ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকঁচা ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত। তারা তৈরী করেন মাটির হাঁড়ি, পুতুল, কলসি, প্রদীপসহ রকমারি জিনিসপত্র। তবে সময়ের পরিবর্তনের কারণে বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বিলুপ্তির পথে এই শিল্প।

হারিয়ে যেতে বসেছে ঠাকুরগাঁওয়ের আকঁচা ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্প। কালের বিবর্তনে ধাতব, প্লাস্টিক, মেলামাইন ও চিনামাটির তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এই শিল্পে ধস নেমেছে। ঐতিহ্য ধরে রাখতে গ্রামের কিছু মানুষ এখনও এই পেশায় যুক্ত থাকলেও অনেকই পেশা বদলেছেন।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, সময়ের চাহিদা মাথায় রেখে পণ্য তৈরি করলে মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব। মৃৎশিল্পিরা বলছেন, বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাটির তৈরী জিনিসপত্রের কদর কমে গেছে। ফলে জীবিকা নির্বাহে কষ্ট হচ্ছে। তবে ঐতিহ্যের টানে এখনও এই শিল্পে জড়িত রয়েছেন বলে জানালেন মৃৎশিল্পীরা।

মৃৎশিল্প কারিগর গপাল পাল জানান, এগুলো আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে করতেছি। যার জন্য এগুলো ছাড়াও যায় না। আবার করলেও হয় না, মহা বিপদ। বাজারে তো কদরই নাই বললেই চলে। বিপদের মুখে পড়েছি আমরা।

চন্দ্র পাল নামের এক কারিগর জানান, এগুলো আমাদের জন্ম-জন্মান্তরের পেশা। যে সব জিনিস বানানো হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই আমাদের এখান কার মাটিতে হয় না। বগুড়ার ঐ দিক থেকে মাটি কিনে নিয়ে আসতে হয়। এর পরেও করতে হয়।

তবে জেলার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উপ-ব্যবস্থাপক নূরেল হক বলছেন, আধুনিকতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য উৎপাদন করলে এই শিল্প হারাবে না। বরং কদর আরও বাড়বে। এদিকে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলছেন, সরকারি সুযোগসুবিধা পেলে এই শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন বলেন, এই ইউনিয়নে পাল সম্প্রদায়ভুক্ত প্রায় ৭০০ পরিবার বাস করেন। এক সময় ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে ঘিরে ছিল বছরব্যাপী অবিরাম কর্মযজ্ঞ।

কালের বিবর্তনে দিনে দিনে এর ব্যাপ্তি কমতে শুরু করেছে। এখন কমবেশি ২০০ পরিবার এ পেশায় সম্পৃক্ত রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

পত্রিকাএকাত্তর / আব্দুল্লাহ আল সুমন