দুই হাত নেই তবুও নিরলসভাবে মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন মিরাজুল ইসলাম

মোহাম্মদ শাহেদ

মোহাম্মদ শাহেদ

২ জানুয়ারী, ২০২২, ২ years আগে

দুই হাত নেই তবুও নিরলসভাবে মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন মিরাজুল ইসলাম
মিরাজুল ইসলাম

জন্ম থেকেই দুটো হাত নেই মিরাজের। তবে তার হাতের কাজগুলো যে করা হয় না এমন না, তার হাতের কাজ গুলো অনায়াশেই তিনি পা এর মাধ্যমে করে ফেলেন। পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় মিরাজুল ইসলামের। তিন ভাইবোনের মধ্যে ছোট মিরাজুল ইসলাম। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকার পরও জীবন যুদ্ধে থেমে নেই মিরাজ। দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় মাই টিভির "আমরাও পারি" নামের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।

মিরাজের বাবার নাম তোরাব আলী ও মায়ের নাম সূর্য খাতুন। তার বাবা-মা জানান, আমাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে, তাদের মধ্যে ছোট ছেলের জন্ম থেকেই দুটো হাত নেই। বিকলাঙ্গ হওয়ায় মিরাজকে অবহেলার সম্মুখীন হতে হয়েছে, এমনকি তাকে স্কুলেও ভর্তি করাতে রাজি ছিলেন না শিক্ষকরা, তার পরেও তার বোন বাঁশের কাঠি বানিয়ে দেন পা দিয়ে মাটিতে লেখার জন্য।

প্রথম প্রথম লিখতে পারতো না, আস্তে আস্তে মাটিতে লেখা শেখেন মিরাজুল ইসলাম। পরবর্তীতে পা দিয়ে লিখে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে স্কুলে ভর্তি হন তিনি। দুটি হাত না থাকা সত্ত্বেও পা দিয়ে সব ধরনের কাজ করতে পারেন তিনি। গ্রামের অনেকেই তার জন্ম কে বৃথা বলে উপহাস করেছিল। তবে সেই মিরাজ তার মনের প্রবল ইচ্ছাশক্তি কে কাজে লাগিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। মিরাজুল ইসলাম আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে 'এ গ্রেট' নিয়ে এসএসসি পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি পাবনা জেলার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ এর উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের ছাত্র।

মানুষ যে কোন পর্যায়ে থেমে থাকেনা মিরাজ সেটাই প্রমাণ করার লক্ষ্যে আজ সফল হয়েছে। মিরাজ নিয়মিত টিভি চ্যানেলগুলোতে বিনোদন দিয়ে যাচ্ছেন এছাড়াও তার ব্যক্তিগত টাকায় এতিম ও অসহায় মানুষদের মাঝে নিরলস ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। যেখানে মিরাজের দুটো হাত নেই এর পরেও তিনি নিরলসভাবে মানুষের সহযোগিতায় নিজেকে নিয়োজিত করছেন।

মিরাজুল ইসলাম পত্রিকা একাত্তরকে জানান, অসহায় মানুষের কষ্ট যেন আমাকে আঘাত করে, আমি বুঝতে পারি অসহায় মানুষের কষ্ট গুলো। আমি বুঝতে পারে অবহেলিত মানুষের কষ্ট, কেননা একটা সময় ছিল যখন আমি মানুষের কাছে অবহেলিত ছিলাম মানুষ আমাকে মেনে নিতে পারত না। কিন্তু তখন হাল না ছাড়ায় আজকে হয়তো আমি আমার জায়গা থেকে ভালো একটা জায়গায় অবস্থান করতে পেরেছি। হয়তো আমি আজকে সাকসেস হতে পেরেছি।

আমাদের সমাজে যারাই আমার মত রয়েছে সবার উচিত নিজেকে অসহায় মনে না করে নিজেকে দুর্বল মনে না করে প্রতিনিয়ত সফল হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। হয়তো আমার মত অনেক মিরাজ কারো পাত্তা পাচ্ছে না অনেকের কাছে অবহেলিত, আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা নিজেকে অসহায়-দুর্বল মনে না করে নিজেকে শক্তিশালী মনে করুন বেঁচে থাকার জন্য এবং মানুষকে দেখিয়ে দেয়ার জন্য। এমন কিছু করুন যাতে আপনার আমার মতো যারা রয়েছেন তারা বাঁচার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে।

জন্ম থেকেই হাতবিহীন মিরাজ, তবুও থেমে নেই তিনি। অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি আজকে যারা তাকে অবহেলিত মানুষ বলে আখ্যায়িত করত তাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন কেউ অবহেলিত না শুধু চেষ্টার ফলে সবকিছু সম্ভব হয়। মিরাজুল ইসলাম সবকিছুই নিজ থেকে করতে পারে, হাতের সব কাজ পা এর মাধ্যমে মিরাজ করে ফেলে। নামাজ পড়া, ব্রাশ করা যাবতীয় সবকিছুই মিরাজ নিজের মত করে করতে পারে তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার বাবা-মায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়।

মিরাজ জানান, কাউকে কখনো ছোট করে দেখবেন না, মানুষ চেষ্টা করলে সব কিছুই করতে পারে। কেউ ইচ্ছা করে প্রতিবন্ধী হয় না, সবই আল্লাহর সৃষ্টি। আমাদের সমাজে এই মিরাজুল ইসলামের মত অনেকেই আছে যাদেরকে আমরা অবহেলা করি, কিন্তু এদের দরকার একটু সহানুভূতি আর ভালোবাসা, তাহলে এরা অনুপ্রাণিত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news