নড়াইলে ৩ বছর আগে মারা গেলেও বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী সদস্য

নড়াইল জেলা প্রতিনিধি

৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ২ years আগে

নড়াইলে ৩ বছর আগে মারা গেলেও বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী সদস্য
ফাইল ছবি | পত্রিকা একাত্তর

নড়াইলের হিজলডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রধান শিক্ষক এস এম মমিনের আপন ভায়রা। মজার বিষয় হলো তিন ১৯ সালের ১৯ মার্চ তিনি আগে মারা গিয়েছেন। তিনি হচ্ছেন নড়াইল পৌরসভার উজিরপুর এলাকার আমিন সর্দার । সুজন গাঙ্গুলী নামে এক ব্যক্তি ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। তিনি ১০ মাস আগে দপ্তরী পদে চাকরি পেলেও তার ম্যানেজিং কমিটিতে নাম বাদ দেওয়া হয়নি।

নড়াইলের হিজলডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের প্রতি অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়মন ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ফলে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রতিকার চেয়ে স্থানীয়রা জেলা প্রশাসক এবং জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সদরের মুলিয়া ইউনিয়নের হিজলডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১শ ৫০জন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এস এম মমিন এখানে প্রধানশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। স্থানীয় হিজলডাঙ্গা, সিতারামপুর, বাশভিটা, ইচড়বাহা এবং দূর্বাজুড়ি গ্রামের ছেলেমেয়েরা এ স্কুলে লেখাপড়া করে। বর্তমানে ৪ বছর বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক না থাকলেও শুন্যপদের তালিকা শিক্ষা অফিসে কখনও প্রেরণ করেননি। প্রধানশিক্ষক স্কুলে ইচ্ছামতো আসে এবং চলে যায় । ফলে ঠিকমতো স্কুলে পাঠদান হয়না।

গত ৫ মাস পূর্বে প্রধানশিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে পরিচ্ছন্নকর্মী ও নৈশ প্রহরী নিয়োগের চেষ্টা করে। পরে গ্রামবাসী এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

লাইব্রেরীয়ার পদে চাকরি দেবার দেবার কথা বলে একজনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিলেও তাকে চাকরিতো দূরের কথা তার টাকাও ফেরত দেয়নি। দীর্ঘ ৩ বছর ধরে স্কুলের টিউবওয়েল নষ্ট হলেও তা মেরামত করে দেওয়া হয়না। হিজলডাঙ্গা গ্রামের মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, তার কাছ থেকে ২০১০ সালে লাইব্রেরীয়ান পদে চাকরি দেবার নাম করে প্রধানশিক্ষক ২ লাখ টাকা নিয়েও সে টাকা ফেরত দেয়নি। চাইলে তিনি সব সময় বলেছেন দেবো কিন্ত এভাবে ১২ বছর ধরে ঘোরাচ্ছেন।

হিজলডাঙ্গা গ্রামের প্রলব রায় জানান, আগামি মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারী) বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হবার কথা। নতুন কমিটি গঠনের লক্ষে গত দু’মাস আগে বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের নিয়ে প্রধানশিক্ষকের উপস্থিতিতে এক সভায় অংশ বিশ্বাস, অমিত বিশ্বাস, অনিমেশ রায়, দ্রুব শাখারি ও দিপ্তী রাণী রায়কে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনোনীত করা হলেও প্রধানশিক্ষক এই ৫জনের প্রত্যেকের কাছ থেকে নির্বাচনী খরচের কথা বলে ৩ হাজার করে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানশিক্ষকের অনিয়ম-দূর্নীতির কোনো শেষ নেই।

স্থানীয় সিতারামপুর গ্রামের অমিত বিশ্বাস জানান, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় হিজলডাঙ্গা পাগলচাঁদ মন্দিরে স্থানীয় স্কুলের চলমান সংকট নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি যতীন্দ্রনাথ মহলদার ও প্রধানশিক্ষক এস এম মমিন উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতি ও প্রধানশিক্ষক তাদের বিভিন্ন দোষ স্বীকার করে স্কুল ঠিকমতো পরিচালনা করবেন বলে সবার সামনে কথা দিলেও পরে তারা আর করেননি। সে সভায় স্কুলের দেখভালের জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি উপ কমিটি গঠন করা হলেও প্রধানশিক্ষক তাদের কোনো প্রকার গুরুত্ব দেয়নি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য অজিত কবিরাজ বলেন, গত দু’বছর ম্যানেজিং কমিটির কোনো মিটিং হয়নি এবং আমাকে ডাকা হয়নি। মাঝে মধ্যে স্কুলের পিওন বাড়িতে এসে খাতায় সই করাতে আসে। গত ৫ মাস আগে স্কুলের নিয়োগ সংক্রান্ত একটি বিষয়ে সই করাতে আসলে আমি পিওনকে ধমকও দিয়েছি।

হিজলডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক এস এম মমিন বিভিন্ন অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন আমি দু’মাস ধরে অসুস্থ। প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছি না। আপনার আপন ভায়রা আমিন সর্দারের বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে নাম আছে কিনা এ প্রশ্নে তিনি এখন সদস্য নেই, তিনিতো মারা গিয়েছেন। তাহলে বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে কে আছেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন স্বপন নামে একজন বিদ্যোৎসাহী সদস্য। স্বপনের বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ঠিক ভালো করে স্মরণ নেই,বিদ্যালয়ের ক্লার্ক বলতে পারবে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি যতীন্দ্রনাথ মহলদার বলেন, স্কুলের তেমনতো কোন অনিয়ম দেখিনা। করোনার কারনে প্রায় সময় স্কুল বন্ধ থাকে। ঠিকমতো পাঠদান হয়না। একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল তা গ্রামবাসীর হট্টগোলের কারনে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলে বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে তা মানিয়ে নিয়ে চলতে হয়।

এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান বলেন, রোববার (৬ ফেব্রুয়ারী) স্কুলের প্রধানশিক্ষক ও সভাপতি সম্পর্কে স্থানীয় গ্রামবাসীদের দেওয়া একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পত্রিকা একাত্তর/হাফিজুল নিলু

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news