বোবার কোনও শত্রু নেই

সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি

১৪ এপ্রিল, ২০২২, ২ years আগে

বোবার কোনও শত্রু নেই
ফাইল ছবি | পত্রিকা একাত্তর

কথাটা আমরা শুনে আসছি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই। এর কারণ হয়তো বোবার কোনো সমাজ নেই। স্বাভাবিক মানুষের সমাজে শত্রুতাও একটা সামাজিক সম্বন্ধ। কিন্তু ভাষা ছাড়া তো সামাজিক সম্বন্ধ গড়ে উঠে না। তাই বোধহয় বোবার শত্রুও নেই। বোবাদের নিজের সমাজে শত্রু থাকতে পারে। সে জগৎ ইঙ্গিত ইশারার জগৎ। সেটাই তাদের ভাব মাধ্যম।

বোবাকেও স্বাভাবিক সমাজে ফিরিয়ে আনতে ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়। যাতে সাধারণের মনোভাব সে বুঝতে পারে। ভাষা ছাড়া বন্ধুত্ব তো দূরের কথা, শত্রুতাও করা যায় না। শত্রুর সঙ্গে শত্রুতা করতে গেলে তার সঙ্গে ভাবের ক্ষেত্রে একটা মিলের প্রয়োজন। শত্রুর কথা ও আচরণের মধ্যে এমন একটা সাধারণ ভাষা আছে যার ভাবার্থ উভয় পক্ষই সমানভাবে উপলব্ধি করতে পারে। উপলব্ধির এই সমানভূমিতে দাঁড়াতে না পারলে শত্রুকেও শত্রু বলে চেনা যায় না। এই সমানভূমি হল মূলত ভাষার ভূমি। মানুষের সম্পর্ক অনুকূলই হোক আর প্রতিকূলই হোক, সবই সামাজিক সম্পর্ক। এইরূপ সকল সামাজিক সম্পর্কের সামগ্রিক বিন্যাসকেই বলা যেতে পারে মানবসমাজ। ভাষা ছাড়া এ সমাজ গড়ে উঠত না, বাঁচতে পারত না, চলতে পারত না। কিন্তু ভাষা কী করে সমাজ গড়ে, কী করে মানুষকে সামাজিক করে তোলে, এ নিয়ে পণ্ডিত মহলে নানান মতবিরোধ ও মতবাদ রয়েছে। এত শত মতবাদ মতবিরোধ বাদ দিয়ে চলুন আমাদের দেশের প্রাচীন আলঙ্কারিক দণ্ডী কী বললেন জেনে নিই.... ভাষা না থাকলে লোকযাত্রা অসম্ভব হতো, জগৎ সংসার অন্ধকারের অন্ধতায় ডুবে থাকত। ভাষা এক অত্যাশ্চর্য ঐন্দ্রজালিক আদর্শ। সাধারণ আদর্শ শুধু সন্মখে উপস্থিত বস্তুকেই প্রতিবিম্বিত করতে পারে, কিন্তু এই ভাষা নামক বাঙ্ময় আদর্শ যা কিছু অনুপস্থিত তাকেও প্রতিবিম্বিত করে।

অনুপস্থিতকে উপস্থিত করতে পারা, অতীত ও ভবিষ্যতকেও বর্তমানের বুকে দাঁড় করাতে পারার এই বিষ্ময়কর ক্ষমতার জন্যই ভাষা অতীত থেকে ভবিষ্যত পর্যন্ত প্রসারিত সমগ্র সমাজকে একটি সাধারণভূমিতে ধারণ করতে পারে। পৃথক পৃথক মানুষের মধ্যেও সমচেতনার জাগরণ ঘটায় মানুষের ভাষাবোধ। সমাজ মানেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে অভিজ্ঞতার, চেতনার সঙ্গে সঙ্গে চেতনার সমকেন্দ্রীক মিলন। যার মাধ্যম হল ভাষা। মানুষের চেতনার এই সাধারণীকরণকেই বলা যেতে পারে মানুষের সমাজীকরণ। মানুষ যেদিন থেকে কথা বলতে শিখেছে, সেদিন থেকেই মানবিক চেতনার ঐক্যের ভিত্তি রচিত হয়েছে। সমাজের ভিতরে ভালোবাসা, হিংসা, সংঘাত, শ্রেণি দ্বন্দ্ব সবকিছু নিয়েও এই ঐক্য আরও পরিব্যপ্ত হয়েছে। ভাষার সমৃদ্ধি ও গভীরতা এই ঐক্যের পরিব্যপ্তির দোসর রূপে এগিয়ে চলেছে। সভ্যতার অগ্রগতিতে ভাষার এই সাধারণীকৃতির অসাধারণ গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সাহিত্যে আমরা যে সাধারণীকৃতির আলোচনা করে থাকি তা এই সাধারণ মানুষের সাধারণ ভাষার মৌলিক সাধারণীকৃতিরই এক উন্নততর গভীরতর রূপ। ভিত্তি ছাড়া ইমারত হয় না। বহু আধুনিক কাব্য সাহিত্যও যে রসোত্তীর্ণ হয় না, তার কারণ মানবিক ভাষা ভিত্তিই সেখানে স্খলিত ও বিপর্যস্ত। ব্যাবিলনের ইতিহাসে শূন্যোদ্যান ছিল হয়তো, কিন্তু কাব্য-সাহিত্যে কোনো দিনও ছিল না, আজও নেই, আগামীতেও থাকবে না।

পত্রিকা একাত্তর/মোঃ আলফাত হোসেন

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news