নিজের কিডনি দিয়ে ছেলেকে বাঁচাতে চান 'মা'

উপজেলা প্রতিনিধি, রাণীশংকৈল

২১ আগস্ট, ২০২২, ১ year আগে

নিজের কিডনি দিয়ে ছেলেকে বাঁচাতে চান 'মা'

ছাত্র হিসেবে মেধাবী। এলাকাজুড়ে রয়েছে বেশ সুনাম। সকল পরীক্ষায় রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। বাবা মায়ের ইচ্ছে ছিল একমাত্র ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। কিন্তু সে আশা পূরণ হওয়ার আগেই জীবনে নেমে আসে অন্ধকার কালো এক অধ্যায় ।

রিফাত হাসান রিপন (২২) কৈশোরে বাবাকে হারিয়েছেন। বাবার মৃত্যুর পর অভাবের পরিবারে মা সংসারের হাল ধরেন। উচ্চশিক্ষা অর্জন করে দারিদ্র্যকে পরাজিত করার স্বপ্ন নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু বিধি বাম। সহপাঠীরা যখন ক্লাসে ব্যস্ত, তখন রিপন মৃত্যুর ক্ষণ গুনছেন। তাঁর দুটি কিডনিই নষ্ট।

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের পকম্বা গ্রামে রিপনের বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ। সেই আগ্রহ থেকেই উচ্চমাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগে। রিপন এখন সেই কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আত্মীয়স্বজন, রিফাতের বন্ধুবান্ধব কলেজের সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এই টাকা তাঁর চিকিৎসার জন্য খুবই নগণ্য।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় রিপনসহ পরিবারের সদস্য ৪ জন। মা বাবা ছোটবোনকে নিয়ে বেশ সুখেই কাটছিল তাদের জীবন। তবে সেই সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তাদের। মাধ্যমিক পাস করতেই বাবা ছেড়ে পরপারে চলে যান। এরপরে পরিবারে নেমে আসে দুর্দিন। ভিটেমাটি ছাড়া অল্প একটু আবাদি জমির আয়ে কোনমতে চলে তাদের তিন সদস্যদের সংসার।

পরিবার সূত্র জানায়, ২০২০ সালের মার্চের দিকে জ্বর, বমি আর মাথাব্যথা দেখা দেয় রিপনের। পরীক্ষা করে জানা যায়, তার দুটি কিডনির কোনোটিই আর কাজ করছে না। রিপনের এ অবস্থায় দিশাহারা মা সহায়-সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা করাতে শুরু করেন। দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহীতে চিকিৎসা শেষে ঢাকা সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ভর্তি হন রিপন।

সেখানের চিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম রিপনকে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। এখন তাঁকে সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করাতে হয়। ডায়ালাইসিস না করালে শুরু হয় তাঁর শ্বাসকষ্ট। অসুস্থ রিপন বলেন, বাবার ইচ্ছে ছিলো আর মায়ের স্বপ্ন ছিল আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবো। সেই স্বপ্ন নিয়েই পড়াশোনা করছিলাম। নিজে স্বপ্ন বুনছিলাম বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের জন্য কিছু করব।

এখন সপ্তাহে দুদিন হাসপাতালে না গেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। তবুও স্বপ্ন দেখি বেঁচে থাকার। রিফাতের মা রিতা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার আট বছর হল। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হয় । আমাদের যা ছিল সবকিছু দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। চিকিৎসক যত দ্রুত সম্ভব ভারতে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে বলেছেন। কিন্তু ভারতে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে ২৮ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ হবে।

যা তাঁর পরিবারের পক্ষে জোগান দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আত্মীয়স্বজন, রিফাতের বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এই টাকা তাঁর চিকিৎসার জন্য খুবই নগণ্য। এ পরিস্থিতিতে ছেলেকে বাঁচাতে সবার কাছ থেকে সহযোগিতা আশা করছেন তিনি। রিতা বেগম আরও বলেন, ‘আপনারা পাশে দাঁড়ালে, ছেলেকে আমি আমার কিডনি দেব।’ আমার সন্তানকে বাঁচাতে আপনারা শুধু চিকিৎসার খরচটা দেন।

লেহেম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান পকম্বা গ্রামের রিপনের বিষয়টি অবগত রয়েছি। কিডনি প্রতিস্থাপন চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। ওই পরিবারের পক্ষে এই ব্যয়বহুল খরচ দিয়ে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব হবেনা। যদি সকলে এগিয়ে আসা যায় তবেই তাকে বাঁচানো সম্ভব।

রিফাত হাসান রিপন বর্তমানে ঢাকা সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করতে চাইলে মা রিতা বেগমের সাথে ০১৭৩১১০০৪৬৭০ নম্বরে যোগাযোগ করে সহযোগিতা করতে পারবেন।

বিকাশ০১৭৯৩৯৬৮৯৪৭,

রকেট নম্বর ০১৭৯৩৯৬৮৯৪৭২ (রিপন) ।

ইসলামী ব্যাংক, রাণীশংকৈল শাখা হিসাব নং- ২০৫০৪১১০২০০৩২৫৬১০

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news