প্রতিপক্ষ কে ফাঁসাতে স্ত্রীর ছ'মাসের গর্ভের ভ্রুণ হত্যা

জেলা প্রতিনিধি, বান্দরবান

২০ আগস্ট, ২০২২, ১ year আগে

প্রতিপক্ষ কে ফাঁসাতে স্ত্রীর ছ'মাসের গর্ভের ভ্রুণ হত্যা

বান্দরবান জেলা লামা উপজেলা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে এক নারীর গর্ভপাতের ঘটনাকে পুঁজি করে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে জব্দ করতে শিশু হত্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগে পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ৫নং ওয়ার্ডে বাম হাতির ছড়া এলাকায়। মামলার সুষ্ঠ তদন্তের দাবি আবেদন করেছে আসামি পক্ষ।

লামা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দায়েরকৃত মামলা সূত্র জানা যায়, জিয়াবুল করিম এবং আসামি পক্ষ পরষ্পরে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় হলেও জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।

ঘটনার সূত্রে জানা যায়, জিয়াবুল করিম এর পিতা তৈয়ম গোলাল পিতা মৃত ইসলাম আহমদ এর বড় ছেলে। নয় ভাই বোনের মধ্যে তৈয়ম গোলাল সবার বড় হওয়ায় তার পিতা রেখে যাওয়া সম্পত্তি কিছু নিজের নামে ও ছেলের নামে করে বাকী পাঁচ ভাইকে না দেওয়ার বিভিন্ন ফন্দি আঁটে।

পাঁচ ভাই (আবু তাহের, নুরুল আবছার, নুরুল করিম,আবু তালেব, নুরুল বশির) বাধ্য হয়ে গ্রাম্য আদালতে বিচার দিলে, তৎকালীন চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার তাদের প্রাপ্ত সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়ার রায় প্রদান করে।

পরে তৈয়ম গোলাল ম্যাজিস্ট্রেট ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদলতে গিয়ে হেরে যায়। ভাইদের প্রাপ্য সম্পদ বন্টন করে দেওয়ার জন্য আদলতের রায় থাকলেও , তার (তৈয়ম গোলাল) সন্তান ও আত্মীয় স্বজনের প্রভাব কাটিয়ে জায়গা বুঝিয়ে না দিয়ে পায়তারা শুরু করে।

গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ইংরেজি চাষিলা জমিতে তৈয়ম গোলাল এর অপর পাঁচ ভাই চাষ করতে গেলে, তৈয়ম গোলাল ও তার সন্তানরা বাঁধা প্রদান করে। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়া ও মারামারি হয়। খবর পেয়ে লামা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষ কে আইন বিরোধী কোন কাজ না করতে নিষেধ করে এবং পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নিতে বলেন।এবিষয়ে নিয়ে আবু তালেব আদালতে সি আর২৯১/২২,যার তারিখ ২০/১২/২০২১ইংরেজি একটি মামলা দায়ের করেন।

এ অভিযোগ দায়েরে ক্ষীপ্ত হয়ে মো: ইলিয়াস এর স্ত্রী পারভিন আক্তার বাদী হয়ে ২০জনকে বিবাদী করে সি আর ২৯৪/২১ (তারিখ ২২/১২/২০২১) আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এবিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আশ্রাফুল আলম গত ২৯মে ২০২২ইং চুড়ান্ত রিপোর্ট দেন।এতে বিবাদীগণের বিরুদ্ধে অত্র মামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো তথ্য ও সাক্ষ্য -প্রমাণ না পাওয়ায় তাদেরকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দানের প্রার্থনা করে লামা থানার চূড়ান্ত রিপোর্ট অধর্তব্য নং ১৮ পেশ করেন।

অপর দিকে একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গর্ভপাতকে পুজি করে মারপিটের ঘটনায় গর্ভপাত ঘটেছে এমন অভিযোগ এনে জিয়াবুল করিম পিতা তৈয়ম গোলাল বাদী হয়ে আদলতে সি আর ২৯৬/২১, যার তারিখ ২৭/১২/২০২১ইংরেজি ৮ জনকে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করেন।ওই মামলায় উল্যেখ করা হয়েছে যে, ১৮ ডিসেম্বর জিয়াবুল করিম এর স্ত্রী রেশমী আক্তার কে মারপিট করায় তার ৬ মাসের গর্ভের সন্তান মারা যায়।

মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ইংরেজি তারিখ দুপুর ২টায় লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য ভর্তি করান এবং ১৮/১২/২০২১ ইং হইতে ২০/১২/২০২১ইং পর্যন্ত লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ করে পরবর্তী অভিযোগকারীর বাড়ীতে আনার ভিকটিমের অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হলে বিগত ২২/১২/২০২১ ইংরেজি তারিখ সকাল ৭টা ২০মিনিটে ভিকটিমকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করে ২২/১২/২০২১ ইং তারিখ হইতে ২৫/১২/২০২১ ইংরেজি তারিখ চিকিৎসা গ্রহণ করাকালীন বিবাদীগণের আঘাত জনিত কারণে ভিকটিমের পেটে থাকা ৬মাসের সন্তান অপরিপক্ক অবস্থায় গর্ভপাত হয়ে যায়।

