পাহাড়িয়া অঞ্চল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করেছে। চন্দ্রনাথ পাহাড় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত সীতাকুণ্ড উপজেলার পাহাড়বিশেষ।
এটি সীতাকুণ্ড শহরের পূর্বে এবং চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ার উচ্চতা ১১৫২ ফুট বা ৩৬৫ মিটার। এটি শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় তীর্থস্থান ই নয় বরং এক আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান।
প্রাচীন নব্যপ্রস্তর যুগে সীতাকুণ্ডে মানুষের বসবাস শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। এখান থেকে আবিষ্কৃত প্রস্তর যুগের বাঙালী জনগোষ্ঠীর হাতিয়ার গুলো তারই স্বাক্ষর বহন করে। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম অঞ্চল আরাকান রাজ্যের অধীনে ছিল। এর পরের শতাব্দীতে এই অঞ্চলের শাসনভার চলে যায় পাল সম্রাট ধর্মপাল দ্বারা এর হাতে (৭৭০-৮১০ খ্রিঃ)। সোনারগাঁও এর সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ্ (১৩৩৮-১৩৪৯খ্রিঃ) ১৩৪০ খ্রিষ্টাব্দে এ অঞ্চল অধিগ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সুর বংশের শের শাহ্ সুরির নিকট বাংলার সুলতানি বংশের শেষ সুলতান সুলতান গীয়াস উদ্দীন মুহাম্মদ শাহ্ পরাজিত হলে হলে এই এলাকা আরাকান রাজ্যের হাতে চলে যায় এবং আরাকানীদের বংশধররা এই অঞ্চল শাসন করতে থাকেন। পরবর্তীতে পর্তুগীজরাও আরাকানীদের শাসনকাজে ভাগ বসায় এবং ১৫৩৮ খ্রি: থেকে ১৬৬৬ খ্রি: পর্যন্ত এই অঞ্চল পর্তুগীজ ও আরাকানী বংশধররা একসাথে শাসন করে। প্রায় ১২৮ বছরের রাজত্ব শেষে ১৬৬৬ খ্রি: মুঘল সেনাপতি বুজরুগ উন্মে খান আরাকানীদের এবং পর্তুগীজদের হটিয়ে এই অঞ্চল দখল করে নেন।
পায়ে হেঁটে চন্দ্রনাথ যাওয়ার সময় বেশকিছু ধর্মীয় স্থাপনা ও অধিবাসীদের জীবন যাত্রার চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও জুম ক্ষেত ও ফুলের বাগান দেখতে পাওয়া যায়। পাহাড়ে উঠার পূর্বে ঝর্ণা দেখতে পাওয়া যায়। পাহাড়ে উঠার জন্য দুই ধরনের পথ রয়েছে,একটি পাহাড়ি পথ এবং অন্যটি সিঁড়ি। পাহাড় দিয়ে উঠার পথে দেখা মিলবে বিরূপাক্ষ মন্দিরের যার থেকে ১৫০ ফুট দূরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দেখতে পাওয়া যায় একদিকে সমুদ্র আর অন্য দিকে পাহাড়ের নির্জনতা। চারিদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য জুড়িয়ে যাবে চোখ। তাই পাহাড়প্রেমী কিংবা প্রকৃতিপ্রেমী হলে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে।
পত্রিকা একাত্তর/সানজিদা নওরীন ঝিনুক