চিঠি শব্দটি ঠোটের কোনে নাড়া দিতেই হৃদয়টা রোমান্সিত হয় যে কারোই। কারণ চিঠির মাধ্যমেই প্রকাশ পায় মনের অব্যক্ত কথাগুলো। না বলা কথা গুলো সহজ সরল সাবলীল ভাষায় প্রাঞ্জল করে বনেদী শব্দের পসরা কাগজে সাজিয়ে অন্যের কাছে প্রকাশই হলো চিঠি।
মুখোমুখি যেভাবে একজন আরেকজনের কাছে মনের আবেগ অভিব্যক্তি প্রকাশে মনে যতটা দাগ কাটে। তার চেয়েও শত সহস্র গুণ বেশি হৃদয়ে রেখাপাত করে কাগুজে চিঠির মাধ্যমে প্রকাশিত ভাষায়। মনের সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা কান্না হাসি চিঠির মাধ্যমে সুচারুরূপে প্রকাশ করা যায়। যার মাধ্যমে ব্যক্তি একজনের প্রতি অন্যজন্যের আবেগ হৃদ্যতা আন্তরিকতার টেকসই ইমারত তৈরি হয়। সৃষ্টি হয় মনের সাথে মনের আন্তরিকতাপূর্ণ মিলন।
চিঠি নানান ধরনের হয়। যেমন- প্রেমের চিঠি, পারিবারিক চিঠি, ব্যবসায়িক চিঠি,পত্র মিতালি চিঠি, বন্ধুর কাছে বন্ধুর চিঠি, স্বজনের কাছে প্রিয়জনের চিঠি।বাবার কাছে ছেলের চিঠি, ছেলের কাছে বাবার চিঠি সফলতার গল্প বর্ণনা করেও প্রিয়জনেরকাছে চিঠি লেখা হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিছুদিন আগেও বহুদুরের স্বজনের কাছে নিজের বা পরিবারের খোঁজ খবর দেওয়া বা জানার মাধ্যম ছিল চিঠি । কিন্তু কালের বিবর্তনের সেই স্থান দখল করে নিয়েছে ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল জগত। ফেসবুস ম্যাসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসপ, ভাইবার, স্কাইপ, বিগো লাইভ মোবাইল ফোন এখন চিঠির স্থান পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে।
চিঠি বহন করা বাক্সগুলোতে এখন পড়েছে মরিচিকার আস্তর। কারণ চিঠির আদান প্রদান না থাকায় বাক্সগুলোর কদর ক্রমে কমে যাচ্ছে। কোন রকম নামপর ডাকঘরে সামনে পরে আছে সরকারি চিঠি-পত্রের পরিষেবা দেওয়ার জন্য। সরকারি চিঠিপত্রের ব্যবহারও অনেক কমে গেছে হাল জামানায়। সরকারি দাপ্তরিক যোগাযোগ গুলো অনেকটাই এখন ই-মেইল বার্তা নির্ভর।দলিল দস্তাবেজের আদান প্রদানে ক্ষেত্রে ডাক বিভাগের ব্যবহার কিছুটা হয়।
প্রিয়জন বা যে কারোই কাছে চিঠি লেখা হত, তাতে থাকত মনের মাধুরি মেশানো কথামালার শ্লোক।প্রেরিত চিঠিটির মাধ্যমে যেন প্রাপক কথ্য কথনে সানন্দ্য চিত্তে গ্রহণ করে , সেদিকে প্রেরক চিঠি লেখার সময় বিশেষ নজর দিয়েই চিঠি লিখে। লেখায় শব্দ চয়নে মুন্সিয়ানার দিকেও বিশেষ যত্নবান থাকত প্রেরক।
যে প্রকারেরই হোক স্থান কাল পাত্র সময় তাৎপর্যপূর্ণ শব্দ চয়ন প্রাসাঙ্গিকতার কারণে হাতে লেখা চিঠি হয় সাহিত্যের মর্যাদা উত্তীর্ণ । কোন কোন চিঠিতে হৃদয়াবেগ প্রকাশের জন্য দিন মাস শতবছর যতনে ডায়রিবন্দী হয়েছে ।শিক্ষিতজন এমন যে কারো কাছেই হাত বাড়ালেই দু'একটা কেন অনেক চিঠিইর খোঁজ মিলবে।
অনেকের কাছে মলাটবন্ধী আস্ত আস্ত ডায়রী পাওয়া যাবে যাতে শত শত চিঠি যতনে ভাজ হয়ে আছে। আমি নিজেও অনেক চিঠি লিখেছিলাম। যেগুলো ছিল তিনটি ভলিয়ম ডায়রীতে সংরক্ষিত। কলেজ জীবনে অনার্স করাকালীন অসুস্থ হয়ে বরিশাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে দীর্ঘ দিন চিকিৎসাকালীন কে বা কারা নিয়ে যায় সে সব । সুস্থ হয়ে মেসে গিয়ে আর পাইনি পরম যত্নে রাখা সে সব ডায়রি।
সে সব ডায়রি সমেত চিঠির জন্য মাঝে মাঝে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হলে হিম কাতর হই।ফিরে যাই জীবনের সেই রোমান্সিত সময়ের তরীতে।
পত্রিকা একাত্তর/মো. নুরউল্লাহ আরিফ