ছোট গল্প "স্যানিটারি ন্যাপকিন"

নয়ন কুমার বর্মন

২২ জুলাই, ২০২২, ১ year আগে

ছোট গল্প "স্যানিটারি ন্যাপকিন"

কয়েকদিন আগে আমি একটা নাটকের শুটিংয়ে প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলাম, প্রোডাকশন ম্যানেজার সম্পর্কে একটু বলি, পুরো শুটিং সেটের কোথায় কি লাগবে এবং খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে অনান্য সকল যাবতীয় জিনিসের খেয়াল রাখার কাজ হচ্ছে একজন প্রোডাকশন ম্যানেজারের, মোট কথা হলো একটি শুটিং সেটের যত টাকা খরচ হয় সেটা হিসাব রাখাই হলো মুখ্য কাজ।

তো তারই ধারাবাহিকতায়, নাটকের একটি সিনে ন্যাপকিন প্যাড(জয়া) এবং প্রেগনেন্সি টেস্টের জন্য একটি (মাম চেক) প্রয়োজন, শুটিং সেটে আমার সহকারী যে ছিলো সেতো সেটের কাজে ব্যস্ত, কোন উপায় না পেয়ে লাজ লজ্জা ত্যাগ করে আমাকেই কিনতে যেতে হলো।

তো আমি যথারিতি শপে গিয়ে হাজির, সেটি একটি সুপার শপ ছিলো যেটি দুটো পার্টে বিভক্ত এক সাইটে সকল প্রকার দৈনন্দিন ব্যবহূত জিনিসপত্র পাওয়া যায়, আর অপর সাইটে ডিসপেনসারি, এককথায় বলা চলে অনেক বড় একটি শপ সেটি এবং কাস্টমার ও ছিলো অনেক (বেশিরভাগ মধ্যবয়স্ক মহিলা কাস্টমার)।

তা যাইহোক আমি গিয়ে ডিসপেনসারি পার্টে গিয়ে উপস্থিত আমি বুঝতে পারছি যে আমার মুখে লজ্জার ছাপ ফুটে উঠেছে, তবুও লাজ লজ্জা ত্যাগ করে আমি সেলারকে বললাম ভাইয়া ন্যাপকিন দিয়েন তো? তিনি একটু চমকপ্রদ হয়ে তাকালেন আমার দিকে এবং উত্তরে বললেন ন্যাপকিন টিস্যু নিবেন নাকি ভাই।

আমি চারিদিকে একটু চোখ বুলিয়ে নিলাম তারপর দেখলাম আমার পাশে দাঁড়ানো দুই আপু আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মনে মনে নিশ্চয় বলছে (ছেলেটা বলে কি? লাজ লজ্জার মাথা খাইছে নাকি), আমি বুঝতে পারছি বাট করার কিছু নেই।

তখন আমি আবারো লাজুক কন্ঠে বলে উঠলাম সেলারকে না ভাইয়া প্যাড দেন( জয়া)? এবার সে বুঝতে পেরেছে (সে মনে মনে এমন কথা বলছেন যে, তুমি কি করবা ভাইসাব এসব জিনিসের,এসব তো খেলার জিনিস না কিন্তু সে একথা বলতে পারছে না)।

এবার সবাই একটু চকমে গিয়ে, আমার পাশে দাড়ানো এক আঙ্কেল তো একপ্রকার অট্টহাসি দিয়ে উঠলেন, আর যেসব মহিলারা ছিলেন তারা আমার উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিলেন। পরে দোকানদার দিলেন জিনিসটা এবং বলে আর কিছু লাগবে?

এবার আমি আরো বেশি পেরার মতো পড়ে গেলাম, মনে মনে ভাবতেছি কোন মতে প্যাডের কথা বলেছি এখন প্রেগনেন্সি টেস্টের এটার কথা বলি কি করে, দোকানদার যদি ভুল ভাল কিছু ভাবে? আমি সাহস নিয়ে বলেই ফেললাম প্রেগনেন্সি টেস্টের জন্য (মাম চেক) দেনতো একটা? এটা শোনার পর শপে উপস্থিত সবাই আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমি বহুত বড় একজন অপরাধী।

সেলার বলে উঠলো কি করবেন এসব ভাই? উওরে আমি মৃদু স্বরে বললাম ভাইয়া শুটিংয়ের জন্য নিবো, আরো বললাম আপনি কি অন্য কিছু ভাবছেন নাকি? এবার সামন্য হাসি দিয়ে সেলার বলে উঠলো ভাইয়া আগে বলবেন তো। ওওও আচ্ছা এই ব্যাপার।

আমি উপলব্ধি করলাম ভাগ্গিস শুটিংয়ের জন্য কিনতে এসেছি তাছাড়া আমার যে কি হতো। একথা শোনার পর সবাই সবার কাজে মনোযোগ দিলেন। অবশেষে বিল স্লিপ পেলাম পেমেন্ট করলাম এবং শপ থেকে বেরিয়ে আসলাম, হ্যা আর একটা কথা প্রোডাক্টগুলো কিন্তু হাওয়া খাওয়াইতে খাওয়াইতে নিয়ে আসি নি, শপের সেই ছেলেটা বুদ্ধি করে ব্যাগ দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছে।

তারপর আমি ভাবলাম আমি মুড়িয়ে নিয়ে যাবো না আমি হাতে করে নিয়ে যাবো দেখি সাধারন জনগনের রিয়্যাকশন কেমন হয় এবং আমি সফল দুইশো মিটারের রাস্তায় এমন কোন ব্যক্তি খোজে পাইনি যে আমার দিকে তাকিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে হাসেনি।

হাউজে পৌছে সকলের সাথে শেয়ার করলাম গল্পটা তারা সবাইতো হেসে উড়ে দিচ্ছে, তারাতো আর জানেনা যে, আমি কত লজ্জা নিয়ে কিনতে গেছিলাম তাও আবার প্রথমবার। এটার পর আমার বুদ্ধি খুলে গেছে, সেটা হলো পরবর্তীতে এসব কিনতে গেলে জোরে জোরে চিল্লাই না বলে সেলারের কানে কানে বলবো, তাহলে অন্য কেউ শুনবে ও না, আর আমাকে লজ্জাজনক অবস্থার মধ্যেও পড়তে হবে না।

এটি একটি বাস্তব ঘটনা যা আমার সাথে ঘটেছে, এরকম একটি ঘটনা এর আগেও ঘটেছিলো যখন আমি দ্বাদশে শ্রেনীতে কলেজে পড়াশোনা করি তখন এই প্যাড কি, কেনো ব্যবহার করে এসব বিষয়ে অবগত ছিলাম না, যার কারনে আমার এক বান্ধবীকে ব্যাপক শরমের মধ্যে ফলাইছিলাম।

একটু বিস্তারিত বলি, সেদিন সকাল ১০ টা, আমি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম সকলে মিলে আমরা এক স্যারের কাছে গনিত টিউশন পড়তাম।অনান্য দিনের ন্যায় সেদিন পড়তে গেছি, এবং পড়া শেষে হোস্টেলে ফিরছি।

কলেজের সামনে একটা শপ আছে, সেটার সামনে এসে আমি দাড়িয়ে আছি, তখন দেখি আমার দুই বান্ধবী ওই দোকান থেকে কিছু একটা কিনলো এবং সেটা গোপনে ব্যাগের মধ্যে ঢুকাইলো, আমি শুধু নামটা দেখছি লেখা আছে জয়া, আমি তাদের কাছে গেলাম এবং বলছি দোস্ত কি কিনলি এটা?

ওরা কিছু না বলেই আমার দিকে একটু রাঙ্গানিত ভাবে তাকিয়ে চলে গেলো, (আমি বুঝতে পারছি) তাদের মুখ ঢাকা ছিলো তাই চিনতে পারি নি তারা আমার কোন বান্ধবীরা ছিলো নাকি আদৌ আমার বান্ধবী ছিলোনা।

যাহোক দোকানদার আমার নামেই ও ভাইয়ের নাম নয়ন ছিলো তিনি তখন আমাকে সব বুঝিয়ে দিলো এই জিনিস এটা এবং বললো বিয়ে কর তাহলে আর ভালো ভাবে বুঝতে পারবি। সেই সেদিন চিনছি জয়া কি, তার প্রায় তিনবছর পর প্রথমবার কিনতে গেছি সেই জিনিসটা কেমনডা লাগে।

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news