গোপন সূত্রে জানা যায়, প্রতিপক্ষ কে ফাঁসাতে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে জিয়াবুল করিম এর স্ত্রী রেশমী আক্তার এর ৬ মাসের সন্তানের গর্ভপাত করা হয়। পরে মামলা সাজাতে, উক্ত বাচ্চাকে একটি বিস্কুট এর প্যাকেট করে গুলিস্তান বাজারে তার (জিয়াবুল) দোকানে নিয়ে আসে। উক্ত বাচ্চা নিয়ে থানায় যাওয়ার আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির সাথে সলাপরামর্শ করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ ব্যক্তি অপর আরেক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে সলাপরামর্শ করলে, তারা বলেন, শিশুটি যে মৃত জন্ম গ্রহণ করছে, হাসপাতালের কোন ডকুমেন্ট আছে?? জিয়াবুল করিম এর বড় ভাই মোঃ ইলিয়াস বলেন, না! তাহলে কীভাবে মামলা করবে? তাছাড়া এত রাতে ৬মাসের শিশুকে থানায় নিতে হবে কেন? ইতোমধ্যে, রেশমী আক্তার কে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

এবিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য তৎকালীন লামা থানার ওসি মিজানুর রহমান কে ফোন করে মোঃ ইলিয়াস। ইলিয়াস ওসি মিজানুর রহমান কে ফোন বলেন, গত ১৮ডিসেম্বর এর মারামারির ঘটনায় আমার ছোট ভাই জিয়াবুল করিম এর স্ত্রী রেশমী আক্তার এর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে একটি মৃত সন্তান হয়। তখন ওসি মিজানুর রহমান তাকে কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করতে বলেন।

কিন্তু তারা (জিয়াবুল ও ইলিয়াস) মহা বিপদে পড়ে যায়। এই মৃত শিশুকে নিয়ে কীভাবে কক্সবাজার যাবে। তাছাড়া তখন রাত আনুমানিক ১টা (২২ডিসেম্বর২০২১)। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাথে থাকা এক ব্যক্তি জিয়াবুল করিম কে বলেন,কেন এমন জঘন্য কাজ করেছো?? জবাবে জিয়াবুল বলেন, আমার আরো তিন সন্তান আছে। তোমার স্ত্রী এটা জানেন, প্রশ্ন করলে তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন,কীভাবে মামলা করতে পারি সেই বিষয়ে বলেন।

পরে জিয়াবুল করিম ও তার বড় ভাই মোঃ ইলিয়াস মৃত্যু শিশুটিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গোপনে মায়ের কাছে দেওয়ার জন্য রওনা করে।এই ঘটনা কাউকে না বলতে অনুরোধ করে, তা না হলে তাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে (যার অডিও পত্রিকার অফিসে সংরক্ষিত আছে) । পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঐ মৃত শিশুটিকে কৌশলে মায়ের কাছে রেখে আসে।

স্হানীয় মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, দু’ পক্ষই পরস্পর রক্তের আত্মীয়। দীর্ঘদিন ধরে এদের মধ্যে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। আর এ বিরোধকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষই বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছে।

১৮ ডিসেম্বর মারপিটের ঘটনার সময় রেশমী আক্তার ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল বা তাকে মারধর করা হয়েছে এলাকার বেশ কিছু নারী-পুরুষের সাথে প্রকাশ্যে গোপনে কথা বলে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত ওসি শিবেন বিশ্বাস বলেন, মামলাটির চুড়ান্ত রিপোর্ট মাননীয় আদলতের কাছে জমা দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রকাশে, আর গোপনে তথ্য নিয়ে জানতে পারি। এটি একটি সাজানো মামলা। প্রতিপক্ষ ফাঁসাতে এই ঘটনার আশ্রয় নিয়েছে।

তাছাড়া আমি স্বয়ং লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে রোগীর (রেশমী আক্তার) ও ডাক্তারের সাথে কথা বলছি। তিনি সামান্য ব্যাথা পেয়েছে। রক্তক্ষরণ এর প্রশ্নই আসে না। এলাকায় প্রতিবেশীর সাথে এক কথা, আর আমার সাথে আরেক কথা বলার কারণে আমার যথেষ্ট সন্দেহ হয়।এছাড়া তার গর্ভপাতের মত ঘটনাও তার হয়নি।কিন্তু মাননীয় বিচারক কী বুঝে বিবাদী নুরুল কবির ও মো: আরিফ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন তা আমার বোধগম্য নয়।

পত্রিকাএকাত্তর /ফরিদুল আলম

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news