ছে না আফতাব উদ্দিনরা। বিজ্ঞ জেলা জজ আদালত, গাজীপুরে প্রাপ্ত জমি চেয়ে মামলা করেন আফতাব। যার দেওয়ানি মোকদ্দমা নং ১০৪/২০১৭ (দেঃমোঃনং- ৮৫/১০ হইতে উদ্ভব)। মামলা চলমান থাকা সত্বেও মিন্টুগংরা বার বার জমি দখল করে ঘর নির্মাণের চেষ্টা করে। ঘর নির্মান ঠেকাতে নিরুপায় হয়ে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, গাজীপুর এ ১৪৫ ধারায় আবেদন করেন ৬০ বছর বয়সী এ বৃদ্ধা। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তার আবেদন মন্জুর করে, নালিশী সম্পত্তিতে ১৪৫ ধারা জারি করেন। যার পিঃমোঃ নং- ২১৬/২০২২।
গত ৭ মার্চ ২০২২ তারিখে আদেশটি কাশিমপুর থানায় পৌঁছায় এবং গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ রফিকুল ইসলাম স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মিন্টুগংদের বিষয়টি জানিয়ে নালিশী সম্পত্তিতে কোন স্থাপনা না করার নিষেধ করেন। কিন্তু নিষেধ করার সত্ত্বেও মিন্টু বাহিনী আদালতের রায়কে অমান্য করে জমি দখল করে ঘর তৈরী করে।
আদালতের আদেশ অমান্য করার বিষয়ে ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বলেন, আদালতের আদেশ অমান্য করা অপরাধ। মীমাংসার জন্য বাদীপক্ষ আমার কাছে আবেদন করলে, আমি কয়েকবার তাদের ডেকেছি কিন্তু তারা একবারও হাজির হননি।
কাশিমপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মাহবুবে খোদা বলেন, আদালতের আদেশটি পেয়েছি, পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য তদন্ত অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
মামলার বাদী আফতাব বলেন, স্থানীয় দুই-একজন প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় আদালতের আদেশকে অমান্য করে আমার দখলকৃত জমি জোরপূর্বক দখল করে ঘর তৈরী করে মিন্টু বাহিনী। যদি তারা আদালতের রায় না মানে তাহলে সাধারণ মানুষ কার কাছে সাহায্য চাইবে। জুয়াড়ি মিন্টু বাহিনীর হাত থেকে আমার জমি দখলমুক্ত চাই।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মিন্টু বাহিনীর প্রধান মিন্টুর সাথে যোগাযোগ করা চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পত্রিকা একাত্তর/ সোহাগ