নড়াইলে নবগঙ্গা নদীতে বালু কাটায় ঝুকির মধ্যে ৪ হাজার পরিবারসহ ফসলি জমি

নড়াইল জেলা প্রতিনিধি

৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ২ years আগে

নড়াইলে নবগঙ্গা নদীতে বালু কাটায় ঝুকির মধ্যে ৪ হাজার পরিবারসহ ফসলি জমি

কয়েকটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর হাচলা এলাকায় বালু কাটা হচ্ছে। এতে নবগঙ্গা নদী তীরবর্তী বড় কালিয়া, বাহিরডাঙ্গা, নাওরা এবং বাগবাড়িয়া গ্রামের ৪ হাজার পরিবারসহ ফসলি জমি ও গাছপালা ঝুকির মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো সত্বেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ।

নবগঙ্গা নদীর মাধবপাশা এলাকা থেকে বালু কাটার প্রতিবাদ করায় ২০২০ সালের ৫ আগষ্ট দেয়াডাঙ্গা গ্রামের আকবর আলী শেখের ছেলে মাসুদ রানাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল । এ সময় ৯ জন গুলিবিদ্ধ এবং ১৫ জন আহত হন। নিহত মাসুদ রানা ইসলামী ব্যাংক ফরিদপুর শাখার নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকুরি করতেন।

এ বছর একই উপজেলার সালামাবাদ ইউনিয়নের বৃহাচলা এলাকায় নবগঙ্গা নদী থেকে বালু কাটা নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। প্রতিবাদে গতকাল এলাকার মানুষ বালু কাটা বন্ধের দাবিতে বড়কালিয়া এলাকার নদীর তীরে মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধনে কয়েক’শ মানুষ অংশ নেন।

এ সময় বক্তব্য দেন কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান কৃঞ্চপদ ঘোষ,কালিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কান্সিলার অশোক কুমার ঘোষ,সাবেক কাউন্সিলর অসিত ঘোষ, গীতা রানী ঘোষ, মিতি রানী প্রমুখ।

কালিয়া উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি ) মো.জহুরুল ইসলাম বলেন,উপজেলার নবগঙ্গা নদীর সালামাবাদ ইউনিয়নে বৃহাচলা মৌজার ৯ দশমিক ৪৯ একর বালুমহল ৩ কোটি ১০ লাখ ৮ হাজার টাকার বিনিময়ে নুর ইসলাম এন্ড কোং কে একসোনা ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। বালুমহলের সীমানা নির্ধারণ করা আছে।

এলাকার মানুষের অভিযোগ প্রশাসনের নির্ধারিত সীমানার বাইরে এসে বালু কাটা হচ্ছে। দিনের বেলায় ৫ থেকে ৭টি ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হলেও সন্ধ্যার পর ২০ থেকে ২৫ টি ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হয়। এতে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

খোজ নিয়ে জানা গেছে,প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার বালু বিক্রি করা হচ্ছে। চাঁদপুর গ্রামের হাসমত মোল্যার ছেলে তাছিম মোল্যাসহ তকিবর রহমানের ছেলে বালু মহলের রশিদ লেখেন। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের হিস্যা দিয়ে বালু মহলের ব্যবসা চালাতে হয়। ঘোষ নাওরা গ্রামের বাসিন্দা গীতা রানী, মিতি রানী ঘোষ আবেগতাড়িত কন্ঠে বলেন, বর্ষাকালে নদীর তীব্র স্রোতে বাড়ি-ঘর, জমি-জমা সব কিছু নদীতে চলে গেছে। এখন আমরা ভেড়িবাঁধের ওপর বাস করছি। আমাদের বাড়ির সামনে জেগে ওঠা চরে ধান রোপন করেছি। পরিবার নিয়ে আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সন্ধ্যার পর জেগে ওঠা চরের পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে।

পৌর সভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অশোক কুমার ঘোষ বলেন, প্রশাসনের নির্ধারিত সীমানার বাইরে থেকে বালু কাটা হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ২০ থেকে ২৫ টি ড্রেজার ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন বর্ষাকালে এলাকার মানুষ ঝুকিতে পড়বে।

কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান কৃঞ্চপদ ঘোষ বলেন,বালু কাটার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করা হলেও তিনি ২/৩বা ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জরিমানা করেছেন। কিন্তু তাতে কোন ফল হয়নি।

কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আরিফুর রহমান বলেন,সরকারিভাবে বালুমহল ইজারা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। নির্ধারিত সীমানার বাইরে এসে বালু কাটা হলে তাদেরকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে।

পত্রিকা একাত্তর/ হাফিজুল নিলু

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news