প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়ার লালের ছটা

উপজেলা প্রতিনিধি, গুরুদাসপুর

২৪ এপ্রিল, ২০২২, ১ year আগে

প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়ার লালের ছটা

"গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরি” কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো অনেকেই বাংলা কবিতা-গানে উপমা হিসেবে নানা ভঙ্গিমায় এনেছেন কৃষ্ণচূড়াকে। শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষটি দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের পথে-প্রান্তরেরও শোভা বর্ধন করে যাচ্ছে। গ্রীষ্মে যখন এই ফুল ফোটে তখন প্রকৃতি প্রেমীদের হাতছানি দেয়। কৃষ্ণচূড়ার এ অপরূপ রূপে মোহিত হয়ে উঠছে ভাবুক মন।

লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অপরূপ সাজে সাজিয়ে রঙিন করে তুলেছে এখন। গ্রীষ্মের তপ্ততায় যখন হাঁপিয়ে উঠেছে প্রকৃতি, সেই সময়েও চারদিকে সবুজের বুক চিরে রক্তিম লাল আভা জানান দিচ্ছে তার নয়নাভিরাম রূপের। জানিয়ে দিচ্ছে কৃষ্ণচূড়া যেন গ্রীষ্মকালেরই প্রতীক।

রক্তরাঙা ফুল কৃষ্ণচূড়ার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য গ্রামের সবুজ প্রান্তর, আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ও বাড়ির আঙ্গিনা ছাড়িয়ে রাঙিয়ে তুলেছে গ্রাম বাংলার পথ-প্রান্তর। বাংলা প্রকৃতির রূপরঙ্গের প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম। আর এ গ্রীষ্মেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে আর বিভিন্ন ভবন ও অফিস পাড়ায় গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়ার লালআভা সৃষ্টি করেছে বৈচিত্যময় পরিবেশ।

বৈশাখের শুরুতেই নগর, গ্রাম-গঞ্জের দৃশ্যপট রমণীয় ও মোহনীয় করে তুলেছে রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়া ফুল। কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গান আমাদের স্মরণ করে দেয় কৃষ্ণচূড়ার তাৎপর্য।

বৈশাখের আকাশে গনগনে সূর্য। কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত বাতাস। প্রকৃতি যখন প্রখর রৌদ্রে পুড়ছে কৃষ্ণচূড়া ফুল তখন জানান দেয় তার সৌন্দর্যের বার্তা। গ্রীষ্মের এই নিস্প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরে আপন মহিমায়। যেন লাল রঙে কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে বসে আছে প্রকৃতি, যে কারো চোখে এনে দেয় শিল্পের দ্যোতনা।

এই সময়টায় সারা দেশের মতোই গুরুদাসপুরে চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রৈদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে।

গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিষ্ময়ে উপভোগ করেন এই সৌন্দর্য্য।

কৃষ্ণচূড়া গাছের আরেক নাম যে গুলমোহর তা কম লোকই জানেন, কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খোঁজে পাওয়া ভার। এখন কৃষ্ণচূড়ার সময়, ফুল ফোটে আছে গাছে গাছে লালে লাল হয়ে। এই লালের সমারোহ কৃষ্ণচূড়ারই মহিমা।

কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা লাল রঙেই দেখতে অভ্যস্ত। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও চোখে পড়ে হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া আর সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে কালেভদ্রে। তিন রঙের কৃষ্ণচূড়ার গাছ উঁচু। অনেকটা জায়গাজুড়ে শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটায়। তিন রঙেরই ফুল ফোটে প্রায় একই সময়ে।

তপ্তরাজ্যে এমন উজ্জ্বল লাল রং সত্যিই দুর্লভ বলেই হয়তো সবাই মেতে ওঠে কৃষ্ণচূড়ার বন্দনায়। অন্যান্য সময়ে এ বৃক্ষের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়ে না। অনেকটা আড়ালেই থেকে যায় তখন। এপ্রিলে গ্রীষ্মের শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই সবুজ পাতার মাঝে বেরিয়ে আসতে থাকে লাল রঙের কৃষ্ণচূড়া ফুল।

মানুষের দৃষ্টিগোচর হতে থাকে তার সৌন্দর্য। তখন আর আলাদা করে তার খোঁজ নেওয়ার দরকার হয় না। দূর থেকে দেখে মনে হয়-সবুজের বুকে হয়তো আগুন লেগেছে।

পত্রিকা একাত্তর /মোঃ সোহাগ আরেফিন

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news