অপহৃত ভিকটিম মোঃ আমজাদ হোসেন রেদোয়ান (২৩) পেশায় একজন পুরাতন টায়ার ব্যবসায়ী। পেশাগত কারনে তার আসামীদের সাথে পুরাতন টায়ার ব্যবসার সূত্র ধরে গত ২/৩ মাস পূর্বে কুমিল্লায় পরিচয় হয়।

সেই পরিচয়ের সুবাদে গত ০৬ জুন সোমবার আসামী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অপহৃত ভিকটিম আমজাদ হোসেনকে জানায়, তার পরিচিত লোকের কিছু পুরাতন টায়ার আছে তা অল্প দামে নিয়ে দিতে পারবে।

উক্ত বিষয় নিয়ে আসামীর সাথে অপহৃত ভিকটিম আমজাদের প্রায় ০২ দিন যাবৎ কথা হয়। পরবর্তীতে সর্বশেষ গত ০৮ জুন বুধবার সকালে আসামী অপহৃত ভিকটিম আমজাদ হোসেন‘কে ব্যবসায়ে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে কল করে দ্রুত কুমিল্লায় আসতে বলে।

সে মোতাবেক অপহৃত ভিকটিম ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এসে পৌছায়। আসামীরা কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড হতে অপহৃত ভিকটিমকে সিএনজি করে নিয়ে অজ্ঞাত একটি বিল্ডিংয়ের দু‘তলায় নিয়ে যায়।

সেখানে আসামীদের সাথে মোঃ এমরান হোসেন সজিবসহ আরো অজ্ঞাতনামা ২ জনকে দেখতে পেয়ে ভিকটিমের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয় এবং কৌশলে কিছু কেনার কথা বলে সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে আসামী মোঃ এমরান হোসেন সজিব তার পকেট থেকে ধারালো একটি ছুরি বের করে ভিকটিমের গলায় ধরে বলে যে, কথা বললে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করবো বলে হুমকি দেয়।

এই পরিস্থিতিতে ভিকটিম ভয়ে চিৎকারের চেষ্ঠা করলে আসামী এমরান ভিকটিমের মুখ গামছা দিয়ে বেধে ফেলে এবং অপর আসামী মামুনসহ অজ্ঞাতরা গলায় ছুরি ধরে রাখে। পরবর্তীতে ভিকটিমকে রুমে নিয়ে আসামী মামুন, এমরানসহ আরো অজ্ঞাত ২ জন হাত-পা লোহার শিকল দিয়ে পেচিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে।

সে সময় আসামীরা ভিকটিমের ব্যবহৃত দুটি এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, নগদ প্রায় ১৫০০/- টাকা ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ডসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। আসামী মামুন গলায় ছুরি ধরে ভিকটিমের ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ডের পিন নম্বর নিয়ে নেয়।

কোন ক্রমে ঘটনার দিন ভিকটিম তার বাবাকে মোবাইল ফোনে মাধ্যমে জানায় সে অপহরণ হয়েছে এবং অপহরণকারীরা তাকে একটি বিল্ডিংয়ে আটকে রেখেছে। ঐসময় আসামীরা ভিকটিমের নিকট থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তার বাবাকে বলে, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে যদি আপনার ছেলেকে বাঁচাতে চান তাহলে নগদ ৫,০০,০০০/- টাকা নিয়ে আসেন।

ছেলেকে বাঁচানোর জন্য ভিকটিমের বাবা তাদের দেয়া শর্তে রাজি হয়ে ঐদিন দুপুরে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং অপহরণকারীরা পথি মধ্যে ভিকটিমের বাবার সাথে মোবাইল ফোনে ঘনঘন যোগাযোগ করতে থাকে ও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় যেতে বলে।

সর্বশেষ আসামী এমরান ভিকটিমের বাবাকে কল করে চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ্ থানাধীন ইস্পাহানি ০১নং রেলগেইট সংলগ্ন স্পীড ট্রেক (প্রাঃ) লিমিটেড সিএনজি পাম্পের বিপরীত পাশে ০৯ জুন বৃহস্পতিবার রাত ১০:৩০ মিনিট নগদ ৫,০০,০০০/- টাকা নিয়ে একা আসতে বলে।

উক্ত অপহরণের বিস্তরিত বিষয়টি অপহৃত ভিকটিমের বাবা র‌্যাব-৭, চটগ্রাম’কে অবহিত করে। র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম বিষয়টি অত্যান্ত মানবিকতার সহিত আমলে নিয়ে ভিকটিমের বাবার দেয়া তথ্য মতে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে।

পরবর্তীতে অপহরনকারীদের কথা ও র‌্যাবের পরিকল্পনা মতে ভিকটিমের বাবা কথিত টাকার ব্যাগসহ আসামীদের দেয়া বর্ণিত স্থানে গত ০৯ জুন ২০২২ খ্রিঃ রাত ২২৩০ ঘটিকায় এসে দাড়িয়ে আনুমানিক ৪/৫ মিনিট অপেক্ষা করতেই অপহরণ দলের একজন সদস্য ভিকটিমের বাবাকে আমজাদের বাবা কিনা জিজ্ঞাসা করে।

তখন ভিকটিমের বাবা আমজাদের বাবা বলে পরিচয় দেয়া মাত্রই অপহরণকারী তার হাতে থাকা ব্যাগটি নিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্ঠা কালে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল উক্ত অপহরণকারীকে হাতেনাতে বর্ণিত স্থান হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী মোঃ এমরান হোসেন সজিব (২২), পিতা-সিহাব উদ্দিন সেলিম, সাং-দক্ষিন জগদানন্দ, থানা-কবিরহাট, জেলা-নোয়াখালী, বর্তমানে-জানে আলম এর কলোনী, ৩য় তলা, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, থানা-চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম মহানগর বলে জানা যায়।

পরবর্তীতে আটককৃত আসামীকে অপহৃত ভিকটিম আজমাদ হোসেনের কথা জিজ্ঞাসা করলে তখন ধৃত আসামী জানায় অল্প কিছু দুরেই আড়ালে অপহরনকারী দলের অন্য সদস্যরা ও তাদের সঙ্গে থাকা অজ্ঞাতনামা ০২ জন আসামী অপহৃত আমজাদ’কে নিয়ে একটি গাড়িতে অপেক্ষা করছে।

ধৃত আসামীর দেয়া তথ্য মতে দ্রæত র‌্যাবের টিম ধৃত আসামীকে নিয়ে বর্ণিত স্থান এবং আশপাশ এলাকা ব্যাপক তল্লাশী অভিযান চালায়। র‌্যাবের সাড়াশি অভিযানের প্রেক্ষিতে ও অপহরনকারী চক্রের ০১জন সদস্য গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি আচ করতে পেরে অপহরনকারী দলের অন্যান্য সদস্যরা অপহৃত ভিকটিম আমজাদ হোসেনকে চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ্ থানাধীন কর্ণেলহাট, উত্তর কাট্টলী, ডি.টি রোড মেসার্স বাগদাদ ফার্নিচার হাউস এর সামনে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে উপরোক্ত ঘটনার সাথে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সরাসরি জড়িত থাকার কথা নিজ মূখে অকপটে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামী এবং উদ্ধারকৃত ভিকটিম সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের নিমিত্তে চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

পত্রিকা একাত্তর /ইসমাইল ইমন