‘একটি বৃক্ষ, একটি প্রাণ’_ কিংবা হয়তো তারও বেশি। এমন কথা সবাই শুনে আসছি। বাস্তব জীবনে মানুষ তার স্বার্থের জন্য গাছ কাটা বা অরন্য ধ্বংসে একটু ও পিছ পা হচ্ছেন না। কিন্তু পুরান ঢাকাস্থ ওয়ারী এলাকায় দেখা মিলল এক অদ্ভুত বাড়ি। যেখানে বৃক্ষ রক্ষার্থে বাড়ির নকশায় করেছেন পরিবর্তন। পরিবেশ রক্ষার্থে বৃক্ষ ধ্বংস না করে এ এক ভিন্ন নজির স্থাপন করেছেন বাড়ির মালিক।
পরিবেশ রক্ষার্থে বৃক্ষের ভূমিকা, উপকারিতা ও আমাদের করনীয়:
সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে মানুষের সাথে গাছের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।গাছ তার সবকিছু উজাড় করে দেয় আমাদের উপকারে। মানুষের দ্বারা করা পরিবেশ দূষণ প্রতিকারেও গাছ সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে। এমনই এক অকৃত্রিম বন্ধুর প্রতি মানুষের বিবেকহীন আচরণ।
মানুষের লোভের শিকার হচ্ছে তার সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু গাছ। অরণ্য উচ্ছেদের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে।মানুষ ভুলে যেতে বসেছে গাছের অবদানের কথা।
গাছ নিয়ে এত ক্ষুদ্র পরিসরে বর্ণনা করা সহজ ব্যাপার নয়। আমাদের প্রত্যেক নিশ্বাসে রয়েছে গাছের অবদান। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনটুকুও আমরা সংগ্রহ করে থাকি আমাদের পরম বন্ধু গাছ থেকে। উদ্ভিদহীন পৃথিবী অক্সিজেনশূন্য, আর অক্সিজেনশূন্য পৃথিবীর রূপ নিস্পন্দ, প্রাণহীন।
গাছ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নানা রকম খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে থাকে। নানা রকম ফলমূল যেমন আম,জাম, আপেল,কলা, লেবু, পেয়ারা,ইত্যাদি আমরা গাছ থেকেই লাভ করি। প্রতিদিনের রান্নার মশলা থেকে শুরু করে শাকসবজি সবকিছুতেই গাছের অবদান অপরসীম। চা, কফি ইত্যাদি পানীয় থেকে খেজুর রস ,ডাবের জল সবকিছুই গাছের অবদান।
গাছ আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে। গাছ থেকে প্রাপ্ত কাঠ হলো আমাদের ভীষণ প্রয়োজনীয় বনজ সম্পদ।গাছ থেকে প্রাপ্ত কাঠ দরজা জানালা আসবাবপত্র থেকে শুরু করে দেশলাই কাঠি তৈরী করতে কাজে লাগে। শাল গাছ থেকে ধুনো,পাট থেকে দড়ি সব কিছুর সাথেই জড়িয়ে রয়েছে আমাদের পরমবন্ধু গাছ।
যে বিশাল ক্ষতি আমরা করেছি তা পূরণের দায়ও আমাদের। তাই আমাদের সকলের গাছ লাগানো এবং গাছের যত্ন নেওয়া উচিত। অপ্রয়োজনীয় ভাবে মাত্রাতিরিক্ত গাছ কেটে ফেলা থেকে যেমন বিরত থাকতে হবে, তেমনই বৃক্ষরোপন ও অরন্য সংরক্ষণে আমাদের সকলকে দায়িত্বশীল হতে হবে। আর এভাবেই আজীবন গাছের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখার দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকার বা কোনো ব্যক্তি বিশেষের নয়, তা আমাদের সকলের।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন পরিবেশ রক্ষার প্রাথমিক শর্ত হল অরণ্যের বিস্তার।নগরজীবনের দূষিত পরিবেশ মানুষকে আজ ভীষণভাবে মনে করিয়ে দেয় আরন্যক সভ্যতার উদার প্রশান্ত জীবনের কথা। কিন্তু নগরের এই যান্ত্রিক জীবন বর্জন করে অরণ্যে ফিরে যাওয়া আজ মানুষের পক্ষে আর সম্ভব নয়।
কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই অরণ্যের পূণ্যচ্ছায়া আবার ফিরে পাওয়া সম্ভব। বাড়ির আঙিনায়, আশপাশের রাস্তার ধারে, পার্কে, শহরের উপকণ্ঠে আমরা যদি বৃক্ষরোপণ করি, তাহলে আমাদের পরম বন্ধু গাছ আমাদের দেবে প্রানদায়ী বায়ু, শোষণ করে নেবে পরিবেশের বিষাক্ত দূষিত বীজাণুকে; বদলে দান করবে পরমা শান্তি তথা সার্বিক সমৃদ্ধি।
শৈশব থেকে একটি শিশু যেমন ক্রমে বড় হয়ে উপার্জনক্ষম হয়, তেমনই একটি গাছ চারা থেকে বৃক্ষ হয়ে প্রকৃতির কাছে ঋণ রূপে প্রাণিজগতের অস্তিত্ব রক্ষার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করে।
পত্রিকা একাত্তর/ অশ্রু মল্লিক