পূর্ণিমার পাশাপাশি তিন দিনের ভারী বর্ষণে আমতলী-তালতলী উপজেলার আউশ ধানের ক্ষেত ও আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। পানিতে প্লাবিত হয়ে দুই উপজেলার ৫০ হাজার কৃষকের চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে আমনের বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
জানা গেছে, পূর্ণিমার প্রভাবে পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলীয় অঞ্চল আমতলী ও তালতলীর চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চলের বসবাসরত মানুষজন অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে।
দুই উপজেলার ৫০ হাজার কৃষকের চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন গ্রামের আমনের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। পশ্চিম গাবতলী আবাসনের আবদুল রশিদ বলেন, পানিতে ঘর তলাইয়্যা গ্যাছে।
গুড়াগারা লইয়্যা কষ্ট হরি।’ উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের শিবলী শরীফ বলেন, আউশ ধানের ক্ষেত ও আমনের বীজতলা পানির নিচে। কৃষকদের জমি চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সি এম রেজাউল করিম বলেন, ভারী বর্ষণে কৃষিজমি তলিয়ে যাওয়ায় আপাতত চাষাবাদ বন্ধ থাকলেও কৃষকদের অনেক উপকারে আসবে। পানি সরে গেলে আমনের বীজের ক্ষতি হবে না।
এদিকে পায়রা নদীতে তীব্র জোয়ারে আমতলী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। এতে নারী ও শিশুসহ সবাই কোমর সমান পানির মধ্যে দিয়ে তীরে উঠছেন। কেউ বা আবার ফেরিতে উঠছেন। কখনো কখনো স্থানীয়রা তাদের নৌকা দিয়ে তীর থেকে গ্যাংওয়ে পর্যন্ত জনপ্রতি ১০ মটরসাইকেল ৫০ টাকা নিয়ে যাত্রীদের পারাপার করছেন। তবে ইজিবাইক, ট্রাক নিয়ে চালকদের ভোগান্তি তে পড়তে হয়। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তাই জোয়ারের পানি না নামা পর্যন্ত তারা ফেরিতে উঠতে পারে না।
মোটরসাইকেলের আরহী রফিক উদ্দিন বলেন, ‘জোয়ারের কোমর সমান পানিতে ফেরিঘাট ডুবে গেছে। এখন যদি মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরিতে উঠতে চাই, তাহলে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে ৫০টাকা দিয়ে নৌকা দিয়ে ফেরিতে উঠছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার আমতলীর পানি পরিমাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জোয়ারের প্রভাবে নদীতেই জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ১৫ সিন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই-তিন দিন উচ্চ জোয়ার অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও ভারিবর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে আমতলী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক গুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে বিপাকে পরেছে পৌরসভার বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। রাস্তায় হাটু সমান পানি ওঠায় যানবাহন চলাচলেও অসুধা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমতলী পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমান আমাদের সময়কে বলেন, পৌরসভার মধ্যে জোয়ারের পানি ওঠার সুযোগ নেই,তবে অতি বৃষ্টির হলে পানি জমতে পারে। আমাদের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো কোথাও ময়লা জমে থাকলে পানি নিষ্কাশনে অসুবিধা হতে পারে। কোথাও তেমন অসুবিধা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
অন্যদিকে, উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গাজীপুর বন্দর বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভাসছে এলাকার বেশিরভাগ এলাকা। বেড়িবাধ না থাকায় দুটি নদীর জোয়ারের পানি কূল ছাপিয়ে যায়। এ জন্য পূর্নিমা ও অমাবশ্যায় জোয়ার-ভাটার সাথে যুদ্ধ করে চলতে হয় গাজীপুর এলাকাবাসীর।
গাজীপুরের বাসিন্দারা জানান, বছরের পর বছর এই মৌশুমে পানিবন্দী থাকতে হয় তাদের। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় গাজীপুর নদী বন্দর। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, তাদের এই জোয়ার-ভাটার দুঃখ দুর্দশা দেখার কেউ নেই। গাজীপুর বন্দরকে রক্ষায় দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, পটুয়াখালী, বরগুনা সহ বেশ কিছু অঞ্চলে দক্ষিন ও দক্ষিন পশ্চিম দিক দিয়ে ঘন্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে সেই সাথে মাঝাড়ি থেকে ভাড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। নদী বন্দরগুলোকে ১ নম্বর সর্তক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
পত্রিকাএকাত্তর /মনিরুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :