সানি লিওনের বাংলাদেশে আসা নিয়ে নেতিবাচকতার ছড়াছড়ি কেনো?

পত্রিকা একাত্তর

পত্রিকা একাত্তর

১৮ মার্চ, ২০২২, ২ years আগে

সানি লিওনের বাংলাদেশে আসা নিয়ে নেতিবাচকতার ছড়াছড়ি কেনো?
সানি লিওন | ছবি : সংগৃহীত

সাবেক পর্নো তারকা সানি লিওনের বাংলাদেশে আসাকে ভালো চোখে নিচ্ছে না অধিকাংশ জনগণ। শুধুমাত্র অতীতে যা করেছেন তার ই প্রেক্ষিতে তাকে ক্রমাগত বিচার করে যাচ্ছেন জনগণ। সানি লিওনের প্রকৃত নাম করণজিৎ কৌর।

১৯৮১ সালের ১৩ মে মধ্যবিত্ত শিখ পরিবারে জন্মেছিলেন করণজিৎ কৌর। তাঁর বাবা জন্মেছিলেন ভারতের তিব্বতে, মা হিমাচল প্রদেশে আর তিনি কানাডায়। তিনি নার্সিং পড়তে পড়তে সিদ্ধান্ত নেন, অন্য কিছু করবেন। সেই অন্য কিছু যে এতটাই ভিন্ন, তা কে ভেবেছিল! ২০০৩ সালে তাঁকে পেন্টহাউস পেট অব দ্য ইয়ার বানানো হয়। তিনি ভিভিড এন্টারটেইনমেন্টের হয়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন। ২০১০ সালে ‘ম্যাক্সিম’ ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা পর্নো স্টারের তালিকায় স্থান দেয় সানি লিওনকে।

এর পরের বছর, অর্থাৎ ২০১১ সালে তিনি বিগ বসের পঞ্চম আসরে অংশ নেন। ২০১২ সালে তিনি পূজা ভাট পরিচালিত ‘জিসম টু’ দিয়ে অভিনয়শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ‘রাগিনী এমএমএস টু’, ‘মাস্তিজাদে’, ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’, ‘তেরা ইন্তেজার’ প্রভৃতি ছবি দিয়ে বলিউডের অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিজেকে পরিচিত করান। তবে তিনি সব থেকে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ‘রইস’ ছবিতে ‘লাইলা মে লাইলা’ গানে বলিউডের বাদশাহ শাহরুখ খানের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে। তা ছাড়া, ‘বেবি ডল’, ‘পিংক লিপস’ প্রভৃতি গানের দৃশ্যও তাঁকে বলিউডে প্রতিষ্ঠা পেতে বেশ সহায়তা করেছে।

বিবিসি কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, "আমার চিন্তা-ভাবনা আর জীবন নিয়ে আমি নিজের কাছে একদম পরিষ্কার। কিন্তু মানুষ আমাকে সবসময়েই আমার ছেড়ে আসা জীবন, ছেড়ে আসা পেশার সঙ্গে এক করে দেখতে চায়। এটা তাঁদের ভুল নয়। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি নিজেও বদলে গেছি। আশা করব এই বদলে যাওয়া মানুষটাকে সবাই বুঝতে পারবেন"

সানি এখন তিন সন্তানের মা। একটি মেয়েকে তিনি দত্তক নিয়েছেন, আর সারোগেসির মাধ্যমে তাঁর দুই ছেলে হয়েছে। এই মা হওয়াও তার জীবনকে অনেকাংশে পরিবর্তিত করে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের মতোই আনন্দ, উল্লাস আর ভালোবাসায় বেঁচে থাকতে চান তিনি। বাংলাদেশে বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য তাকে বারবার ই পুরোনো দিনে কি করেছেন তা নিয়েই মন্তব্য করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরনের যৌনকর্মী দেখা যায়: হোটেল ভিত্তিক, পার্ক ও উদ্যানে ভাসমান এবং যৌনপল্লিভিত্তিক। বিশ ও একুশ শতকে বেশ কিছু যৌনপল্লি উচ্ছেদ করা হলেও ২০২০ সালে বাংলাদেশে ১৪টি নিবন্ধিত যৌনপল্লি ছিলো। পতিতালয়ে কাজ করা কোনো কর্মী সেই জীবন থেকে বের হয়ে‌ এসে নতুনভাবে বাঁচতে চাইলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা বেশ জটিল, সেই পুরোনো কাজকর্ম নিয়ে তাকে বিচার করা হয়, যেকোনো ক্ষেত্রেই করা হয় হয়রানি।

তাই সেই নারী কিংবা শিশু সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারেনা। বাংলাদেশের আমজনতা যেখানে অন্যদেশের এক সাবেক কর্মীকে তার পুরোনো কর্মকান্ড নিয়েই ক্রমাগত ট্রল এবং অকথ্যভাষায় মন্তব্য করছে বাস্তব জীবন কিংবা সোশ্যাল‌ মিডিয়ায়, সেখানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যৌনকর্মী যারা নতুনভাবে বাঁচতে চায়, তাদের ভবিষ্যৎ কি?

পত্রিকা একাত্তর / সানজিদা নওরিন ঝিনুক

ভিডিও দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন

youtube
Patrika71.com
news