শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী’র ৫১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ

উপজেলা প্রতিনিধি, ডোমার

উপজেলা প্রতিনিধি, ডোমার

২৫ জুন, ২০২২, ১ year আগে

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী’র ৫১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী’র সমাধি।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে নীলফামারীর প্রতিরোধ সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী, বর্বর পাকবাহিনীর নির্যাতনের শিকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী’র ৫১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের ২৫শে জুন নীলফামারীর ডোমার বন বিভাগ সংলগ্ন শালকী বিধৌত বধ্যভূমিতে তাকে গুলি করে হত্যা করে বর্বর পাকসেনারা।

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চিকনমাটি (পূর্ব ধনীপাড়া) গ্রামে ১৯৪৩ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী। তাঁর পিতা মৃত মেজাজ উদ্দিন সরকার ও মাতা মৃত অফেজা খাতুন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার বয়স ছিল ২৮ বছর এবং তিনি দুই পুত্রের জনক ছিলেন।

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে প্রশিক্ষিত আনসার বাহিনীর সহকারী কমান্ডার হিসেবে নীলফামারী অস্ত্রাগার থেকে থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে নীলফামারী সদরের দারোয়ানী ও সৈয়দপুর গোলাহাট এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ সম্মুখযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।

যুদ্ধকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে অস্ত্র উদ্ধারে উপজেলা পরিষদ (তৎকালীন সিও অফিস) সংলগ্ন হলুদ ভবনে পাকবাহিনীর টর্চার সেলে আটকে রেখে চালায় বর্বর নির্যাতন। প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের তালিকা ও অস্ত্র উদ্ধারে পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন জাবেদ গায়ের চামড়া কেটে লবণ ছিটিয়ে দেয়, চেং দোলা করে উপর থেকে ফেলে দেয়, জখম করে, বেয়নেট চার্জ করে, চোখ উপড়ে ফেলে নির্মম নির্যাতন শেষে ২৫শে জুন ডোমার বন বিভাগ বধ্যভূমিতে মাটি চাপা দেয়।

​​​​​​

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী’র মুক্তি নং- ০৩১৫০৫০১২৬, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বেসামরিক তালিকায় বাংলাদেশ গেজেট নং- ২৪৯৮, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট নং- শ/নীল-৫০৩৫। তাঁর যুদ্ধকালীন আনসার বাহিনীর খাকি পোশাক ও বেল্ট মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

১৯৯৯ সালের ১০ই জানুয়ারী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মানি ভাতার বরাদ্দপত্র শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী’র স্ত্রী মোছা. মনোয়ারা বেগমের হাতে তুলে দেন। সেই থেকে পরিবারটি নানারকমের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বর্তমানে মাসিক ৩০ হাজার টাকা সন্মানি ভাতা, দুই ঈদে পৃথক ঈদ বোনাস, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে উন্নতমানের খাবার বরাদ্দ, রেশন সুবিধা এবং ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিল মওকুফ সুবিধা ভোগ করে আসছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নীলফামারী গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়নে দুই লাখের অধিক টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মার্বেল পাথর দিয়ে কবর পাকা করে দেয়। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠতে সহায়ক হবে। ডোমার উপজেলায় প্রথম বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর রাস্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

​​​​

শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে চিকনমাটিতে ২০০১ সালে নির্মাণ করা হয় ‘শহীদ আব্দুল বারী সড়ক’। এছাড়া তার সমাধিস্থল সংলগ্নে শহীদ আব্দুল বারী ট্রাস্ট ও শহীদ মিজান-আব্দুল বারী স্মৃতি সংসদ ও পাঠাগার নির্মাণ করা হয়। তবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী সহ স্বাধীনতাকামী অসংখ্য নর-নারীকে গুলি করে পুতে রাখা শালকী বিধৌত ডোমার বন বিভাগ বধ্যভূমি আজও সংরক্ষণ করা হয় নি।

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের ৫১তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব, শহীদ মিজান-আব্দুল বারী স্মৃতি সংসদ পাঠাগার সহ অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এছাড়া তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া চেয়েছে তার পরিবার।

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news