ঘুষের প্রস্তাব ফাঁস করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা

উপজেলা প্রতিনিধি, পাথরঘাটা

২৩ জুলাই, ২০২২, ১ year আগে

ঘুষের প্রস্তাব ফাঁস করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা

বরগুনার এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। ইমরান হোসেন (টিটু) নামের ওই সাংবাদিক একাত্তর টিভি ও রাইজিংবিডি ডটকমের বরগুনা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়াও ইমরান হোসেন (টিটু) বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

জানা যায়, চলতি বছরের ১ মার্চ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ইয়ার উদ্দিন খলিফার মাজারের দূর্নীতি নিয়ে ইমরান হোসেন টিটুর অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রচার হয় একাত্তর টিভিতে। প্রতিবেদনটি করার সময় মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মল্লিক এর ভাগিনা বাদল ওরফে বাক্স বাদল প্রতিবেদনটি না করার জন্য একাত্তর টেলিভিশনের বরগুনা অফিসে এসে ঘুষ দিতে চায় ইমরান হোসেনকে। পরে ঘুষ দিতে চাওয়ার ভিডিওসহ প্রতিবেদনটি একাত্তর টিভিতে প্রচার হলে বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে।

এরপর এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন বাদল। বিষয়টি গতকাল (২২ জুলাই) রাতে জানাজানি হলে তীব্র নিন্দার ঝর ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একইসাথে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।

বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন ফসল বলেন, সাংবাদিক ইমরান হোসেন টিটুকে হয়রানি করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই মামলা করা হয়েছে। এর আগেও এই সাংবাদিক বিভিন্ন দূর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন সাধারণ মানুষের সামনে।

মামলা করে কখনোই সাংবাদিকদের লেখা বন্ধ করা যায়নি, যাবেওনা। সাংবাদিকরা অনিয়ম, দূর্নীতি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা রেখে যাবেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। সরকার এ আইন বাতিল করবেন বলে আশা করছি।

এ বিষয়ে একাত্তর টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি ও বরগুনার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ইমরান হোসেন টিটু বলেন, প্রতিবেদন করার সময় বাদল নামে একজন গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে আমার বরগুনা অফিসে দেখা করতে আসেন।

এ সময়ে তিনি প্রতিবেদন বন্ধ করার জন্য ঘুষের প্রস্তাব দেন আমাকে। আমি এসব কথোপকথন ভিডিও রেকর্ড করে প্রতিবেদনের সাথে যুক্ত করে প্রচার করি। এর একমাস পরে বাদল বাদী হয়ে বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে।

বিষয়টি যেকোন উপায়ে তারা ধামাচাপা দিয়ে রাখে এতদিন। গতকাল রাতে আমি একটি সূত্রের মাধ্যমে মামলার বিষয়ে জানতে পারি। এরপর আমি সাইবার ট্রাইবুনালে খোঁজ নিয়ে মামলার সত্যতা জানতে পারি।

তিনি বলেন, এই বাদল আমাকে প্রতিবেদন বন্ধ করার জন্য ঘুষ দিতে চেয়েছে, আমি ঘুষ না নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করি। এটা কি আমার অন্যায়? তিনি ঘুষ দিতে চেয়েছেন এটা কি অন্যায় নয়? আমি তদন্তকারী পুলিশ প্রশাসন মহামান্য আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখি।

আমি আশা করি পুলিশ সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে এবং এই মামলা থেকে আমি মুক্তি পাবো। তবে এতে আমার অনেক বাধা পার হতে হবে। মির্জাগঞ্জ মাজার থেকে অনেক কথিত সাংবাদিকরা মাসোয়ারা নিয়ে থাকে। এর আগেও আমি বরগুনার অনেক দুর্নীতির বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন করেছি। সেসব প্রতিবেদন যাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। যেকোনো উপায়ে আমাকে বন্দী করার ফন্দি আটছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে মির্জাগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সাদ্দাম একাত্তরকে বলেন, কথিত সাংবাদিক বাদল বিগত দিনে বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবাজি নারি কেলেঙ্কারি সহ নানান ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। তার চাঁদাবাজির একটি কল রেকর্ড অনেক আগেই ভাইরাল হয়েছে।

নামধারী সাংবাদিক বাদলের এমন কর্মকান্ডে আমরা লজ্জিত। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলা প্রত্যাহার না করলে মির্জাগঞ্জ থেকে কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে। যা পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। আমরা প্রশাসনের উপরে আস্থাশীল। প্রকৃত একজন সাংবাদিককে এভাবে হয়রানি করতে দেয়া যাবে না।

এ বিষয়ে মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন তালুকদারকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এই মিথ্যা ও হয়রানি মূলক মামলার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বরগুনা রিপোর্টার্স ইউনিটি, আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন, আমতলী প্রেসক্লাব, তালতলী প্রেসক্লাব, তালতলী সাংবাদিক ফোরাম, বরগুনা জেলা অনলাইন সাংবাদিক ফোরাম ও মির্জাগঞ্জ প্রেসক্লাব।

পত্রিকাএকাত্তর /তাওহিদুল ইসলাম

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news