পানি দূষণের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে জনগণ—উদাসীন সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

২৭ জুলাই, ২০২২, ১ year আগে

পানি দূষণের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে জনগণ—উদাসীন সরকার

বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে প্রধান সমস্যা পানি দূষণ। সর্বশেষ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানি দূষণকে গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য দেন, পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন।

আজ ২৭ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন "পানি দূষণ রোধে সরকার ও জনগণের করনীয়" উপলক্ষে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যৌথভাবে মতামত তুলে ধরুন সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার, সংগঠনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ মঞ্জুরুল কিবরিয়া ও সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সহ—স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং জনস্বাস্থ্য ও ডায়াবেটিকস বিশেষজ্ঞ ডা: শাকিরা নোভা।

বলা হয়েছে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ পানি শহর ও শিল্পাঞ্চল গুলোর বর্জ্য দ্বারা সরাসরি দূষিত। সাম্প্রতিক সময় গবেষণায় উঠে এসেছে ঢাকা শহরে ৯৯ শতাংশ ও সারাদেশে ৭৩ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ পানি পান করছে। দেশে প্রতিবছর ভূগর্ভস্থ থেকে প্রায় ৩৫ দশমিক ২০ ঘন কিলোমিটার পানি উত্তোলন করা হয় যার মধ্যে ৮৫ শতাংশ কৃষি কাজে, ১৪ শতাংশ ঘর গৃহস্থালী এবং ১ ভাগ শিল্পাঞ্চলের কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।

পৃথিবীতে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবস্থান ৬ ষ্ঠ স্থানে এবং অনিরাপদ পানি পান করার ক্ষেত্রে ৪র্থ । যা টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশের জন্য হুমকি। জাতীয় জীবনে টেকসই অর্থনীতি গড়তে গেলে গৃহস্থলীর পানি নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক পানি নিরাপত্তা, পরিবেশগত পানি নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ সহিষ্ণুতা রোধে পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়।

পানি দূষণের ফলে সাধারণ জনগণের জীবন মানে কি ধরনের প্রভাব ফেলে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু এ বিষয়ে নদীর দূষণ বন্ধে ও সরকারের করণীয় সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীর বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ মঞ্জরুল কিবরিয়া বলেন, নদী দূষণের প্রধান কারণগুলো হলো কলকারখানার বর্জ্য, কৃষিজমিতে অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা, নদীতে অনিয়ন্ত্রিত বাঁধ নির্মাণ করার ফলে নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিশেষ করে ঢাকা সিটির বর্জ্য অপসারণের জন্য খাল গুলো দখল—দূষনে জর্জরিত। যদিও বেশ কিছু খাল পুনরুদ্ধার করা হয়েছে কিন্তু প্লাস্টিক পণ্য ও বিভিন্ন বর্জ্য সরাসরি বুড়িগঙ্গা নদী সহ ঢাকার চারপাশের নদীতে গিয়ে পড়ছে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নদীর রক্ষা কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ও লোকবল নিয়োগের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পানি দূষণ বন্ধে সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, পরিবেশ অধিদপ্তর, শিল্প মন্ত্রণালয়, নদী রক্ষা কমিশন ও নৌ মন্ত্রণালয় কে একত্রিত করে শক্তিশালী পরিচালনা পরিষদ গঠন করতে হবে।

পানি দূষণ থেকে উত্তরণের জন্য পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বলেন, পানি দূষণের ফলে বাংলাদেশে জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হুমকির মুখে। শিল্প ও কলকারখানার বর্জ্য সরাসরি নদী,খাল ও সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে।

যার ফলে পানি দূষণ বাংলাদেশে এখন প্রধান সমস্যা। পানি দূষণ থেকে উত্তরণের জন্য সি ই টি পি ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা থাকলেও কেউ তা মানছে না। এক্ষেত্রে সরকার উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে সাধারণ জনগণ এবং আগামী প্রজন্ম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পতিত হচ্ছে।

১ লিটার পানি বিশুদ্ধ করতে ১৮—২০ টাকা খরচ হয় যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল যার ফলে শিল্প উদ্যোক্তারা ইটিভি ফর্মুলা ব্যবহার করতে চান না। তাই আমি মনে করি বাইপাস ক্যানাল পলিসির মাধ্যমে দেশের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ পানি বিশুদ্ধ করা সম্ভব।

পদ্ধতিটা এমন একই অঞ্চলে ১০— ২০ কারখানাকে একটি মিনি প্ল্যান্টের মাধ্যমে পানি শোধন করে পরবর্তীতে তা নদী বা খালে পতিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতি লিটার পানি বিশুদ্ধ করতে ২—৩ টাকা খরচ হবে। সরকারের উচিত কেন্দ্রীয় মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার এবং সিসি ক্যামেরার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা।

অঞ্চলভিত্তিক নতুন লোকবল নিয়োগ করে পানি বিশুদ্ধ করতে অভিযান পরিচালনা জোরদার এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সাধারণ জনগণকে ব্যাপকভাবে সচেতন করে পানি দূষণ রোধ করা সম্ভব।

নদীর দখল ও দূষণমুক্ত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ কিছুটা দৃশ্যমান হলেও বর্তমানে বন্ধ থাকায় আবার একই অবস্থা বিদ্যমান হয়েছে। দখলমুক্ত জায়গায় নদীর পাড় জুড়ে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ এবং সামাজিক বনায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

ইকোপার্ক নির্মাণসহ স্থানীয় প্রশাসনকে সচেতন করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নদীর খনন কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করে আগাম বন্যা প্রতিহত করার জন্য নদীর গভীরতা বৃদ্ধি করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সাকিরা নোভা বলেন, দূষিত পানি পান করা ও ব্যবহারের ফলে টাইফয়েড, কলেরা , আমাশয়, জন্ডিস, হেপাটাইটিস বি এবং চর্ম রোগের প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দূষিত ও লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে নারীর বন্ধ্যাত্ব রোগের পরিমাণ বাড়ছে এবং নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণ করার সময় জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নিচ্ছে।

এছাড়াও ক্যান্সার রোগ ও হতে পারে। দূষিত পানি ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করায় শাক সবজি ভক্ষণ করার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং ক্যামিকেল যুক্ত সার ব্যবহার করাও মাটির জন্য ক্ষতিকর। উপকূলীয় অঞ্চলে অনিরাপদ পানি পান করার ফলে নারী ও শিশুরা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পতিত হচ্ছে। বিশেষ করে নারীর অনিরাপদ গর্ভপাত বৃদ্ধি পেয়েছে।

এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি সকল সামাজিক সংগঠনকে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে হবে।

পত্রিকাএকাত্তর /সোহেল রানা

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news