সোহাগ আলীর হাত ধরেই বেরোবি প্রত্নতাত্ত্বিক চর্যার প্রান কেন্দ্রে

বেরোবি প্রতিনিধি

২৬ আগস্ট, ২০২২, ১ year আগে

সোহাগ আলীর হাত ধরেই বেরোবি প্রত্নতাত্ত্বিক চর্যার প্রান কেন্দ্রে

প্রত্নতত্ত্ব একটি প্রায়োগিক বিষয়। এর পূর্ণতা আসে ছাত্রছাত্রীদের গবেষণা ও অনুসন্ধান উৎক্ষেপণের মধ্যে দিয়ে। প্রত্নতত্ত্বকে সঠিক অর্থে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।

তারই ধারাবাহিকতায় বেরোবির ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একদল তরুণ শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বসে প্রাচীন মধ্যযুগ সুলতানি ও মোঘল আমলের বিভিন্ন স্থাপত্যে তৈরি করে।যা একজন শিক্ষার্থীকে প্রত্নতাত্ত্বিক চর্যা এবং বাস্তব জীবনে হাতে কলমে শিক্ষার জন্য বাস্তব ক্ষেত্র হিসেবে বেশি কাজে লাগাতে পারবে।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক সোহাগ আলীর নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়। দলে বিভক্ত হয়ে তারা প্রাচীন, মধ্যযুগ সহ সুলতানি, মোগল আমলের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, বিহার অন্যান্য স্থাপত্যের নমুনা তৈরি করেন।

তাদের তৈরিকৃত নমুনা স্থাপত্যের মধ্যে ছিল ছোট সোনা মসজিদ, লালবাগ কেল্লা,শালবনবিহার, পাহাড়পুর, খান মোহাম্মদ মৃধার মসজিদ,ষাট গম্বুজ মসজিদ কুমিল্লার ময়নামতি। একটানা সাত দিন ধরে শিক্ষার্থীরা অত্যান্ত চমৎকার ভাবে শৈল্পিক নিপুণতায় তৈরি করেন। যা দেখতে অনেকটা বাস্তবের ন্যায় অনেক চমৎকার কারুকার্যময় রং বাহারী রঙ্গিন সব ভাস্কর্য ও স্থাপত্য।

এই সব তৈরিতে তাদের ব্যবহৃত হয়েছে রং, কাগজ, পেন্সিল যা তাদের তৈরি নমুনা স্থাপনার শৈল্পিক সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তাদের তৈরি করা এই সব স্থাপনা দেখলে মনে হয় যেন বেরোবি প্রত্নতত্ত্ব চর্যার প্রান কেন্দ্রে হয়ে উঠছে। এই সৌন্দর্য এমন ভাবে ফুঠে ওঠেছে যা সহজে একজন মানুষ বা অন্য বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীকে ওই সব বিষয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে।

প্রত্নতত্ত্ব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে।ফিরে যাই সুদূর অতীতকালের সংস্কৃতির সারবত্তায়। পুরোনো দিনের মানুষের তৈরি সকল বস্তু ও নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় প্রত্ন অনুসন্ধানের মাধ্যমে। লিখিত তথ্যের মাধ্যমে খুব বেশি হলে পাঁচ থেকে সাত হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।

যুগান্তরের সাক্ষী হয়ে থাকা প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন থেকে কুড়ি থেকে তিরিশ লাখ বছর আগের মানুষের ইতিহাস জানা সম্ভব হচ্ছে। ফলে ইতিহাসে নতুন মাত্রা সংযোজিত হচ্ছে প্রত্নতত্ত্বের মাধ্যমে। সে সময়ের মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের নানা কর্মকাণ্ড নির্মাণকাজ ও ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য সচেষ্ট ছিলেন।

আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য ছায়া সুনিভির অরন্য শোবিত ক্যাম্পাস বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একদল শিক্ষার্থী একটানা সাত দিন ধরে অত্যন্ত সুনিপন দক্ষতার সাথে মনের মাধুরি মিশিয়ে প্রাচীন,মধ্যযুগ,সুলতানি ও মোঘল আমলের বিভিন্ন স্থাপত্যিক নিদর্শন শিক্ষক সোহাগ আলীর নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা নমুনা মডেল তৈরী করেন যা ছিল দেখার মত চমকপ্রদ।

এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষক সোহাগ আলী বলেন, শিক্ষার্থীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করার মাধ্যমে স্থাপত্যিক নিদর্শন সম্পর্কে হাতে কলমে শিক্ষা পায়। ফলে তারা সহজে বৈশিষ্ঠ্য চিহ্নিত করতে পারে কোন স্থাপত্য কোন আমলের। তিনি আরও বলেন এভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার মাধ্যমে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের বাইরে যারা শিক্ষার্থী তাদেরকেও প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় স্থাপনা সমপর্কে আগ্রহী করে তুলবে। ফলে ঐ সকল স্থাপনা সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে।

ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী মনিষা সরকার বলেন টানা সাত দিন কাজ করার পর তারা কাজটি সুন্দর ভাবে শেষ করেছে এই জন্য তারা সন্তুষ্ট। দলগত কাজের মাধ্যমে তাদের বন্ধুত্বের বাঁধন আরও দূঢ় হয়েছে। পাশাপাশি তাদের একগুয়েমিতা কেটে গেছে।

সেক্ষেত্রে প্রত্নচর্চায় নিয়োজিত এসব শিক্ষার্থীরা প্রত্ননিদর্শনের অনুসন্ধান, খনন, সংরক্ষণ, প্রদর্শন এবং গবেষণার মাধ্যমে পূর্বপুরুষের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির চালচিত্র তুলে ধরে ইতিহাস বিনির্মাণ ও সত্যায়ন করে থাকেন।

এ শাস্ত্রের চর্চা ইতিহাসের সত্যতা দেয়, প্রত্নতত্ত্বের অধ্যয়ন একজন শিক্ষানবিশকে তার চারপাশের বিষয়ে সচেতন হতে এবং একজন ভাল পর্যবেক্ষক হতে সাহায্য করে। এ চর্চা নিজের অতীত, নিজ পরিচয় সম্পর্কে আরও গভীরে গিয়ে জানতে সহায়তা করে।ফলে শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক উভয় শিক্ষার হাতেখড়ি পান।

পত্রিকাএকাত্তর /ফারহান সাদিক

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news