প্রতিকূলতার মাঝে স্বপ্ন জয় গোমস্তাপুরের আনজুরা'র!

স্টাফ রিপোর্টার, গোমস্তাপুর

২১ মার্চ, ২০২২, ২ years আগে

প্রতিকূলতার মাঝে স্বপ্ন জয় গোমস্তাপুরের আনজুরা'র!

অতি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে আনজুরা খাতুন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও তার অদম্য মেধাকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্ন চূড়ায় পৌঁছাতে চায় কিন্তু পদে-পদে বাঁধা গ্রস্হ করছে দারিদ্রতা। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া আনজুরার বাবা যে গরুটা বিক্রি করে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর কথা ভেবেছিলেন, সেটা গত ৬ মার্চ রাতে মারা গেছে। এই মুহূর্তে আনজুরার বর্গাচাষি বাবার টাকা জোগাড় করার অন্য কোনো উপায় নেই। মেয়েকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়াতে গিয়ে ইতিমধ্যে সব সহায় সম্বল শেষ করেছেন তিনি। এখন আনজুরাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর কোনো উপায় দেখছেন না দরিদ্র এ পিতা। ভেঙে পড়েছেন আনজুরাও। অর্থাভাবে পড়াশোনার চিন্তা বাদ দিতে চান সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া এ শিক্ষার্থী। আনজুরার প্রতিবেশী অদম্য মেধাবী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নানতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী জুয়েল রেজা বৃহস্পতিবার ৩ মার্চ রাতে মুঠোফোনে এসব কথা বলছিলেন।

আনজুরা খাতুন গোমস্তাপুর উপজেলার গোমস্তাপুর ইউনিয়নের দূর্লভপুর পাড়ার আনিসুর রহমানের মেয়ে। আনিসুর রহমান পেশায় একজন বর্গাচাষি। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন আনজুরা। এরপর গত জানুয়ারি মাসে ভর্তি হয়েছেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি চিকিৎসা বিদ্যা বিভাগে (ভেটেরিনারি)। ১৩ মার্চ তাঁর ক্লাস শুরু হওয়ার কথা।

আনজুরা খাতুন মুঠোফোনে বলেন, আমাদের গ্রাম ও আশেপাশের এলাকার অন্তত সাতজন মাধ্যমিকের পর প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি পেয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। এসব দেখে ভালো ছাত্রী হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছিলাম। বাড়িতে দাদা-দাদি, মা-বাবা ও আমরা তিন ভাই-বোন। তবে বাবার যত স্বপ্ন আমাকে ঘিরে। জীবনে প্রথম বাড়ির বাইরে পড়তে যাওয়ার আনন্দ বিষাদে রূপ নিয়েছে জানিয়ে আনজুরা বলেন, ‘গরুটা মারা যাওয়ার পর বাড়িতে সবাই দুঃখ পেয়েছে। বাবা ও বৃদ্ধ দাদাকে এত চিন্তায় পড়তে জীবনে দেখিনি। এখন বিক্রি করার মতো পরিবারে আর কিছুই নেই। বাবা কিছু টাকা জমিয়েছিলেন, আমাকে ভর্তি পরীক্ষা দেয়াতে গিয়ে সব সঞ্চয় ফুরিয়েছেন। গরুটার দাম কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা হতো। এটা দিয়ে অন্তত কয়েক মাস চলত আমার। জুয়েল ভাইকে এ দুঃখের কথা জানিয়েছিলাম। আপনাদের লজ্জায় বলতে পারিনি।

ধারদেনা করে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর চেষ্টা করছেন জানিয়ে আনিসুর রহমান বলেন, ‘গরু খানটা মইরা যাইতে মনটা ভাইঙ্গা গেছল। এখুন ধারদেনা কইরা হোইলেও বেটি লিয়া যাব। কিন্তু পরে কেমন কইরা লেখাপড়া চালাব, তা লিয়া খুবই চিন্তার মধ্যে আছি। মাত্র আড়াই বিঘা পরের জমি করি। আগুন মাসে ধানও কাটি। পরের দুয়ারেও খাটতে যায়। আগে চালিয়া লিয়াছি। এখন তো মনে হোইছে খুবি কঠিন। পারব কি না, বুঝতে পারছি না। বেটিটা যুদি একটা বৃত্তি পায়তোক, তেবে জানটা হামার বাঁচতোক।

আনজুরাদের প্রতিবেশী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আনিসুর রহমান অনেক কষ্ট করে আনজুরাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। তাঁর গরুটা মরে যাওয়ায় খুবই বেকায়দায় পড়েছেন। টাকার অভাবে মেয়েকে খুলনায় নিয়ে যাবেন কি না, দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়েছিলেন। আমরা উৎসাহ দিয়েছি। এখন মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে মেয়েকে খুলনায় নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

রহনপুর ইউসুফ আলী সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েটি দরিদ্র পরিবারের। আমিসহ কলেজের আরও কয়েকজন শিক্ষক বিনা টাকায় প্রাইভেট পড়িয়েছি। নানাভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। এখন সে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু সেখানে পড়ানোর সামর্থ্য নেই তাঁর বাবার। সবাই এগিয়ে এলে মেয়েটি পড়াশোনায় টিকে থাকতে পারে।

গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মেয়েটির বিষয়ে আজই জানলাম। খোঁজখবর নেব। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সাহায্য-সহযোগিতা করা যায় করব।

পত্রিকা একাত্তর/ ইয়াহিয়া খান রুবেল

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news